বসন্ত রাঙাচ্ছে রাস্না
কলমাকান্দা, নেত্রকোনা থেকে অর্পণা ঘাগ্রা
মূহুর্তের জন্য পথচারীদের দৃষ্টি উর্ধ্বমূখী হচ্ছে, চলার গতি থেমে যাচ্ছে অর্ধশতবর্ষী বৃষ্টি (রেইনট্রি) গাছে সারি সারি ঝুলে থাকা অরকিড ফুল রাস্নার সৌন্দর্য্য অবলোকনে। দেখলে মনে হয় কৃত্রিমভাবে কেউ গাছটিকে ফুল দিয়ে সজ্জিত করেছে। অদ্ভুদ সুন্দর দেখতে এই ফুলগুলো কলমাকান্দা উপজেলার খারনৈ ইউনিয়ন পরিষদ সংলঘœ রাস্তা ও নদীর ধারে সারিবদ্ধ ভাবে কয়েকটি অর্ধশতবর্ষী বৃষ্টি (রেইনট্রি) গাছগুলোকে আকঁড়ে বেঁচে আছে অনেক দিন ধরে। তার রূপ ও সৌন্দর্য্যের পূর্ণ বিকশিত হওয়ার উপযুক্ত সময় বসন্তকাল। রাস্না শুধু সৌন্দর্য্যইে নয় নানান ঔষধি গুণেও সমৃদ্ধ।
এর বৈজ্ঞানিক নাম Dendrobium aphyllum. এটি অরকিড প্রজাতির। এর উৎপত্তি আসাম, বাংলাদেশ, পূর্ব হিমালয়, ভারত, মালদ্বীপ, নেপাল, শ্রীলংকা, আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, লাউস, মালয়েশিয়া, বর্ণী, জাভা, সুমাত্রা, অস্ট্রেলিয়া। এটি একটি সুগন্ধযুক্ত ফুল।
অধিকাংশ স্থানীয় মানুষ ফুলটিকে দেখলেও এর নাম সম্পর্কে জানেন না। প্রায় ১৫ বছর ধরে কবিরাজি করেন ভাষানকুড়া গ্রামের আব্দুল আজিজ (৪৫)। তিনি বলেন, “ফুলটির নাম রাস্না। ফেব্রুয়ারি-এপ্রিল মাস পর্যন্ত বা তারও বেশিদিন পর্যন্ত ফুলটি একই সৌন্দর্য্য নিয়ে স্থায়ী থাকে। ফুলটির ছড়াগুলো প্রায় ৩-৪ হাত পর্যন্ত লম্বা হয়। এক জায়গা থেকেই ১০-১৫টি ছড়া বের হয়। যখন ফুল হয় তখন কোন পাতা থাকেনা। যখন পাতা থাকে তখন কোন ফুল থাকেনা। যখন বীজ হয় তখন কোন ফুল থাকেনা। বর্ষাকাল আসলেই পাতা গজাতে শুরু করবে।” ফুলের রঙ হালকা গোলাপী ও বেগুনী রঙের সংমিশ্রণ। চার-পাচঁটি পাপড়িযুক্ত। মে-জুন মাসের দিকে বীজ হতে শুরু করে। বীজের রঙ সবুজ। দেখতে কামরাঙ্গা ফলের মত তবে আকারে এলাচি দানার মত ছোট ও দানাদার। এটি শুধু শিকড় দিয়ে গাছে আটকে থাকে। পরগাছা বলে অন্য গাছের যোগান দেয়া খাদ্যের উপর নির্ভরশীল।
রাস্নার জীবনকাল সম্পর্কে আব্দুল আজিজ আরো বলেন, “বৃষ্টি গাছটি যতদিন বেচেঁ থাকবে রাস্নাও ততদিন বেচেঁ থাকবে। এর ফল বুলবলি পাখির খুব প্রিয় খাবার। বীজ মাটিতে পড়ে গেলে মাটিতে চারা গজায় না। তবে পাখি খেয়ে কোন গাছে মল ত্যাগ করলে এবং পরিবেশটি উপযুক্ত হলেই এটি গাছেই জন্মে ও বিস্তার লাভ করে। তবে অরকিডের জন্য ছায়াযুক্ত গাছ দরকার।”
ইচ্ছেমত রূপ ধারণ নামে ঔষধের একটি ফর্মূলা আছে। যার জন্য রাস্নার যেকোন অংশ (ফুল, পাতা, শিকর, বীজ) অবশ্যই দরকার। এর প্রত্যেকটি অংশ ছেঁচে রস ব্যবহার করতে হয়। প্রত্যেকটি অংশই সমান ঔষধি গুণে সমৃদ্ধ। ইচ্ছেমত রূপ ধারণ ঔষধটি শরীরের চর্ম রোগ দূর করার জন্য এবং রূপ চর্চার জন্য ব্যবহার করা হয়। এটি তৈরি করার জন্য রাস্নার পাশাপাশি মেহেদী গাছের ছাল, ঢারু হরিত্রা ফল, স্থল পদ্ম ফুল, মশুরের ডাল একসাথে পেস্ট করতে হয় এবং সারা শরীরে অথবা যে অংশে চর্মরোগ আছে সেই স্থানে ১০-১৫ মিনিট মেখে রাখতে হয়। এতে চর্মরোগ ভালো হওয়ার শতভাগ নিশ্চয়তা দিয়েছেন কবিরাজ আব্দুল আজিজ।
প্রকৃতিকে তার নিজস্ব স্বকীয়তায় টিকে থাকার সুযোগ দিলে প্রাকৃতিকভাবেই তার সর্বস্ব দিয়ে সজ্জ্বিত করবে এবং সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখবে প্ররিবেশ ও প্রতিবেশের মাঝে। তাই আসুন প্রকৃতির প্রতি সহিংসতা বন্ধ করি এবং সংরক্ষণে যত্নশীল হই।