জবেদা বেগমের কৃষি অভিজ্ঞতা
হরিরামপুর, মানিকগঞ্জ থেকে মুকতার হোসেন
মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার পদ্মা নদীর ওপারে চরাঞ্চলের নটাখোলা গ্রামের বাসিন্দা ৬০ বছরের জবেদা বেগম। তাঁর স্বামী একজন কৃষক। পরিবারের চার সন্তানের মধ্যে দুই মেয়ে বিবাহিত, আরেক মেয়ে ও ছেলে স্কুলে অধ্যয়নরত। নটাখোলা গ্রামের প্রায় ৩০০ পরিবারের মধ্যে একটি পরিবার হলো জবেদার।
জবেদার বাড়ি যেন একটি ছোট কৃষি খামার। বাড়ির চারপাশে শাক-সবজির চাষ, ভেতরে হাঁস-মুরগি, কবুতর, গরু ও ছাগল। প্রতিদিন প্রাণীগুলোর যত্ন এবং চাষাবাদে সময় কাটে জবেদার। পাশাপাশি স্বামীর কৃষিকাজে সহযোগিতা করেন তিনি। এমন নিরলস পরিশ্রমের মধ্যেও তাঁর মুখে সবসময় হাসি লেগে থাকে।
কৃষি ও গৃহপালনে সমৃদ্ধ বাড়ি
জবেদার বাড়িতে রয়েছে লাউ, বেগুন, মুলা, করলা, ধুন্দল, পুঁইশাক, মিষ্টিকুমড়া, শসা সহ বিভিন্ন মৌসুমি সবজি। এসব সবজি উৎপাদন ছাড়াও তিনি বীজ সংরক্ষণ করেন। বাড়ির আশেপাশে রয়েছে আম, কাঁঠাল, লিচু, পেয়ারা, বেল, আতা, খেজুর সহ নানা ফলজ ও ঔষধি গাছ।
জবেদা জানান, চরাঞ্চলের মানুষকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বন্যা এবং নদী ভাঙনের মতো সমস্যার মধ্যে দিয়ে জীবন যাপন করতে হয়। তবুও তিনি গ্রামের মানুষের পাশে দাঁড়ান। অর্থ দিয়ে সাহায্য না করতে পারলেও তথ্য, উপকরণ এবং পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করেন। তাঁর বাড়ি তাই গ্রামের মানুষের জন্য একটি কৃষি সমৃদ্ধি কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত।
বারসিকের সহযোগিতায় উন্নয়ন
জবেদা এবং তাঁর স্বামী বিগত দুই বছর ধরে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিকের সঙ্গে যুক্ত। তাঁদের বাড়িকে একটি কৃষি প্রতিবেশ শিখন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। বারসিকের সহায়তায় সম্প্রতি একটি উইকিং বেড নির্মাণ করা হয়েছে, যেখানে পানি সাশ্রয়ী উপায়ে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের গবেষণা চলছে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
জবেদা বলেন, “ছোটবেলা থেকে কৃষির সঙ্গে যুক্ত। হাঁস-মুরগি, কবুতর, ছাগল পালন এবং সবজি চাষে আমি যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি, তা অন্যদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চাই। গ্রামের মানুষ যেন আমার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে স্বাবলম্বী হতে পারে, এটাই আমার লক্ষ্য।”
জবেদা বেগমের এই নিরলস প্রচেষ্টা শুধু তাঁর পরিবার নয়, বরং পুরো গ্রামের জন্য একটি অনুপ্রেরণা।