লক্ষ্য ঠিক রেখে পরিশ্রম করলে সাফল্য আসবেই: ইউপি সদস্য শাকিলা পারভীন
রাজশাহী থেকে মো. জাহিদ আলী
কঠোর অধ্যবসায় আর অসুস্থতাকে জয় করে ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচিত হয়েছেন শাকিলা পারভীন। গন্তব্য ঠিক রেখে যে কোন পরিশ্রম যে বৃথা যায় না তা আবারও প্রমাণ করলেন তিনি। গত ২০১১ সালের ইউপি নির্বাচনে নিজ আসন থেকে নির্বাচন করে মাত্র ২০ ভোটে হেরে গেলেও এবারের নির্বাচনে গোগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের ৯টি ওয়ার্ডের আসন থেকে জয় লাভ করেন ১০১৬ ভোটের ব্যবধানে।
অসহায় মানুষের সেবা করার ইচ্ছা সেই ছোট বেলা থেকেই। কিন্তু বাবার বাড়িতে খুব বেশি লেখাপড়া এগুতে পারেনি। দশম শ্রেণীতে পড়ার পর বিয়ে হয়ে যায় শাকিলা পারভীনের। শাকিলা পারভীন (৩৫)এর পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৫ জন। স্বামী-স্ত্রী দুই ছেলে ও এক মেয়ের সংসার শাকিলা পারভীন এর। আর্থিকভাবে সাবলম্বী না হলেও স্বামীর পরিবারে অভাব খুব একটা ছিল না।
এই পথচলায় শাকিলা পারভীনকে অনেক বাধা অতিক্রম করতে হয়েছে। তারপরও তিনি থেমে থাকেননি। তিনি বলেন, “২০০৯ সালে আমার চোখের মারাত্মক সমস্যা দেখা দেয়। বেশি কিছু দিন আমি চোখে দেখতে পেতাম না। পারিবারিকভাবে তখন একটু অর্থাভাবে ছিলাম। তারপরও নিজের ইচ্ছায় একসময় সুস্থ হই।” তিনি বলেন, “সুস্থ হওয়ার পর আমি গোগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের ৯টি ওয়ার্ডে প্রতিবন্ধীদের কমিটিতে তদারকীর দায়িত্ব নিই। সেই থেকেই ৯টি ওয়ার্ডে কাজ করার ফলে অনেকে সাথে আমার পরিচয় ঘটে। প্রতিবন্ধী মানুষের সহায়তা করতে পারায়ি আমার আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়। কাজের এই অভিজ্ঞতা থেকে ২০১১ আমার দুলা ভাইয়ের পরামর্শে ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী আসনে নির্বাচন করি যদিও সামান্য ভোটের ব্যবধানে সেবার জয়লাভ করতে পারিনি।”
অনেক আশা নিয়ে নির্বাচন করার পর বিজয়ী হতে না পেরে মন শাকিলা পারভীনের মন ভেঙ্গে যায়। আর নির্বাচন দাঁড়াবেন না বলে ঠিক করলেন। কিন্তু ২০১৩ সালের দিকে ‘স্বচ্ছ ও জবাবদিহি স্থানীয় প্রশাসনের জন্য কার্যকর অংশগ্রহণ প্রকল্প’ নামক একটি প্রকল্পের বিভিন্ন সভা, অনুষ্ঠান ও আলোচনায় অংশ নিয়ে শাকিলা পারভীনের আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়। এসব অনুষ্ঠানগুলোতে অংশগ্রহণের মধ্যে দিয়ে তাঁর মনোবল বৃদ্ধি পায় এবং নিজেকে বিশ্বাস করতে শুরু করেন যে তিনি একদিন জয়লাভ করবেনই। এভাবে তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন আবার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এলাকার মানুষও এসময় তাকে সাহস দেন বলে তিনি জানান। অবশেষে ২৩ এপ্রিল ২০১৬ অনুষ্ঠেয় ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তিনি তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি সেফালী বেগম এর চেয়ে ১০১৬ ভোট বেশি পেয়ে নির্বাচিত হন। তিনি বলেন, “নির্বাচনে জয়লাভের মাধ্যমে আমার দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন পুরণ হল। গত ২৯ মে আমি সংরক্ষিত নারী হিসাবে শপথ গ্রহণ করি। এবার আমার অনেক দায়িত্ব বেড়ে গেলো।”
শাকিলা পারভীন জানান অনেক সংগ্রাম করে তিনি এই জায়গায় আসতে পেরেছেন । তাঁর এই জায়গায় আসা তখই স্বার্থক হবে যখন ইউনিয়ন পরিষদের বিভিন্ন সেবা মানুষের মাঝে পৌছাতে পারবেন বলে তিনি জানান। তিনি আরো জানান, যেসব নারী সুযোগ আছে এই রকম জায়গায় আসার তাদের পিছুটান ছেড়ে গ্রামের মানুষের কল্যাণে কাজ করা উচিত; গ্রামের মানুষই আপনার যোগ্য মূল্যায়ন করবেন।