তরুণ সংগঠনের উদ্যোগে শতভাগ টিটি টিকা প্রাপ্ত গ্রাম
রাজশাহী থেকে মো. জাহিদ আলী
বড়শীপাড়া গ্রামের শতভাগ নারী টিটি টিকা লাভ করেছেন। রাজশাহীর গোদাগাড়ীর গোগ্রাম ইউপির কৃষ্ণপুর কমিউনিটি ক্লিনিক এই ঘোষণা দেয়। প্রায় দুই বছর প্রচেষ্টার পর এই কাজে সফল হলো কৃষ্ণপুর কমিউনিটি ক্লিনিক। বড়শীপাড়া গ্রামের তরুণ সংগঠন আলোর পথে তরুণ সংঘের সদস্যরা বারসিক’র সহায়তায় প্রতি মাসে স্বাস্থ্য শিক্ষার আসর নামে কমিউনিটি ক্লিনিকে প্রাথমিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় করণীয় বিষয়ে আলোচনা করে আসছে।
২০১৬ সালে শুরু হওয়া এই উদ্যোগের মাধ্যমে প্রাথমিক স্বাস্থ্য শিক্ষার বিষয়গুলো অংশগ্রহণকারীদের প্রতি মাসে বুঝিয়ে দেন কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি ফারজানা খাতুন ও স্বাস্থ্য সহকারী রিপন হোসেন। স্বাস্থ্য শিক্ষার আসরের মধ্যে উঠে আসে বড়শীপাড়া গ্রামের এই ইউনিটে নারীদের টিটি টিকা প্রাপ্তদের হার ৫৫ ভাগ। এই বিষয়টিতে সহায়তা করার জন্য তরুণ সংগঠনের কাছে সহায়তা চান প্রেমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য পরিদর্শক জাহাঙ্গীর আলম।
এর ধারাবাহিকতায় তরুণ সংগঠনের সদস্যরা বিভিন্ন সময় টিটি টিকা প্রাপ্ত বা পাবার উপযোগী নারীদের টিটি টিকা গ্রহণের আহবান জানান। টিটি টিকার বর্তমান অবস্থা জানার জন্য সংগঠনের সদস্যরা সেপ্টেম্বর ২০১৮ মাসে গ্রামে একটি জরিপ পরিচালনা করে। তারা গ্রামের ১৩৮টি বাড়ি ঘুরে টিটি টিকার তথ্য সংগ্রহ করেন। যেখানে টিকা চলমান রয়েছে ২০ জনের, টিকা গ্রহণ শুরু করেনটি ২৩ জন বাকিগুলোর টিকা কোর্স সম্পর্ণূ করা হয়েছে। এই তথ্যটি কমিউনিটি ক্লিনিককে দিলে তারা বাকীদেরকে টিকার আওতায় নিয়ে আসে।
ডিসেম্বর ১৯ তারিখে গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, কমিউনিটি ক্লিনিকের কমিটির সদস্য, আলোর পথে তরুণ সংগঠনের সদস্য ও টিকা প্রাপ্ত ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে কৃষ্ণপুর কমিউনিটি ক্লিনিক ম্যানেজিং কমিটির সদস্য সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান বড়শীপাড়া গ্রামকে শতভাগ টিটি টিকা প্রাপ্ত গ্রাম হিসেবে ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, ‘টিটি টিকা বা ধুনষ্টংকার রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য এই টিকা গ্রহণ করতে হয়। এটি একটি মরণ ঘ্যাতি রোগ, আমাদের গ্রামে এই রোগ হবার কোন সম্ভাবনা নেই বললেই চলে কারণ আমরা আজ শতভাগ টিটি টিকা প্রাপ্ত গ্রাম ঘোষণা করছি। নবজাতকে এই রোগ থেকে বাঁচার জন্য সকলকে নিয়ম মাফিক এই টিকা নেয়া প্রয়োজন।’
স্বাস্থ্য সহকারী রিপন হোসেন বলেন, ‘টিকা টিকা না নিলে ধুনষ্টংকার রোগ হয়, ধনুকের মত পা বাঁকা হয়ে যায়। এই রোগে রোগীর মৃত্যু বেশি হয় । চিকিৎসায় ভালো হয় তবে অনেক ব্যয়বহুল শহর ছাড়া এর কোন চিকিৎসা হয় না।’ তিনি আরো বলেন, ‘প্রাপ্ত বয়স্ক সরকারী নিয়ম অনুযায়ী ১৫ বছর পার হলে টিটি টিকা শুরু করতে হবে। প্রথম টিকা নেওয়ার ২৮ দিন পর দ্বিতীয় ডোজ নিতে হয়। দ্বিতীয় ডোজের ৬ মাস পর তৃতীয় ডোজ এবং ৪র্থ ও ৫ম ডোজ তৃতীয় ডোজের এক বছর পর পর। একবার কেউ এর ডোজ পূর্ণ করলে সারা জীবনে তার এই রোগ হবে না।”
কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি ফারজানা খাতুন জানান, ‘আমাদের এই ক্লিনিকে নিয়মিত ভাবে টিটি টিকাসহ স্বাস্থ্য শিক্ষা দেয়া হয়। মা ও শিশুর স্বাস্থ্য ভালো থাকতে টিকা সম্পর্কে সকলকে সচেতন হতে হবে এবং নিয়ম অনুযায়ী সকল টিকা গ্রহণ করতে হবে।’ স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই হলো উৎকৃষ্ট পন্থা। মরণঘাতি সকল রোগ সম্পর্কে আমরা সচেতন থাকবো এবং এর প্রতিরোধে নিয়মমাফিকভাবে পদক্ষেপ গুলো অনুসরণ করবো এটাই হোক সকলের অঙ্গীকার।’