কুইচা চাষ
নাচোল চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে অনিতা বর্মণ
কুইচা আমাদের গ্রাম বাংলার একটি পরিচিত মাছ। এটিকে নানাজন নানাভাবে গ্রহণ করে। তবে মাছ ও ঔষুধ হিসেবেই কুইচার ব্যবহার দীর্ঘদিনের। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার, নাচোল উপজেলার, নেজামপুর ইউনিয়নে অবস্থিত ফুলকুড়ি গ্রামে গত ২ নভেম্বর থেকে চাষ করা হচ্ছে বিলুপ্তপ্রায় কুইচা মাছের। বরেন্দ্র অঞ্জলের ফুলকুড়ি গ্রামে এই প্রথম কুইচা চাষে যুক্ত হয়েছেন ১৫ জন কৃষক ও ৫ জন কৃষাণী। ফুলকুড়ি গ্রামের এই কুইচা মাছ চাষী শ্রী সুশিল চন্দ্র পাহান জানান, “আগে কুইচা চাষ করতে হতো না। ছোট, বড় পুকুর, খাল, ডোবা, নদী, নালার এই মাছ পাওয়া যেত। বিশেষ করে মাটির অগভীর ও তীরবর্তী অংশ পাড়ে মাটির গর্তে এই মাছের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যেত। অনেক সময় পুকুর খনন করার সময় মাটির অনেক গভীরে এই কুইচা মাছ পাওয়া যায়।”
তিনি আরো জানান, কুইচা বাংলাদেশের অনেক মানুষই খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে না। আবার অনেকে একে মাছ না বলে সাপ বলে থাকেন। এই মাছের স্বাদ মাংসের মতো আর এই মাছটির ওষুধি গুণও রয়েছে। কিন্তু এখন এই মাছ তেমন আর চোখে পড়ে না। দেশে বিদেশে এর চাহিদা অনেক। তাই মৎস অধিদপ্তর এর সহযোগিতায় এই কুইচা মাছ চাষে মানুষকে উৎসাহিত করছে। মৎস অধিদপ্তর থেকে প্রথমত ২০ জন কৃষাণ-কৃষাণীদের নির্বাচন করেন। এরপর ছবি ও ভোটার আইডি কার্ড ঢাকায় মৎস অধিদপ্তরে পাঠান। সেখান থেকে অনুমোদন পাওয়ার পর নাচোল মৎস অফিসে একদিনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রশিক্ষণ পাওয়ার পরেরদিন জায়গা নির্ধারণ করে মাছ চাষের জন্য উপযুক্ত করা হয়। কুইচা মাছ চাষের সমস্ত খরচ বহন করবে মৎস অধিদপ্তর।
তিনি আর বলেন, “এই মাছের প্রধান খাদ্য শামুক আর কেঁচো। কিন্তু এইগুলো না পাওয়ার কারণে বাজার থেকে ফিডস কিনে খাওয়া হয়। দিনে অন্তত দু’বার এই খাবার দেওয়া হয়। তিনি জানান, প্রথমে ১৬০০ কুইচা মাছের পোনা ছাড়া হয়। প্রতিটি পোনার ওজন ২০০ গ্রাম। এই মাছগুলো একবছর পর বিক্রি করা যাবে। প্রতিটি মাছের ওজন ২/৩ কেজি হবে। আর এই মাছের বাজারমূল্য প্রতি কেজিতে ৫০০ টাকা।
মৎসজীবী সুশীল পাহান বলেন, “কুইচা মাছ আমাদের একটি উপকারি মাছ। এই মাছ দ¦ারা অনেক রোগের ওষুধ তৈরি করা হয় বলে এর চাহিদা অনেক। তাই এই মাছকে নিধন না করে এই চাষ বাড়াতে হবে। এতে করে আমাদের পরিবেশ রক্ষা পাবে, আমরাও রক্ষা পাব। বিলুপ্তপ্রায় এই মাছটি রক্ষায় এখনই উদ্যোগী হতে হবে।