তরুণ মনিরের উদ্যোগ
সাতক্ষীরা থেকে চম্পা রানী মল্লিক
আমরা অনেকেই ভাবি যে, প্রত্যেক ছেলেমেয়েদের বুঝি একটি নির্দিষ্ট সময় আছে যে সময়টা তারা পড়াশুনা, ঘোরাফেরা, ও আনন্দের ভেতর থাকবে। কিন্তু ওই সময়েই কেউ না কেউ ভাবছে, কিভাবে আয়ের উৎস তৈরি করা যায়। আর কিভাবেই বা উন্নতির মাধ্যমে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হ্ওয়া যায়। তেমনি একটি ছেলে মনির ইসলাম (২২)। নিজের অদম্য ইচ্ছা ও সাহসের মাধ্যমে উপকূলীয় এলাকায় মনির ইসলাম যেভাবে হলেন তারুণ্যের আইডল।
মনিরের পিতা ছাত্তার তরফদার ও মাতা আকলিমা খাতুন। তারা দুই ভাই ও দুই বোন। মনিরের পিতা তার নিজের ৫ বিঘা জমিতে চিংড়ি চাষ করেন এবং তার মা কিছু হাঁস, মুরগি ও ছাগল পালন করেন। এ থেকেই চলতো তাদের সংসার। বাবা ও মায়ের কাজটিকে তার খুব ভালো লাগতো মনিরের। তাই পড়াশুনার ফাঁকে সময় বের করে তিনি তাদের কাজে সহযোগিতা করতেন। মনির জানান, তাদের সংসারে যখন বড় ধরনের কোন অর্থের প্রয়োজন হতো তখন তার মা হাঁস, মুরগি, বা ছাগল বিক্রি করে সেই সমস্যার সমাধান করতেন। আর তাই মনির প্রায়ই ভাবতো কিভাবে এই কাজটিকে আরো ভালোভাবে করা যায়।
একদিন মনির তার বাবা মার সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয় যে, তিনি তাদের পাশাপাশি থেকে তাদের এই কাজটিকে আরো প্রসারিত করতে চান। মনির ২০১৬ সাল থেকে ধীরে ধীরে তার কার্যক্রম শুরু করতে থাকে। তখন মনির অনার্স প্রথম বর্ষের একজন ছাত্র ছিলো। মনির একজন মেধাবী ছাত্র। তার একটি কোচিং সেন্টারও রয়েছে। যেটা মনির শুরু করেছিল ২০১২ সাল থেকে। বর্তমানে তার কোচিং এর ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ৭০ জন।
মনির প্রথম পর্যায়ে তার কোচিং থেকে উপার্জনকৃত টাকা এবং তার বাবার কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে কখনো হাঁস, কখনো মুরগি, আবার গরু, ছাগল ও ভেড়া কিনে পালন করতে শুরু করেন। তাঁর পালিত এসব প্রাণীর চিকিৎসার জন্য প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তাকে প্রতিমাসে একবার তার বাড়িতে নিয়ে আসার চেষ্টা করতেন।
এরই মাঝে মনির একদিন সরকারিভাবে দক্ষিণ অঞ্চলে প্রাণী সম্পদ উন্নয়ন কোর্সের একটি সুযোগ পায়। যেটা তার পশুপালনকে আরো একধাপ এগিয়ে নিয়ে যায়। তারপর থেকে মনির এদের চিকিৎসা অনেকখানিক নিজেই করে এবং খুব প্রয়োজন ছাড়া প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তাকে ডাকে না।
এরপর মনির কিছুদিনের মধ্যে তার বাড়িতে একটি স্যালো বসানোর সিদ্ধান্ত নেয়। মনিরের পিতা কারণ জানতে চাইলে মনির জানায় পানি যদি মিষ্টি হয় তাহলে লবণ পানির চিংড়ির পরিবর্তে মিষ্টি পানির মাছ চাষের কথা ভাবছেন। কারণ মিষ্টি পানি দিয়ে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করা যাবে পাশাপাশি ঘেরের মধ্যে ঘাস ও লাগানো যাবে। ফলে ছাগল গরু ও ভেড়ার খাদ্য চাহিদা মিটবে। মনিরের কথার যুক্তি দেখে তার পিতা রাজি হলেন এবং কিছুদিনের মধ্যে স্যালো বসানো হলো।
স্যালোর মিষ্টি পানি দিয়ে মনিরের বাবার লবণ পানির চিংড়ি চাষের পরিবর্তে মিষ্টি পানির মাছের চাষ করা শুরু করেন। পাশাপাশি ঘাসও লাগালেন। এভাবে এগিয়ে যায় মনির। পশুপালন এবং মাছ চাষের উপর থেকে গত বছর মনির দেড় লাখ টাকা আয় করেছেন। তারপর থেকে মনির তার কাজটিকে আরো প্রসারিত করেছে। বর্তমানে তার ৫৫টি ছাগল, ২১টি ভেড়া, ২৫টি পায়রা, ১০টি মুরগি, ৬টি হাঁস এবং ৩টি গরু রয়েছে। এছাড়া মিষ্টি পানির মাছের মধ্যে আছে রুই, কাতলা, মৃগেল, কৈ, শৈল, চিংড়ি ও গলদা ইত্যাদি। মনির আশা করছেন আগামীতে তিনি সাড়ে চার লক্ষ টাকা আয় করতে পারবেন। আর এই বিশ্বাসকে টিকিয়ে রেখে এবং কোচিংকে ধরে মনির এগিয়ে যেতে চায় আগামী দিনগুলোতে।
মাত্র ২২ বছরের গ্রামের এক তরুণ যেভাবে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হলেন সেটা তরুণদের জন্য একটি উদাহরণ। মনিরের মত তারুণ্য শক্তিকে কাজে লাগাতে তথা উন্নয়নে যুক্ত হতে আমাদের যুবদের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে।