নোয়াদিয়া ধান-শালিক-নদী-হাওর যুব সংগঠন: একটি সামাজিক স্বপ্ন
নেত্রকোনা থেকে মো. হাবিবুর রহমান বাপ্পী এবং আওলাদ হোসেন রনি
নেত্রকোনা জেলার প্রাচীন জনপদ কেন্দুয়া। কেন্দুয়া উপজেলার নোয়াদিয়া গ্রাম। নোয়াদিয়া গ্রামের নাম সম্পর্কিত একটি মজার ‘মিথ’ আছে। মনে করা হয়, মহুয়ার পালা’র ‘নইদ্যার ঠাকুর’ এর গ্রাম এই নোয়াদিয়া। নোয়াদিয়া গ্রামেই সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে তৈরি হয়েছে একদল স্বপ্নবাজ তরুণদের স্বাপ্নিক সংগঠন ‘নোয়াদিয়া ধান-শালিক-নদী-হাওর’ যুব সংগঠন। সংগঠনের নাম থেকেই বোঝা যায় ‘ধান-শালিক-নদী-হাওর’ মানে প্রকৃতি, সেই প্রকৃতির প্রতি দায়বদ্ধতা থেকেই গড়ে উঠেছে সংগঠনটি।
বিপর্যস্ত প্রাকৃতিক অবস্থা এবং প্রকৃতির প্রতি মানুষের সহিংসতা- এই ব্যাপারটি নোয়াদিয়া গ্রামের যুবকদের ভাবিয়ে তুলে। এই ভাবনা থেকেই তারা যোগাযোগ করেন বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠন ‘বারসিক’র সাথে। বারসিক তাদের সেই উদ্যোগের সাথে একাত্মতা পোষণ করে। শুরু হয় নোয়াদিয়া গ্রামকে কেন্দ্র করে একটি সামাজিক স্বপ্নের বুনিয়াদ।
প্রকৃতির প্রতি দায়বদ্ধতা থেকেই প্রতিষ্ঠার পরপরই সংগঠনটি বৃক্ষরোপণের কাজে হাত দেয়। সে কাজে সফল হয় তারা। সংগঠনের সদস্যদের নজড়ে পরে এলাকায় পাখির পরিমাণ কমে গেছে। পাখির বিচরণ আর এতোটা দৃশ্যমান নয়। নোয়াদিয়া গ্রামেই রয়েছে কিছু বর্ষীয়ান বটগাছ। সেই বটগাছগুলোতে হাড়ি বেঁধে দেন। ফলে আবার গাছে গাছে পাখি ফিরে আসে। পাখির কলকাকলিতে মুখরিত হয় শান্ত-নিবিড় নোয়াদিয়া।
প্রকৃতির উদার আহ্বানে সাড়া দিতেই সংগঠনের সদস্যরা নোয়াদিয়া গ্রামে গড়ে তুলেন ফুলের বাগান। দৃষ্টি নন্দন বিভিন্ন ফুলে এখন সে বাগান শোভাময়। বৃক্ষ মানুষের জীবন। তাই ঔষধি গাছের সংরক্ষণ করার উদ্যোগ নেন। ঔষধি গাছ শিক্ষার্থীদেরকে চেনানোর জন্য সংগঠনের সদস্যরা আয়োজন করেন একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগের। নোয়াদিয়া একতা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরকে নিয়ে কবিরাজের মাধ্যমে ঔষধি গাছ চেনানোর অনুষ্ঠান করেন তারা। ফসলে জৈব বালাইনাশকের ব্যবহারের জন্য গ্রামের কৃষকদের মধ্যে জৈববালাই নাশক নিয়ে আলোচনা করেন। এর একটা ফলাফল ইতিমধ্যেই গ্রামে দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। গ্রামের কৃষির উন্নয়নের জন্য খাল সংস্কার করে খালটিকে স্রোতস্বিনী করে তুলেন। যা ইতিমধ্যেই বেশ প্রশংসিত হয়েছে।
এছাড়াও সংগঠনের সদস্যরা মিলে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করেছেন, করছেন, নবীণ-প্রবীণের সেতুবন্ধনে করছে গল্পের আসর। বিভিন্ন জাতীয় দিবস উদযাপনে কবিতা-কুইজ আর রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন চলছে নিয়মিত। সংগঠনের একটি অফিস ঘর নির্মাণ করে সেখানে গড়ে তুলেছেন একটি পাঠাগার। এবার সবার সহযোগিতায় পাঠাগারটি হয়ে উঠবে ঋদ্ধ। এটাই হবে আমাদের প্রত্যাশা।
এই সমস্ত কর্মকান্ডের মধ্য দিয়ে ‘নোয়াদিয়া ধান-শালিক-নদী-হাওর’ যুব সংগঠন ইতিমধ্যেই গ্রামের মানুষদের মধ্যে এক বিশ্বস্ততার জায়গা তৈরি করেছেন। নোয়াদিয়া গ্রামকে একটি সমৃদ্ধ গ্রামে পরিণত করতে সংগঠনের এই সামাজিক স্বপ্ন আমাদেরকেও ছুঁয়ে যায়। তাঁদের প্রচেষ্টার উত্তোরত্তর সাফল্য অব্যাহত থাকুক।