অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে তেঁতুল প্রক্রিয়াজাতকরণ
দেবদাস মজুমদার, বিশেষ প্রতিনিধি, উপকূল অঞ্চল
অম্ল মধুর তেঁতুল জীভে জর এন দেয়। মান দেহের দরকারী ঔষধি গুণে ভরা এ তেঁতুল। পরিকল্পিত আবাদ না থাকলেও উপকূলীয় অঞ্চলে প্রায় প্রতিটা গৃহস্থ বাড়িতে এখনও তেঁতুলে দেখা মেলে। আচার-চটপটি ও সালাদ থেকে শুরু করে নানা রকমের মুখরোচক খাদ্য দ্রব্যে ব্যবহৃত হয় তেঁতুল। তেঁতুল হজমে উপকারী যা খাবারে স্বাদ এনে দেয়। ফলে সারাবছর তেঁতুলের চাহিদা থাকার কারণে তেঁতুল হয়ে উঠেছে অর্থকরী ফল। তেঁতুলের বাণিজ্যিক ব্যবহার থাকায় এর একটা বাজাত ব্যবস্থাপনা গড়ে উঠেছে। তবে তেঁতুল সংগ্রহ থেকে শুরু করে সরবরাহ পর্যন্ত প্রক্রিয়াজাতকরণ চলে অব্যবস্থাপনা ও অস্বাস্থ্যকর অবস্থায়।
বরগুনায় দীর্ঘদিন ধরে তেঁতুল সংরক্ষণ করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হচ্ছে। তবে এসব তেঁতুল চরম অপরিচ্ছন্ন নোংরা অস্বাস্থ্যকর প্রক্রিয়ায় সংক্ষরণ করে বাজারজাত করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের আশংকা, এসব তেঁতুল খাদ্যদ্রব্যে ব্যবহৃত হলে মানবদেহের জন্য নানা রোগের সৃষ্টি করতে পারে। তেঁতুল সংরক্ষণে অসচেতনতা ও সুষ্ঠু বাজার ব্যাপস্থাপনার অভাবে খাদ্যপ্রাণ তেঁতুল হয়ে উঠতে পারে ক্ষতিকর খাদ্য উপকরণ।
বরগুণার কয়েকজন তেঁতুল ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বরগুনা থেকে প্রতিবছর প্রায় দুই হাজার মণ তেঁতুল দেশের বিভিন্ন স্থানে চালান করা হয়। জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসের মাঝামাঝি তেঁতুল সংগ্রহের মৌসুম। এসময় বরগুণার প্রত্যন্ত এলাকা পাইকাররা তেতুল কিনে নিয়ে বরগুণার সাহাপট্টি নিয়ে আসেন। পাইকারদের কাছ থেকে আড়তদাররা এসব তেঁতুল কিনে নেন। এরপর নারী ও শিশু শ্রমিক দিয়ে আঁশ ছাড়িয়ে নিয়ে পর্যাক্রমে তিন দিন ধরে আড়তের সামনের জনবহুল খোলা সড়কের পাশে রোদে শুকানো হয়। রাস্তার ধূলা বালি আঠাযুক্ত তেঁতুলে খুব সহজে আটকে যায়। পরে প্লাষ্টিকের বস্তায় ভরে লঞ্চযোগে ঢাকার শ্যামবাজারে পাঠানো হয়। শ্যামবাজার থেকে এসব তেতুল বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য ও ভেষজ ঔষধ প্রস্ততকারী প্রতিষ্ঠান কিনে নেয়।
বরগুণার সাহাপট্টি এলাকায় সরেজমিনে দেখা গেছে, ইটের খোয়া বিছানো খোলা সড়কের দু’পাশে চটের ওপর তেতুল শুকানো হচ্ছে। কয়েকজন নারী শ্রমিক তেঁতুলের আঁশ ছাড়ানোর কাজে ব্যস্ত। আর ওই তেঁতুলরে উপর দিয়ে কুকুর ও ভেড়া, বিভিন্ন পাখির নির্বিঘœ হাটা চলা। পাশেই ময়লার নর্দমার স্তুপ ও কাদাজল। শুকানো শেষ হওয়া তেঁতুল কিছু শ্রমিক পা দিয়ে মাড়িয়ে বস্তাবন্দি করছেন। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে এভাবেই খাদ্য প্রাণ তেঁতুল বস্তাবন্দী হয়ে মোকামে চালানের জন্য তৈরি হয়।
ফিরোজো বেগম নামে এ নারী শ্রমিক বলেন, “আমরা ত্রিশ টাকা মণ হিসেবে তেতুলের আঁশ বাছাইয়ের কাজ করি। ময়লা আবর্জনা নিজের চোখে দেখে বাচ্চাদের আমি কখনো তেতুলের আচার কিনে দেই না।” বরগুণার সাহাপট্টির তেতুল ব্যাবসায়ী রমিজ হাওলাদার বলেন, “আমাদের তেতুল শুকানোর জায়গা নেই। তাই বাধ্য হয়ে খোলা সড়কে তেঁতুল শুকাতে হয় আমাদেরকে।” রমিজের দাবি এসব তেতুল পরিচ্ছন্নভাবেই চালান করা হয়। সড়কে চট বিছিয়ে তেতুল শুকানো হলে ধুলো ও ময়লায় একাকার এসব তেতুল যেন পরিচ্ছন্ন এমনটাই দাবি আরতের শ্রমিক গৌরাঙ্গ হাওলাদারের।
রহিম আইপিএস’র মার্কেটিং অফিসার স্বপন সাহা বলেন, “আমাদের প্রতিষ্ঠানের সামনের রাস্তায় তেতুল শুকানো হয়। বারবার বুঝিয়ে বললেও ব্যবসায়ীরা আমাদের কথায় কর্ণপাত করছেন না। তেতুলের গন্ধে আমাদের প্রতিষ্ঠানের সবাই অতিষ্ঠ। এসব তেতুল খাবারে ব্যবহৃত হলে পেটের পীড়াসহ পাকস্থলীর নানা রোগ হতে পারে।”
পথচারী ও বরগুণা চান্দখালী ডিগ্রি কলেজের ইংরেজি বিভাগে শিক্ষক হাসানুর রহমান বলেন, “খোলা সড়কে শুকানো তেঁতুল খাদ্যদ্রব্যে ব্যবহার করা হয়। এসব তেঁতুল মিশ্রিত খাবার খেলে মানুষের নানা প্রকারের রোগ ব্যাধী হতে পারে। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের এ ব্যাপারে নজর দেয়া উচিৎ।”
জেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর ইকবাল তালুকদার বলে, “খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন, সংরক্ষণ ও সরবরাহের ক্ষেত্রে পরিচ্ছন্নতা আইন মানতে হবে। ইতিপূর্বে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে তেঁতুল জব্দ করে নষ্ট করা হয়েছে। তবে তেঁতুল ব্যবসায়ীদের অভ্যাস বদলায়নি। বিষয়টি নিয়ে আবার ব্যবসায়ীদের সাথে কথা হবে।”