![প্রাণবৈচিত্র্যসমৃদ্ধ খুকুমনির কৃষিবাড়ি](https://barciknews.com/wp-content/uploads/2024/01/415980877_1393137344634239_5196287093627455690_n-604x345.jpg)
প্রাণবৈচিত্র্যসমৃদ্ধ খুকুমনির কৃষিবাড়ি
শ্যামনগর, সাতক্ষীরা থেকে বিশ্বজিৎ মন্ডল
উপকূলীয় অঞ্চল লবণাক্ততা। লবণাক্ততার মধ্যে নিজেদের জ্ঞান-অভিজ্ঞতা, চর্চা ও উদ্যোগ পূঁজি করে কৃষিকে আঁকড়ে রেখে জীবন জীবিকা নির্বাহ করেন উপকূলীয় অনেক পরিবার সফলতা অর্জন করেছেন। তেমনই একজন নারী শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের পূর্ব ধানখালী গ্রামের খুকুমনি মন্ডল। সারাবছর বসতভিটায় নানান ধরনের বৈচিত্র্যময় ফসল চাষাবাদ করে চলেছেন। নিজের বাড়িটি একটি আদর্শ কৃষি খামারের রূপ দিয়েছেন।
![](https://barciknews.com/wp-content/uploads/2024/01/415786689_355969867221609_1149032446653534078_n.jpg)
নিজের জমি-জমা বলতে ৪০ শতক বসতভিটা ও ২ বিঘা ধানের জমি। সংসারে ২ মেয়ে স্বামী স্ত্রী ও শাশুড়ি মিলে ৫ জনের সংসার। স্বামী গণেশ মন্ডল একজন বীজ ব্যবসায়ী। এলাকার স্থানীয় বাজার থেকে এবং নিজের বাড়িতে সংরক্ষিত বীজ নিজে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করেন। একই সাথে বাড়িতে বিভিন্ন সবজি ফসলের চারা তৈরি করেও বিক্রি করেন। কৃষিকে তাদের পরিবারের প্রধান পেশা হিসাবে নিয়েছেন। স্বামী গণেশ মন্ডল ও খুকুমনি ছোটবেলা থেকে কৃষির সাথে পরিচিত। ‘বিয়ের পরে স্বামীর সংসারের এসে দেখি বড় ভিটা কিন্তু স্বামীর একার পক্ষে সব জায়গায় ফসল লাগানো সম্ভব হতো না। তারপর স্বামী স্ত্রী মিলে বসতভিটার সব স্থানে কম-বেশি করে নানা ধরনের ফসল লাগানো শুরু করি। আর সেখান থেকে এখন পর্যন্ত আমাদের ভিটার বারোমাস সবজি ফসল, মাছ চাষ, কখনো সবজি চাষে মাচা পদ্ধতি, বস্তা পদ্ধতি, পুকুর পাড়ে সবজি চাষ করে নিজেদের সংসারের চাহিদা পূরণ, বিভিন্ন আত্মীয়স্বজন ও পাড়া প্রতিবেশিদের মাঝে বিতরণ এবং স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে সংসারের চাকাকে সচল রাখার চেষ্টা করছি।’ উপরোক্ত কথাগুলো বলেছেন তিনি।
খুকুমনি রানী বলেন, ‘প্রতিটি পরিবারের যদি সঠিক পরিকল্পনা করে কিছু করা যায় তাহালে সফলতা আসবে। আমরা স্বামী ও স্ত্রী মিলে পরিকল্পনা করে সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মৌসুমভিত্তিক বিভিন্ন ফসল উৎপাদন অব্যাহত রেখেছি। আর নিজেদের গরু থাকায় জৈব পদ্ধতিতে ফসল চাষের চেষ্টা করি। বছরে বিভিন্ন মৌসুমে মিষ্টিকুড়া, লাউ, কলা, খিরাই, বেগুন, ওলকপি, টমেটো, বীটকপি, পুঁইশাক, পাতাকপি, ফুলকপি, শিম, আলু, চুবড়ি আলু, ওল, কচু, মেটে আলু, চালকুমড়া, তরুল, ঝিঙা, ঢেড়স, বরবটি, মেনকা, ওল, কচুরমুখি, আদা, হলুদ, ধনিয়া পেঁয়াজ, রসুন, ঝাল, ধনিয়া, মৌরি চাষাবাদ করি। এছাড়াও বাইরের ভিটায় চারপাশে মাটি কেটে উচু করে নিচেয় ধান ও মাছ এবং উপরে বিভিন্ন সবজি চাষ করি।’
এছাড়াও তাদের বাড়ির পুকুরগুলোতে মিষ্টি পানি থাকায় বারোমাস সবজি চাষ করা সম্ভব হয়ে ওঠে। প্রতিটি ফসলের বীজ সংরক্ষণের চেষ্টা করি। তাদের বাড়িতে সবজির পাশাপাশি ফলজ গাছ হিসাবে ডালিম, পেয়ারা, আম, কাঁঠাল, নারকেল, সবেদা, জামরুল, কদবেল, কুল, আমড়া, পেঁপে বনজ গাছ হিসাবে শিশু, বাবলা সুপারি, মেহগনি ইত্যাদি। এছাড়াও অচাষকৃত বিভিন্ন উদ্ভিদ আমরুলশাক, বাতোশাক, কাঁতাশাক, কলমিশাক, গেটকুল, আদাবরুন, পেপুল ইত্যাদি রয়েছে। অন্যদিকে পুকুরে আছে দেশি বিভিন্ন জাতের মাছ সাথে গলদা চিংড়ি চাষ। গবাদি পশুর মধ্যে আছে গরু ৫টি, হাঁস-১৩টি, মুরগি-১৪টি, কবুতর ১২টি, ছাগল ৬টি যার মাধ্যমে সংসারের স্বচ্ছলতা আনতে ভূমিকা রাখছে।
![](https://barciknews.com/wp-content/uploads/2024/01/415980877_1393137344634239_5196287093627455690_n.jpg)
খুকুমনি রানী আরো বলেন, ‘আমার এ বাড়ি দেখতে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা আসেন। অনেক বেসরকারী প্রতিষ্ঠান আমাকে নানানভাবে সহায়তা করছে। তারা আমার এ কাজটি দেখে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। এর মধ্যে বেসরকারী প্রতিষ্ঠান বারিসক’র সহায়তায় আমার বাড়িটি একটি কৃষি বাড়িতে রূপান্তরিত করেছি। আমার বাড়িতে ৭টি বেগুন জাত নিয়ে গবেষণা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। জৈব পদ্ধতিতে সবজি চাষের জন্য বারসিক’র নিকট ভার্মি কম্পোস্ট এর উপকরণ এবং সবজি ক্ষেত সংরক্ষণের জন্য নেট সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছি।’
উপকূলীয় অঞ্চল লবণাক্ততাসহ নানান ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখিন হয় প্রতিনিয়ত। তার মধ্যে দিয়ে প্রাণবৈচিত্র্য টিকিয়ে রাখার নানান প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন উপকূলীয় নারীরা। তার দৃষ্টান্ত হতে খুকুমনির মতো নারীরা তাদের কাজে আগ্রহ ও উদ্দীপনাকে শক্তিশালীকরণে বিভিন্ন সহায়তা করা জরুরি। তাহলেই প্রতিটি বাড়িতে নানান ধরনের প্রাণবৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ হবে।