বড়াল নদীতে সৌখিন মৎস্য শিকারীদের বাউত উৎসব
মো. মনিরুজ্জামান ফারুক, ভাঙ্গুড়া(পাবনা) :
মৎস্য সমৃদ্ধ চলনবিলের পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার বড়াল নদীতে পলো দিয়ে মাছ শিকারের উৎসবে নেমেছিল বিভিন্ন গ্রামের প্রায় দুই শত মানুষ। তবে তাঁরা কেউই পেশাদার মাছ শিকারী নয়। সবাই শখের বশে মাছ শিকারে নেমেছেন। স্থানীয় ভাষায় এদেরকে ‘বাউত’ বলা হয়। মাছ শিকারের এ দৃশ্য যেন আনন্দভরা কোনো মহোৎসব।
গত বুধবার দুপুরে ভাঙ্গুড়া পৌর সদরের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া বড়াল নদীতে মাছ শিকারের এমনই উৎসব দেখা যায়। এদিন সৌখিন মৎস শিকারীরা শুধু পলো নয়। খেয়া জাল, বাদাইজাল, মশারি জালসহ বিভিন্ন মাছ ধরার ফাঁদ নিয়ে নদীতে মাছ শিকার শুরু করেন। মাছ শিকার শেষে তাঁরা সকলে একযোগে নদী থেকে উঠে পড়েন। এসময় অনেকের কাছে বিভিন্ন আকারের বোয়াল, আইড় ও শৈল মাছ সহ নানা প্রজাতির মাছ দেখা যায়। তবে এদের মধ্যে কেউ কেউ আবার ফিরেছেন খালি হাতে।
এদিকে মাছ শিকারীদের উৎসব দেখতে এদিন নদীর তীরবর্তী এলাকায় উৎসুক মানুষের ভিড় জমে যায়। এসময় সৌখিন মৎস শিকারীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রতিবছর ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে জেলার বিভিন্ন এলাকার নদ-নদী ও খাল-বিলের পানি কমে যায়। এসময় তাঁরা কয়েক গ্রামের উৎসুক মানুষ এক অপরের সাথে যোগাযোগ করে একযোগে বিভিন্ এলাকায় মাছ শিকারে যান। এরই ধারাবাহিকতায় এদিন তাঁরা বড়াল নদীতে মাছ শিকারে নেমেছেন।
এ প্রসঙ্গে ভাঙ্গুড়া উপজেলা মৎস কর্মকর্তা আব্দুল মতিন বলেন, ‘প্রতিবছর বর্ষাকালে সরকারিভাবে এ এলাকায় প্রচুর মাছের পোনা অবমুক্ত করা হয়। তাই শুষ্ক মৌসুমে চলনবিল অধ্যুষিত ভাঙ্গুড়ায় উপজেলার বিভিন্ন নদী-নালা ও খাল বিলে সৌখিন মৎস শিকারীদের ঢল পড়ে যায়। এ যেন এ এলাকার মানুষের প্রাণের উৎসব।’
মাছ ধরতে আসা চাটমোহর উপজেলার পাঁচুরিয়া গ্রামের হাফিজুর রহমান বলেন, ‘শখের বশেই আমি প্রতিবছর সকলের সাথে মাছ ধরার উৎসবে যোগ দিই। প্রায় একযুগ ধরে আমি এভাবে বাউত উৎসবে মাছ ধরতে আসেন।’ একই উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বছরের এই সময়টার জন্য মনটা ছটফট করে। তাই পরিবারের লোকজন বাধা দিলেও মাছ ধরতে চলে আসি।’