করোনাকালিন প্রবীণদের নিরাপত্তায় করণীয় শীর্ষক অনলাইন সংলাপ অনুষ্ঠিত
নেত্রকোনা থেকে মো. অহিদুর রহমান:
আজ ২১ জুলাই ২০২০। মঙ্গলবার। নেত্রকোনা সম্মিলিত যুব সমাজের আয়োজনে ও বারসিক’র সহযোগিতায় করোনা মহামারিকালিন সময়ে প্রবীণ জনগোষ্ঠির নিরাপত্তার জন্য করণীয় শীর্ষক এক অনলাইন মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়েছে। সভায় উপস্থিত ছিলেন নেত্রকোনা সমাজকল্যাণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আলাল উদ্দিন, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, নেত্রকোনা প্রেসক্লাবের সম্পাদক শ্যামলেন্দু পাল, হেলপ এইজ বাংলাদেশ প্রতিনিধি বেলায়েত হোসেন, নেত্রকোনা জেলা প্রবীণ হিতৈষী সংঘের ছায়েদুর রহমান, সহাকারী অধ্যাপক নাজমুল কবীর সরকার, আটপাড়া প্রবীণ কল্যাণ কেন্দ্রের আহ্বায়ক সিদ্দিকুর রহমান, কলমাকান্দা থেকে বাবুল চক্রবর্তী, বারসিক’র পরিচালক সৈয়দ আলী বিশ্বাস, আঞ্চলিক সমন্বয়কারী মো. অহিদুর রহমান, নেত্রকোনা জেলা জনসংগঠন সমন্বয় কমিটির সভাপতি সায়েদ আহমেদ খান বাচ্চু, রাজশাহী ও মানিকগঞ্জের আঞ্চলিক সমন্বয়কারী শহিদুল ইসলাম ও বিমল রায়, বারসিক’র সকল স্টাফ, প্রবীণব্যক্তি, যুবক,কিশোরী দলের সদস্যসহ অনেকেই।
আলোচনায় শুধু করোনাকালিন সময়ে নয়; সব সময়ের জন্য প্রবীণব্যক্তিদের স্বাস্থ্য, বিনোদন, সামাজিক ও পারিবারিক নিরাপত্তা, সম্মান, মতামত, মূল্যায়ন, খাদ্য, পুষ্টি, অর্থনৈতিক নিরপত্তার কথা উঠে আসে। সমাজকল্যাণের উপ-পরিচালক আলাল উদ্দিন বলেন, ‘সমাজকল্যাণের কার্যক্রম করোনাকালিন সময়ে বন্ধ নেই। নেত্রকোনা অঞ্চলে ৫১১ জন প্রবীণ জনগোষ্ঠি যারা কঠিন রোগ ও শারীরিক সমস্যায় ক্ষতিগ্রস্ত তাদেরকে সহযোগিতা করা হয়েছে। নেত্রকোনা অঞ্চলে প্রবীণদের তালিকা তৈরিতে বারসিক সহযোগিতা করলে আমাদের কাজটি আরো সহজ হবে।’
পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, ‘প্রবীণরা যাতে করে শারীরিকভাবে সফল থাকতে পারেন ও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী থাকতে পারেন তার জন্য কাজ করতে হবে, গ্রাম ও শহরের প্রবীণের জন্য আলাদা আলাদাভাবে চিন্তা করা উচিত।’ প্রেসক্লাব সম্পাদক শ্যামলেন্দু পাল বলেন, ‘আইন অনেক আছে কিন্তু আমরা যদি আইন না মানি তবে তা কোন কাছে লাগবেনা, ভাতা আনার জন্য প্রবীণরা ঘন্টার পর ব্যাংকে,চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এই বিষয়টি অমানবিক।’
হেলপ এইজের বাংলাদেশ প্রতিনিধি বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘প্রবীণরা অসহায় নয় তাঁরা সমাজের সম্পদ, তাদের জ্ঞানকে, অভিজ্ঞতাকে আমাদের কাজে লাগাতে হবে, গ্রামে গ্রামে প্রবীণ বিনোদন কেন্দ্র ও ক্লাব করে তাঁদেরকে সক্রিয় রাখতে হবে।’ প্রবীণ হিতৈষী সংঘের সাধারণ সম্পাদক ছায়েদুর রহমান বলেন, ‘প্রবীণরা সবসময় নিরাপত্তাহীন, বন্যা, খরা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, শেষ বয়সে এসে রোগে, চিন্তায়, বিনোদনের অভাবে, অবহেলায় দিন কাটে। আমাদের সরকারের উচিত আরো সদয় হওয়া প্রবীণদের প্রতি।’
মতবিনিময় সভায় যে সুপারিশমালা উঠে আসে তা হলো: বয়স্কভাতার পরিমাণ বৃদ্ধি করা, প্রবীণ বীমা চালু করা, হাসপাতালে আলাদা ওয়ার্ড চালু করা, আশ্রয় কেন্দ্রে প্রবীণদের জন্য সুবিধা বাড়ানো, কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন আসলে আগে প্রবীণদেরকে প্রদান করা, প্রবীণদেকে অর্থনৈতিক কাজের সাথে যুক্ত রাখা, বিনোদনের জন্য প্রবীণ বিনোদন কেন্দ্র স্থাপন করা, পরিবারে প্রবীণ সদস্যদের জন্য পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার নিশ্চিত করা, বন্যা ও পাহাড়ি এলাকায় বিশেষ মেডিক্যাল টিম রাখা, পরিবারে প্রবীণদের জন্য প্রবীণবান্ধব আবাসন তৈরি করা ইত্যাদি।
সবশেষে নেত্রকোনা প্রবীণহিতৈষী সংঘের সাধারণ সম্পাদক সায়েদুর রহমান সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে অনলাইন সংলাপের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।