প্রশিক্ষিত যুবশক্তিই পারে প্রাণবৈচিত্র্যসমৃদ্ধ দেশ গড়তে
মানিকগঞ্জ থেকে কমল চন্দ্র দত্ত
‘প্রাণবৈচিত্র্য সমৃদ্ধ করি, পবিবেশ সুরক্ষা ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করি।’ এ বিষয়কে সামনে রেখে সম্প্রতি মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার দয়ারামপুর গ্রামের যুব শিক্ষার্থীদের নিয়ে বৈচিত্র্য ও আন্তঃনির্ভরশীলতা বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বারসিক কর্মকর্তা স্যামায়েল হাসদা শুভেচ্ছা বিনিময় ও পরিচয় প্রদানের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ কর্মশালার সূচনা করেন এবং বারসিক কর্মসূচি কর্মকর্তা কমল চন্দ্র দত্ত প্রশিক্ষণ কর্মশালার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে আলোচনা করেন।
প্রশিক্ষক কমল চন্দ্র দত্ত বৈচিত্র্য ও আন্তঃনির্ভরশীলতা সম্পর্কে অংশগ্রহণকারীদের কতটুকু প্রাথমিক ধারণা আছে সে বিষয়ে সকলের অবগত হবার জন্য ভিভ কার্ডের মাধ্যমে লিখিত আকারে অংশগ্রহণকারীরা সকলেই উপস্থাপন করেন। আলোচনায় বৈচিত্র্য ও আন্তঃনির্ভরশীলতা কী? কেন এত জরুরি এবং এদের গরুত্ব কতটুকু সে সকল বিষয়ে বিভিন্ন উদাহরণের মাধ্যমে ব্যাখ্যা সহকারে বিস্তারিত তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘বৈচিত্র্য যত সমৃদ্ধি হবে, আমরা ততটাই সুরক্ষিত থাকবো। বৈচিত্র্য হারিয়ে যেতে থাকলে আমাদের পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাবে এর ফলে বায়ু দূষণ, পানি দূষণের ফলে আমরা নানারোগে আক্রান্ত হবো।’
অন্যদিকে আন্তঃনির্ভরশীলতা বিষয়ে তিনি বলেন, ‘পৃথিবীতে বেঁচে থাকার জন্য আমরা প্রত্যেকেই কোনো না কোনোভাবে সকল শ্রেণি পেশার মানুষের উপর নির্ভরশীল। এছাড়া প্রাণপ্রকৃতির যত ধরণের উদ্ভিদ, প্রাণি, কীটপতঙ্গ, লতাপাতা, ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস এবং অণুজীব রয়েছে তাদের কিছু কিছু ক্ষতিকারক দিক থাকা সত্ত্বেও তাদের ছাড়া আমরা চলতে পারবো না।’ তিনি আরও বলেন, ‘উদ্ভিদ ছাড়া তো আমাদের এক মুহূর্তও বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। আবার একটি বৃহৎ বটগাছের বংশ টিকিয়ে রাখার জন্য ক্ষুদ্র একটি পাখির উপর নির্ভরশীল হতে হয়। কাজেই আমাদের আন্তঃনির্ভরশীলতার গুরুত্ব অনুধাবন করতে হবে। আন্তঃনির্ভরশীলতা বুঝতে পারলে আমাদের দায়বোধ ও দায়িত্বশীলতা তৈরি হবে, আমরা কতভাবে কত কিছুর উপর নির্ভরশীল তা বোঝা আমাদের পক্ষে সম্ভব হবে। এর ফলে আমাদের অহংবোধ ও অহমিকাভাব কমে যাবে।’
আলোচনা শেষে প্রশিক্ষণ কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা বৈচিত্র্য কেন জরুরি, বৈচিত্র্য সুরক্ষায় আমাদের করণীয় কী এবং আন্তঃনির্ভরশীলতা কেন এত গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়গুলো সম্পর্কে গ্রুপ ওয়ার্কের মাধ্যমে তাদের মতামত তুলে ধরে এবং দলগতভাবে তা উপস্থাপন করে।
সাথী মজুমদার বলেন, “বৈচিত্র্য ও আন্তঃনির্ভরশীলতা বিষয়ে আমরা বইয়ে সাধারণভাবে পড়েছি, কিন্তু বিষয়গুলো এত গুরুত্বপূর্ণ আগে কখনও ভাবিনি। আজ কর্মশালায় অংশগ্রহণ করে বিষয়গুলো সম্পর্কে অনেক ধারণা তৈরি হলো। আমাদের জীবনযাত্রার প্রয়োজনেই আমরা প্রাণবৈচিত্র্য বাড়ানো ও সংরক্ষণের মাধ্যমে পবিবেশ সুরক্ষা ও সামাজিক উন্নয়নে দলগতভাবে কাজ চালিয়ে যাবো।”
পূণিমা সরকার বলেন, “আজ আমি প্রথম প্রশিক্ষণে অংশ নিয়েছি। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এত কিছু জানা ও বুঝা যায় তা ভাবতে পারিনি। অনেক ভালো লেগেছে। আগামীতে প্রশিক্ষণ গ্রহণের সুযোগ হলে অংশগ্রহণ করবো এবং পরিবেশ ও সামাজিক উন্নয়নে সকলের সাথে অংশগ্রহণ করবো।’