দেমী ধান (মুড়ি ফসল)

নেত্রকোনা, কলমাকান্দা থেকে অর্পণা ঘাগ্রা

দেমী (মুড়ি ফসল) ধান হচ্ছে বোরো ফসল কাটার ১৫-২০ দিনের মধ্যেই একই ধান গাছে পুনরায় নতুন ধানের কুশি গজায় এবং ১০-১৫ দিনের মধ্যেই এই ধানে শীষ বের হয়। শীষ বের হবার ১৫-২০ দিনের ধান পেকে গিয়ে একই জমি থেকে কৃষক দুইবার ধান সংগ্রহ করতে পারেন। এই ধানকেই স্থানীয় কৃষকদের ভাষায় দেমী ধান বলে। এর জন্য কোন খরচ নেই, বাড়তি কোন পরিশ্রমও নেই, পানি, সার, কীটনাশক, আগাছা পরিস্কার করা কোন কিছুরই প্রয়োজন পড়েনা। শুধুমাত্র ধান পাকার আগ পর্যন্ত গরু, ছাগল যেন ক্ষতি না করে তা দেখাশুনা করতে হয়। তবে পূর্বের সংগ্রহ করা ধানের তুলনায় দ্বিতীয়বার সংগ্রহ করা ধান আকারে তুলনামূলক ছোট হয়। খেতেও স্বাদ বেশি বলে কৃষকরা জানান।
এই ধান দিয়ে মুড়ি ও চিরা খুব সুন্দর হয় এবং খেতে বেশ সুস্বাদু হয় বলে জানান কৃষাণী জরিনা বেগম। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, “প্রথমবার বোরো ধানের জমিতে অধিক মাত্রায় সার বীষ দেয়ার ফলে প্রথম বারের ধান ওই সার, বীষ ধান শোষণ করছে। এই কারণে ওই ধানের সাইজ বড় হইলেও পাইনসে লাগে। কিন্তু দ্বিতীয়বারের ধানে কোন ধরনের সার, বীষ নেই তাই মিষ্টি মিষ্টি লাগে।”

1---
নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের রামপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল হামিদ এই ধান সংগ্রহ করতে সবসময় ধান ফসল চাষের জমিতে যান। তিনি বলেন, “আমি গরুর জন্য ঘাস কাটতে প্রতিদিন অনেক বন্দে (ধান ফসল চাষের জন্য বিস্তীর্ণ জমি) যাই। একবার দুই বস্তা ঘাসের সাথে ধান আসে। আর সেখান থেকে আমি দশ কেজি পরিমাণ ধান পাই।” এরপর থেকে তিনি চিন্তা করেন তার দুই কাঠা পরিমাণ বোরো ধানের জমি তিনি গরু ছাগলের হাত থেকে নিরাপদে রাখবেন এবং দেমী ধান সংরক্ষণ করবেন।
কৃষক আব্দুল হামিদের প্রতিবেশী কৃষাণী জরিনা বেগমও ৪ কাঠা পরিমাণ জমিতে বোরো ধান চাষ করেছেন। তার বাড়ির পাশের দুই কাঠা জমিতে তিনি দেমী ধান সংরক্ষণ করেছেন। অপর দুই কাঠা জমি বাড়ি থেকে দূরে হওয়াতে গরু ছাগলের হাত থেকে রক্ষা করতে পারেননি। তবে সংরক্ষিত দুই কাঠা জমি থেকে ১৫-২০ কেজি পরিমাণ ধান পাওয়া যাবে বলে তিনি জানান। গরু, ছাগল নষ্ট না করলে আরও বেশি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি এই দেমী ধান সংরক্ষণ করেন। যদিও গত বছর এইরকম সময়ে পাহাড়ি ঢলের কারণে জমিগুলো পানিতে নিমজ্জিত হওয়ায় সেবার এই ধান সংগ্রহ করতে পারেননি।
কলমাকান্দা উপজেলার নাজিরপুর ও লেঙ্গুড়া ইউনিয়নের অধিকাংশ কৃষক এই বছর থেকে দেমী ধান সংরক্ষণ করছেন। কৃষক আব্দুল হামিদ ও কৃষানী জরিনা বেগমের মত অনেক কৃষকই একটু পরিশ্রমী ও উদ্যোগী হলেই কোন ধরনের খরচ ছাড়াই একই ধানের জমি থেকে দ্বিতীয়বার ধান সংগ্রহ করতে পারবেন, যা তার পূর্বের ধানের সাথে যুক্ত হয়ে বিশেষভাবে ছোট ছোট কৃষকদের আরো কয়েক দিনের খাবার খোরাক যোগাবে।

happy wheels 2

Comments