মানবতার দেয়াল এখন তানোরে
মিজানুর রহমান, তানোর (রাজশাহী) থেকে
রাজশাহীর তানোর পৌরশহরের থানা গেটের সামনে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের সীমানা প্রাচীর। দেয়াল ঘেঁষেই একটি উদ্যোগ, যা দেখতে উৎসুক মানুষের ভিড়।
দেয়ালের গায়ে পুরনো কাপড় কেন? এমন প্রশ্ন অনেকেরই। দেয়ালের উপরে লেখা দেখে প্রশ্নের উত্তর মিলল। লেখা রয়েছে – আপনার যা প্রয়োজন তা নিয়ে যান, আপনার যা অপ্রয়োজনীয় তা রেখে যান। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে কিছুদিন ধরেই চলছে এমন উদ্যোগের আলোচনা। কিন্তু এমন উদ্যোগ তানোর উপজেলায় এটিই প্রথম।দেয়ালে সারি সারি সাজানো রয়েছে পুরনো কাপড়। পাশে খুঁটির সঙ্গে রশিতে ঝুলিয়ে রাখতেও পুরনো কাপড়ের দেখা মিলল।
অভিনব এই উদ্যোগের উদ্যোক্তা হচ্ছে ‘টিম হিউম্যানিটিস’ নামে স্থানীয় পর্যায়ে গড়ে উঠা একটি সামাজিক যুব সংগঠন। টিম হিউম্যানিটিসের সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম এই প্রতিবেদকে বলেন, ‘তানোরে আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে নিজেদের উদ্যোগেই তা করেছি। বাসায় এত রকমের কাপড় জমে, সেগুলো যদি কারোর কাজে লাগে ক্ষতি কী। আমাদের অপ্রয়োজনীয় যে কাপড়গুলো আমরা ব্যবহার করছি না, সেটা মানবতার দেয়ালে ঝুলিয়ে দিলে কেউ না কেউ নিয়ে যাবে। এই চিন্তা থেকেই করা। প্রথমে এলাকায় একটি দেয়ালে করা হলেও পরে সমস্যার কারণে আমরা সর্বশেষ কৃষি ব্যাংকের দেয়ালে তা স্থানান্তর করেছি।’
উদ্যোগটি মাসখানেক থেকে শুরু হলেও এ পর্যন্ত তেমন সাড়া না থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আরও বেশি ছড়িয়ে দিতে হবে। আর দেয়ালটা নির্ধারিত থাকবে, বাকি যে যা দিয়ে যাওয়ার দেবে। তা না হলে এটি বিস্তৃতি লাভ করবে না।’ তানোরে মানবতার দেয়ালের অন্যতম এক উদ্যোক্তা সোহাগ আলী। তিনি শুক্রবার (৩০ আগস্ট) তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘খুবই ভালো লাগছে। নিঃস্বার্থভাবে বিপদগ্রস্ত মানুষকে সাহায্য ও সেবা করার উদ্দেশ্যে আজ অনেকেই আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, বিশেষ করে অনেক ভাইবোন তাদের মূল্যবান জামাকাপড় দিয়েছেন। এছাড়া, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক বড় ভাই ব্রাদারও আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন।’
পৌর সদরের থানা গেটের সামনের দেয়ালের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় কথা হয় স্ব-শিক্ষিত ষাটোর্ধ এক ব্যক্তির সঙ্গে। পাশেই তার নিজের বাড়ি এবং এধরনের উদ্যোগ খুব কাজের উল্লেখ করেন তিনি।’ তানোর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান লুৎফর হায়দার রশিদ ময়না এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘মানবতার দেয়াল’ শীর্ষক এই কার্যক্রমের মধ্যে তানোরে তারুণ্যেও যে ঐকতান শুরু হয়েছে, সেটি নিঃসন্দেহে আশাবহ। এই কার্যক্রম শুধু সুবিধাবঞ্চিত মানুষের হাতে সাধারণ পোশাক পৌঁছে দেওয়া নয়, বরং জনগুরুত্বসম্পন্ন আরও অনেক বিষয় এর সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারে।
২০১৫ সালে ইরানের উত্তর-পূর্বের শহর মাশাদে প্রথম এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। সেখানে শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র পৌঁছে দিতে অজ্ঞাত কোনো ব্যক্তি এমন উদ্যোগ নিয়েছিলেন। সেই উদ্যোগে উদ্বুদ্ধ হয়ে ২০১৫ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশের মাগুরা জেলার শালিখা উপজেলার আড়পাড়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়। এরপর লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার চর আবাবিল এসসি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২০১৭ সালে এমন উদ্যোগ নিতে দেখা যায়।
সম্প্রতি কিশোরগঞ্জের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ‘মহানুভবতার দেয়াল’ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচিত হয়। ‘মানবতার দেয়াল’ এর উদ্যোগ ইতিমধ্যেই নেয়া হয়েছে দেশের বিভিন্ন স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানেও।