আমরা গাছপালা বাচাইয়া পরিবেশ ভালো রাখতাছি
কলমাকান্দা নেত্রকোনা থেকে অর্পণা ঘাগ্রা
`Connect with nature’ এই প্রতিপাদ্য বিষয়কে সামনে রেখে উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে বারসিক, ওয়ার্ল্ডভিশন ও সারা সংস্থার সহযোগিতায় কলমাকান্দা উপজেলায় বিশ্ব পরিবেশ দিবস ২০১৭ উদ্যাপন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে সরকারি, বেসরকারি সংস্থার পাশাপাশি কৃষক, জেলে, কুমার, কামার, কবিরাজ, সুইপার, মাঝি, কুটিরশিল্পী, শিক্ষক, সাংস্কৃতিক কর্মী, চামার, নার্সারি ব্যবায়ী প্রভৃতি পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করে।
পরিবেশ দিবসকে সামনে রেখে কলমাকান্দা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ মোহাম্মদ হুমায়ুন কবীর বলেন, “আমাদের নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন বন্ধ করা উচিত। বেশি করে বৃক্ষ রোপণে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। তালগাছ বজ্রপাত প্রতিরোধে সহায়ক। তাই প্রাকৃতিক দূর্যোগ মোকাবেলা করার হাতিয়ার হিসেবেও তালগাছ রোপণ করা যেতে পারে।” অন্যদিকে কুমার পেশাজীবী গোপাল চন্দ্র পাল বলেন, “আমরা অনেক পরিশ্রম করে মাটি দিয়ে বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরি করি। মাটির জিনিস পরিবেশের কোন ক্ষতি করে না। ভাইঙ্গা গেলে মাটির সাথে মিইশ্যা যায় তারাতারি। কিন্তু বর্তমানে মানুষ প্লাস্টিকের জিনিসপত্র বেশি ব্যবহার করতাছে। এই জিনিসগুলা নষ্ট হইয়া গেলে তারাতারি পচেনা। তাই প্লাস্টিকের জিনিস পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।”
জল ও জলাশয়ের পরিবেশ সম্পর্কে মৎস্যজীবী নগেন্দ্র দাস বলেন, “প্রাকৃতিক দূর্যোগের জন্য বর্তমানে হাওরের পানি দূষিত হইয়া মাছসহ পোকামাকড়ের বাইচা থাকার পরিবেশ নষ্ট হইয়া গেছে। মাছ ভালো না থাকলে আমরা মৎস্যজীবীরা ভালো থাকতে পারি না।” তিনি আরও বলেন, “আমরা মাছের খাবার হিসাবে হিজল গাছ রোপণ করি, হিজল গাছের ছাল ও পাতা মাছ খায়। গাছে পাখি এবং পোকামাকড় বাস করে। ফুল ও ফল পাখি ও পোকামাকড় খাইয়া বাঁচে। শুকনা ডাল আমরা লাকড়ি হিসেবে ব্যবহার করি। হিজল গাছ হাওরে বসতভিটে রক্ষা করে।”
গাসন্ত ঔষধের জন্য গাছপালার উপর নির্ভরশীল কবিরাজ মোহাম্মদ আব্দুল বারেক বলেন, “গাছপালা না থাকলে কবিরাজ পেশা থাকবেনা। আমাদের কাছে ছোট, বড়, ওর্কিড, ফলের, কাঠের সব ধরনের গাছই সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। গাছের পাতা, ফুল, ফল, ছাল, শিকড় সবকিছু দিয়ে আমরা ঔষধ তৈরি করি। বর্তমানে ঔষধি গাছপালা কমতাছে। আমরা গাছপালা বাচাইয়া পরিবেশও ভালো রাখতাছি আবার ঔষধের জন্য ব্যবহার করতাছি।”
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মানুষের মাঝে খুব সহজেই যেকোন বিষয় পৌছে দেওয়া যায় বলে সাংস্কৃতিক কর্মী গিরিন্দ্র চন্দ্র সরকার জানান। তিনি বলেন, “আমি জারি ও ধর্মীয় গান লিখি, গাই, শিক্ষার্থীদের শিখায়। গানের মাধ্যমে বৃক্ষ রোপণের জন্য মানুষকে উৎসাহ যোগাই। গাছের উপকারিতাগুলো তুলে ধরি। গাছ না থাকলে কি কি ক্ষতি হতে পারে সেগুলোও গানের মাধ্যমে তুলে ধরে মানুষকে সচেতন করাই।”
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বরখাপন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাদিস উদ জামান হাদিস, কলমাকান্দা আলিম মাদ্রাসার শিক্ষক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা জিনাত জাহান বর্ণালী, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান রফিকুজ্জামান খোকন, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ কে এম ওয়াজেদ তালুকদার।