নিজেকে জানো
নেত্রকোনা থেকে হেপী রায়
‘স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল’ এই বিশ্বাসকে সামনে রেখে স্বরমশিয়া ইউনিয়নের ঘিডুয়ারী গ্রামের কিশোর-কিশোরী ক্লাব এর সদস্যরা এ বছর স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে কাজ করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ গ্রামের প্রবীণ নারী-পুরুষ, গর্ভবতী ও নবজাতক, কিশোর-কিশোরী, শিশুসহ সকল শ্রেণীর মানুষ রয়েছে। এই ক্লাব এর সদস্যরা তাদের গ্রামের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক সমস্যা নিয়ে কাজ করছে গত চার বছর ধরে। এর মধ্যে স্বেচ্ছাশ্রমে রাস্তায় মাটি ভরাট, দরিদ্র শিক্ষার্থীকে শিক্ষা উপকরণ দিয়ে সহায়তা, রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা, প্রতিটি বাড়িতে ফলজ বৃক্ষরোপণ, বারোমাসী মরিচ ও বেগুণের চারা বিতরণ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি তারা স্বাস্থ্য বিষয়ক এক কর্র্মশালার আয়োজন করে। কর্মশালার বিষয়বস্তু ছিল কিশোরী স্বাস্থ্য ও বয়ঃসন্ধিকাল। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অভয়পাশায় অবস্থিত সূর্যের হাসি চিহ্নিত ক্লিনিক এর প্যারামেডিক লাকী আক্তার। কর্মশালাটি সঞ্চালনা করেন ক্লাব এর সদস্য আশা আক্তার।
কর্মশালার উদ্যেশ্য ছিল কিশোরী স্বাস্থ্য বিষয়ে জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সাথে জনগোষ্ঠীর কর্মসম্পর্ক তৈরি করা। অনুষ্ঠানে শুধু কিশোরী নয়, গ্রামের প্রবীণ ও গর্ভবতী নারী এবং শিশুরাও উপস্থিত ছিল। শুরুতেই সকল বয়সের স্বাস্থ্য নিয়ে আলোচনা হয়। এরপর কিশোরী স্বাস্থ্য ও বয়ঃসন্ধিকালের মানসিক, শারিরীক ও পুষ্টি বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন আলোচক। এই সময়ে শুধু কিশোর বা কিশোরীকে নয়, অভিভাবক হিসেবে মা-বাবাকে বন্ধুসূলভ আচরণ করার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, “বয়ঃসন্ধিকালীন সময়ে কিশোর-কিশোরীর মানসিক পরিবর্তন আসে। অনেক কিছুই তাদের কাছে নতুন মনে হয়। সঠিক-ভুলের সিদ্ধান্ত তারা নিতে পারেনা। মা-বাবা যদি সেই সময় তাদের সঠিক দিক নির্দেশনা দিতে পারে তবে ভবিষ্যতে তারা কোনো ভুল পথে এগিয়ে যাবে না।”
শারীরিক পরিবর্তনের বিষয়েও আলোচনা হয়। এর সাথে তাদের পুষ্টি জড়িত। কারণ এ সময়ে যদি তারা পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করতে পারে তবে ভবিষ্যতে কোনো জটিল অসুখের সম্ভাবনা থাকবে না। আমিষ, প্রোটিন ও ভিটামিন জাতীয় খাবারসহ প্রচুর পানি খাবার কথাও বলেন তিনি। তাছাড়া, একটা নির্দিষ্ট সময় পরে কিশোরীরা মা হবে। বয়ঃসন্ধিকালীন সময় যদি তারা পুষ্টিকর খাবার খায়, তবে তাদের সন্তানও সুস্থভাবে জন্মাবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা সম্পর্কেও তিনি গুরুত্ব আরোপ করেন আলোচক।
অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে থাকা দু’জন গর্ভবতী নারীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করেন লাকী আক্তার। আলোচনার এক ফাঁকে উপস্থিত অংশগ্রহণকারীদের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন তিনি।
কর্মশালার শেষে প্যারামেডিক লাকী আক্তার “নিজেকে জানো” শিরোনামে ২০টি (বিশ) বইয়ের একটি সেট কিশোরÑকিশোরী ক্লাব এ উপহার দেন। এই বইয়ের বিষয় বস্তু হলোÑনতুন বোধ ও নতুন অনুভূতি, বিয়ে এবং পারিবারিক স্বাস্থ্য, যৌন রোগ ও এইড্স এবং বয়ঃসন্ধিকাল।
গ্রামের কিশোরীদের এই উদ্যোগ শুধুমাত্র কিশোরীদের নয় বরং প্রাপ্ত বয়স্ক নারীরাও স্বাস্থ্য বিষয়ে নানান ধারণা ও পরামর্শ লাভ করতে সক্ষম হন। সামাজিকভাবে সচেতন এসব কিশোরীরা সমাজ উন্নয়নে এভাবে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তাদের উদ্যোগের মাধ্যমে।