হাওরের মানুষের স্বপ্ন শুধুই ভেঙে যায় !
::নেত্রকোনা থেকে অহিদুর রহমান::
বন্যা, বজ্রপাত, ঝড়, ঘূর্ণিঝড়, অকাল বন্যা, বাঁধভাঙার আতংক, পাহাড়ি ঢল আফাল, ঢেউ, খরা, ফসলের রোগবালাই এসবের সাথে সংগ্রাম ও যুদ্ধ করে হাওরের মানুষের দিন যায়, জীবন ও সংসার চলে, চলে চিকিৎসা, শিক্ষা, চলে আশা স্বপ্ন, গড়ে তোলে নতুন বসতি ও সচল রাখে জীবনের চাকা। গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতায় এবছরও হাওরের কৃষকেরা বোরো ফসল ঘরে তোলার জন্য সব আগাম ব্যবস্থা করে রেখেছিলেন । ঢোল বানানো, ধান কাটার উপকরণ তৈরি, উগার তৈরি, কুলা, কলই সবই সংগ্রহ করা হয়েছে। কদিন পরেই ধান কাটা শুরু হবে যে! ধান কাটা শেষ হবে, সব হিসাব নিকাশ শেষ হবে, হালখাতায় টাকা জমা হবে, আত্মীয়স্বজন আসবে, মেয়ে নাইওর আসবে, নতুন জামাকাপড় কিনবে, রোগের চিকিৎসা করাবে । পড়াশোনার খরচ করা হবে । এই স্বপ্নে হাওরে কৃষকেরা দিন গুণছিলেন।
হঠাৎ বজ্রপাতের মতো কৃষকের সামনে চৈত্র মাসেই নেমে এলো বন্যার পানি। ধীরে ধীরে বন্যার পানির গতি বাড়তে লাগেলো। ভাঙতে শুরু করলো একের পর এক বাঁধ। তলিয়ে যেতে লাগলো ফসলের মাঠ। কৃষকের স্বপ্ন। চোখের সামনে ডুবে গেলো নেত্রকোনার আটপাড়া, মদন, কেন্দুয়া, খালিয়াজুরি, মোহনগঞ্জের, কলমাকান্দার শতাধিক হাওরের ফসল। রাতদিন বাঁধের উপর বসে থেকেও রক্ষা করতে পারলোনা তাদের ফসল। অসহায় প্রযুক্তি, অসহায় মানুষের সকল প্রচেষ্টা। প্রকৃতির কাছে মানুষ অসহায়। যেমন হাওরের কৃষক।
সনির হাওর, বাঘরা হাওর, তলার হাওর, জালিয়ার হাওর, কুবিজানা হাওর, মহিষের হাওর, শুনুইর হাওর, েমশাখালি হাওর, দেখার হাওর, ডিঙ্গাবোতা হাওর, মাটিয়ান হাওর, সজনার হাওর, হাইল হাওর, হাকালুকি হাওর, কাউয়াদিঘি হাওর, ঘুইঙ্গাজুরি হাওর, খরচার হাওর, চেপটির হাওরসহ শতাধিক হাওরের মানুষের এই যন্ত্রণাকে ঘোচাবে কে? হাওরের নারী ও পুরুষ, প্রবীণ ও শিশুদের স্বপ্নের জায়গাটি তৈরি করে দেবে কে?
তবে কিছুদিন হৈচৈ হবে। পত্রিকার শিরোনাম হবে, টক শো হবে। হচ্ছেও তাই। এরপর আস্তে আস্তে স্থিমিত হবে সবকিছু! কৃষকের এই ক্ষতি, কান্না, কষ্ট ও যন্ত্রণাকে লাঘব করবেন এই কৃষকরাই! কৃষকরা বছর পর বছর তাদের নিজের জ্ঞান, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা এবং সাহস দিয়ে এসব মোকাবিলা করে আসছেন। টিকে থেকেছেন বছরের পর বছর। দেশের মানুষের খাদ্য যোগান দেওয়ার জন্য তাঁরা আবার পরিশ্রম করবেন, কষ্ট করবেন স্বাভাবিক নিয়মেই! এভাবেই তো দিনের পর দিন চলে আসছে হাওরের মানুষের জীবন।