গাছ বিনিময়ের মাধমে বিশ্ব পরিবেশ দিবস উদযাপন
কলমাকান্দা, নেত্রকোণা থেকে অর্পনা ঘাগ্রা
এক সংগঠনের সদস্যরা গাছ দিয়ে আর অপর সংগঠনের সদস্যরা গাছ রোপনের মধ্য দিয়ে বিশ্ব পরিবেশ দিবসে পরিবেশ সুরক্ষায় সামিল হলো। গাছ দেয়া নেয়ার রীতি আজকাল নেই বললেই চলে। তাই মানুষের মাঝে গাছ বিনিময়ের অভ্যাস তৈরি করার জন্য নাজিরপুর ইউনিয়নের ভেলুয়াতলী গ্রামের বাইর শিল্প সংগঠনের সভাপতি আব্দুল মোতালিবের এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। বাইর শিল্প সংগঠনের পক্ষ থেকে তিনি কলমাকান্দা সদর ইউনিয়নের আশার আলো নারী সংগঠনের মাঝে ১৬৫টি ফলজ ও বনজ গাছ বিনিময় করেছেন। গাছ প্রদানের পর তিনি তার অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, “গাছ পরিবেশ ও আমাদের বন্ধু। এই গাছ বিনিময়ের মাধ্যমে তাদের সাথে আমাদের যোগাযোগ তৈরি হইল। এইবার আমরা তাদের গাছ দিলাম পরবর্তীতে তারাও হয়তো অন্যদের দিতে পারে। মানুষের মাঝে গাছ দেয়ার অভ্যাস তৈরি করার জন্য আজকের এই পরিবেশ দিবসে গাছ দিলাম।” অপরদিকে আশার আলো নারী সংগঠনের সদস্য নাসিমা বেগম বলেন, “আমরা তাদের কাছ থেকে গাছ বিনিময় করার শিক্ষা পেলাম। গাছ যেমন আমাদের বন্ধু তেমনি গাছ দিয়াও আমরা মানুষের সাথে বন্ধুত্ব তৈরি করতে পারি।”
একই দিনে পাখির জন্য নিরাপদ আশ্রয়ের দাবীতে রংছাতি ইউনিয়নের বাঘবেড় গ্রামের জনগোষ্ঠী পাখি রক্ষায় সাইনবোর্ড টানিয়ে বিশ্ব পরিবেশ দিবস উদ্যাপন করেছে। পাখি ছাড়া সুষ্ঠ সুন্দর পরিবেশ অপূর্ণ। বীজ সম্প্রসারনের মাধ্যমে প্রাকৃতিক বনায়নে, প্রাকৃতিকভাবে ফসলের ক্ষতিকর পোঁকা দমনে, পচাঁ আবর্জনা খেয়ে আমাদের চারপাশের পরিবেশ সুন্দর রাখার ক্ষেত্রে পাখির অবদান অনস্বীকার্য। পাখির জন্য ভালবাসার জায়গা থেকে বাঘবেড় গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক, জাকির হোসেন ও তাদের পরিবারবর্গ বড় গাছ ও বাঁশ ঝাড় সংরক্ষণ করেন। এখানেই সারাবছর ও অনেক দিন ধরে বিভিন্ন প্রজাতির পাখির বসবাস। কিন্তু তারা মোটেও নিরাপদ থাকতে পারেনা পাখি শিকারিদের দৌরাত্মের কারণে। তাই আজ এই দিনে বারসিক’র সহযোগিতায় ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশনায় সাইনবোর্ড টানিয়ে পাখি শিকার বন্ধে প্রচারণা চালাচ্ছে। এ সম্পর্কে এই গ্রামের অধিবাসী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “আমাদের গ্রামে অনেক পাখি থাকাতে ইঁদুরের উপদ্রব কম, পোঁকা মাকড়ের উপদ্রবও কম, দেখতেও ভাল লাগে। কিন্তু অনেক মানুষ এই পাখি শিকার করতে আমাদের গ্রামে আসে। তাদেরকে আমাদের অনেক কথা বলে মানা করতে হয়। এখন বারসিক, ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা প্রশাসন পাখি রক্ষায় আমাদের সাথে আছে। আমরা পাখি রক্ষায় আরো জোর পেলাম।”
এছাড়াও উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে উপজেলা পরিষদ চত্ত্বরে “প্লাস্টিক দূষণ থেকে পৃথিবীকে রক্ষা” এই প্রতিপাদ্য বিষয়কে সামনে রেখে র্যালি ও আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে বিশ্ব পরিবেশ দিবস ২০১৮ উদ্যাপন করা হয়েছে। পরিবেশ দিবসকে সামনে রেখে কলমাকান্দা শহরের পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখার দাবীতে উদয় যুব সংগঠনের সদস্যরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন। তারা দাবী করেন আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যে কলমাকান্দা উপজেলা শহরকে পরিচ্ছন্ন শহর হিসেবে ঘোষণা করতে হবে। তাদের দাবীগুলোর মধ্যে ছিল-
- বাস স্টেশনে নারী ও পুরুষদের জন্য পৃথকভাবে পাবলিক টয়লেট স্থাপন, টিউবওয়েল স্থাপনসহ এর যথাযথ ব্যবস্থাপনার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
- এছাড়াও বিভিন্ন স্টেশন ও বাজার গুলোতে পাবলিক ডাস্টবিন স্থাপন,
- যথাযথ ভাবে বর্জ ব্যবস্থাপনা,
- শহর ব্যবস্থাপনার জন্য পর্যাপ্ত মালি নিয়োগ,
- প্রতিটি ব্যবসায়ীদের নিজ নিজ দোকানের পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখা।
এই দাবীগুলো বাস্তবায়ন করার জন্য প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রনয়ন ও কার্যকরী বাস্তবায়নের জোর দাবী জানান।
আলোচনাকালে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরিফুজ্জামান বলেন, “প্লাস্টিক পণ্য পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। বিভিন্ন ক্যাটাগরির জিনিসের জন্য বিভিন্ন ক্যাটাগরির প্লাস্টিক পণ্য রয়েছে, মানসম্মত প্লাস্টিক পণ্য চেনার সুযোগ আছে। এগুলো জনসাধারণকে জানানো উচিত। এছাড়াও প্লাস্টিকের বিকল্প জিনিস ব্যবহারের জন্যও উদ্বুদ্ধ করা উচিত। এছাড়াও কলমাকান্দা উপজেলা শহরকে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য আমরা কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করছি। সেগুলো বাস্তবায়নে সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন।