ওল চাষে জমির জো ধরে রাখে কচুরিপানা
সাতক্ষীরা, শ্যামনগর থেকে মনিকা পাইক
‘যেমন বুনো ওল, তেমনি বাঘা তেতুল’- প্রবাদটার সাথে সাথে বাংলাদেশের বুনো ওলের জাতটা হারিয়ে যেতে বসেছে। এর চুলকানি গুণের আড়ালে যে দেশী ও খাটি স্বাদ লুকিয়ে আছে তা কেউ আবিস্কার করতে পারলো না। যাই হোক, দেশী ওলের পরিবর্তে বিদেশী ওল দখল করে নিচ্ছে বাজারের একটি বড় অংশ। জায়গা করে নিয়েছে কৃষকের মন। তারপরও গ্রাম অঞ্চলের অনেক কৃষক-কৃষাণী নিজেদের প্রয়োজনে এখনো নানান ধরনের দেশীয় বীজ বৈচিত্র্য টিকিয়ে রেখেছেন।
তেমনই একজন আগ্রহী নারী হলেন শ্যামনগর ঊপজেলার বাদঘাটা গ্রামের শতবাড়ির কৃষাণী লক্ষ্মী রানী মন্ডল। তিনি অন্যান্য বীজের সাথে স্থানীয় ওল বীজ সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও চাষাবাদ করছেন প্রায় ১০ বছর ধরে। প্রতিবছরের ন্যায় এবছরও তিনি এ ওল লাগিয়েছেন।
ওল চাষাবাদ, বীজ সংরক্ষণ, পোকামাকড়, রোগবালাই কোন সময় লাগাতে হয় এ বিষয় সম্পর্কে লক্ষ্মী রানীর কাছে জানতে চাইলে বলেন, ‘আমাদের এলাকায় অন্যন্য সবজি চাষ করা থেকে ওল চাষ করা অনেক লাভজনক। পোকামাকড়ের বালাই নাই, রোগবালাই কম এমনকি ছাগলেও এ গাছ খায় না। ফাল্গুণ চৈত্র মাস ওল লাগানোর উপযুক্ত সময়। ওলের চাষের জন্য উপযুক্ত হচ্ছে উঁচু জমি। ছায়া থাকলে ভালো হয় না। জমি থেকে সাধারণত কার্ত্তিক অগ্রহায়ণ মাসে ওল তোলা হয়। এই ওলের চারপাশে যে মূখী জন্মে সেগুলো সংগ্রহ করে রাখি। পরবর্তীতে রোপণের জন্য।’
লক্ষ্মী রানী বলেন, ‘এ ওল রোপণের সময় চাকির চর্তুদিকে গোবরের সার দিয়ে পিলি তৈরি করে ওলের চাকি বসিয়ে মাটি দিয়ে ঢেকে দিই। ঢেকে দেয়ার সময় ভালো করে গর্তের ভিতরে ভিজিয়ে দিই। পিলি ঢেকে দেওয়ার সময় গর্তের মুখ সামান্য ঊঁচু করে দিই। কেননা, অনেক সময় বৃষ্টির পানি জমে ওলের চাকি পঁচে যায়। ঊঁচু থাকলে বৃষ্টির পানি জমতে পারে না। চাকি থেকে মাটির উপরে চারা বেরিয়ে আসতে বেশ সময় লাগে এবং পানিও বেশি লাগে। তাই এ সময় কচুরিপানা দিয়ে ঢেকে রাখলে ভালো হয়। এতে করে মাটিতে পানির ‘জো’টা ধরে রাখতে পারে।’
লক্ষ্মী রানী জানান, তিনি বিগত বছরে ওল রোপণের পর খড় দিয়ে ঢেকে দিতেন, তাতে করে রোদ্রের তাপে খড় শুকিয়ে ঝুরঝুরে হয়ে যেত এবং বৃষ্টিতে ভিজে সেগুলো পঁচে যেত এবং ওল বেরুনোর ক্ষেত্রে বাধা তৈরি করতো। তাই এ বছর নতুনভাবে চিন্তা থেকে এই ভাবে ওল চাষ করেছেন। কচুরিপানার উপরে পানি দেওয়ার পর দেখেছেন বেশ কয়েকদিন মাটিতে জো থাকছে। ঘন ঘন পানি দেওয়া লাগছে না। এছাড়া ও কচুরিপানা পঁচেও জমিতে সার তৈরি হচ্ছে। এতে করে জমিতে সারের পরিমাণও কম লাগে। তাছাড়া চারা বেরোনোর পর যাতে ভালোভাবে মাটির উপরে পাতা ছাড়তে পারে সে জন্য কচুরিপানা মুখের কাছে সামান্য আলগা করে ঢেকে দিয়েছেন।
প্রতিনিয়ত আবহাওয়া পরিবর্তন হচ্ছে। এ পরিবর্তনের সাথে গ্রামীণ জনগোষ্ঠী নিজেদের জ্ঞান-অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা কাজে লাগিয়ে নানান চেষ্টা করে যাচ্ছে। তেমনিভাবে গ্রামীণ নারী লক্ষ্মী রানীর এটি একটি সফল চর্চা যা অন্যদের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।