লবণাক্ত পরিবেশে রাবিয়া খাতুনের কৃষি উদ্যোগ

সাতক্ষীরা থেকে মননজয় মন্ডল

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে উপকূলীয় জনজীবন চরমভাবে যখন বিপর্যস্ত। তখন এই প্রতিকুল পরিবেশের মধ্য দিয়ে স্থানীয় জনগোষ্ঠী নানাভাবে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে চলেছে নিরন্তর। সাতক্ষীরার শ্যামনগরের উপকূলীয় সংগ্রামী নারী রাবিয়া খাতুন লবণাক্ত পরিবেশে বৈচিত্র্যময় কৃষি উদ্যোগ বাস্তবায়ন করে চলেছেন।

স্বামী ও দুই মেয়েসহ চার সদস্যের ছোট্ট সংসার রাবিয়া খাতুনের (৩৭)। স্বামী বাবলু রহমান (৪৩) পেশায় দিনমজুর। তিনি দিনের অধিকাংশ সময়ে বাইরের কাজ করেন। কৃষির সামগ্রিক বিষয় দেখাশুনা করতে হয় রাবিয়া খাতুনের নিজ হাতে। রাবিয়া খাতুন ও বাবলু রহমান দম্পতির আয় বৃদ্ধিসহ কৃষি ক্ষেত্রে বেশ খানিকটা পরিবর্তন আসে বারসিক এর প্রশিক্ষণগুলো পেয়ে।


২০২১ সালে অক্টোবর মাসে নেটজ পার্টনারশিপ ফর ডিভেলপমেন্ট জাস্টিস’র সহযোগিতায় বারসিক’র বাস্তবায়নে পরিবেশ প্রকল্প শুরু হলে গাবুরা ইউনিয়নের উত্তর ডুমুরিয়া গ্রামে কলাগাছিয়া সিএসও দলে যুক্ত হয়। যুক্ত হওয়ার পর থেকে তিনি নিয়মিতভাবে সাপ্তাহিক আলোচনায় সভায় অংশগ্রহণ করে আসছে। কিছুদিন পরে বারসিক পরিবেশ প্রকল্প থেকে উৎপাদনশীল সম্পদ হিসাবে একটি সেলাই মেশিন ২টি ছাগল, ২টি কদবেল ও পেয়ারার চারা, কিছু বীজ ও দুটি মুরগি সহযোগিতা পান।
বারসিক’র নিয়মিত আলোচনা, প্রশিক্ষণ, পরামর্শ ও সহযোগিতার এর মধ্য দিয়ে তিনি নিজের প্রচেষ্টা ও শ্রম দিয়ে সেলাই মেশিনের কাজ এর পাশাপাশি পারিবারিক কৃষি কাজকে ভালোভাবে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। এ প্রসঙ্গে রাবিয়া খাতুন দম্পতি বলেন, ‘আমরা নিজেদের বসতভিটায় আগে থেকেই কৃষি কাজ করতাম। কিন্তু বারসিক থেকে প্রশিক্ষণ পেয়ে আমরা ভালোমত শাক সবজি উৎপাদন করতে পারছি। এখন আগের চেয়ে ফলন বেশি পাচ্ছি। বাড়ীর যত ময়লা আবর্জনা, তরকারীর খোসা, ছাগলের মল প্রভৃতি সঠিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জৈব সার উৎপাদন করেন তিনি নিজ হাতে। এগুলো আবার ফসল চাষাবাদের আগে ব্যবহার করেন জমিতে। ক্ষেত প্রস্তুত, প্লট তৈরি, বীজ বপন, চারা রোপণ, সেচ প্রদান, আগাছা বাছাই, ক্ষতিকর পোকা দমনসহ সামগ্রিক কৃষি কাজগুলো রাবিয়া খাতুনের সাথে সহযোগিতা করেন তার স্বামী।


বারিয়া খাতুন এ বিষয়ে জানান, “আমার ভিটায় নানা ধরনের সবজি চাষাবাদ করি, বাজার থেকে খুব একটা সবজি কেনা লাগে না।” যা হয় তাতেই পরিবারের চাহিদা পূরনের পাশাপাশি আত্মীয় ও প্রতিবেশীর মাঝে বিক্রি করে কিছু টাকা সঞ্চয় করি এবং জমানো সঞ্চয় টাকা পারিপারিক সংসারের কাজে ব্যয় করি। তার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় তিনি শীতকালীন, ডাটাশাক, পালংশাক, সীম, মিষ্টিকুমড়া, বেগুন, টমেটো, পুইশাক, সরিষা, মরিচ/ঝাল, আলু, ওলকপি, বাঁধাকপি, ফুলকপি, মূলা, ইত্যাদি চাষাবাদ করেছেন। পরবর্তী মৌসুমে লাগানোর জন্য উপযুক্ত ফসল নির্বাচন করে রাখেন বীজ রাখার জন্য। তার ছোট একটি স্বাদু পানির পুকুর রয়েছে। তবে গরমের সময় এই পানি থাকে না। তার পুকুর থেকে বছরের মাছের চাহিদা অনেকখানি মিটে যায় বলে জানান তারা।
দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরা ইউনিয়নের লবণাক্ত পরিবেশে এলাকা উপযোগি ফসল চাষাবাদের মাধ্যমে তার আয় আয় কিছুটা বেড়েছে এবং খরচ কিছুটা কমেছে বলে মনে করেন তারা। কৃষি কাজ ও সেলাই মেশিন থেকে আয় করে স্বামীর সাথে সংসারের উন্নয়নে সহযোগিতা করতে পারায় রাবিয়া খাতুন খুশি।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় রাবিয়া খাতুনের উদ্যোগ স্থানীয়দের কাছে একটি উদাহরণ। তার উদ্যোগ পরিবেশ ও প্রকৃতি সুরক্ষায় অবদান রাখবে।

happy wheels 2

Comments