গরমের প্রশান্তি বেলের শরবত
সাতক্ষীরা থেকে নুরুল হুদা
গ্রীষ্মের প্রচণ্ড তাপদাহে মানুষ যখন অতিষ্ট হয়ে উঠেছে তখন গরমের ক্লান্তি দূর করছে এক গ্লাস ঠাণ্ডা বেলের শরবত। সাতক্ষীরা শহরের প্রায় প্রতিটি মোড়ে বিক্রি হচ্ছে এ শরবত। নানা রকম শরবত থাকা সত্বেও বেলের শরবত তুলনামূলক বেশি বিক্রি হচ্ছে।
প্রতি গ্লাস বেলের শরবতে আছে, পাকা বেল, আখের চিনি, বরফ কুচি ও পরিমাণ মত পানি। উপাদানগুলো ব্লেন্ড করে তৈরি হচ্চে ঠাণ্ডা বেলের শরবত। প্রতি গ্লাস শরবতের দাম ২০-২৫ টাকা।
বেল একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ ফল। প্রচুর পরিমাণ শ্বেতসার, ক্যারোটিন, ভিটামিন-বি কমপ্লেক্স, ক্যালসিয়াম ও আয়রন রয়েছে এ ফলটিতে। এছাড়া বেল থায়ামিন, রাইবোফ্লাভিন, ভিটামিন-সি, অক্সালিক এসিড, ম্যালিক এসিড, সাইট্রিক এসিড এবং ঘনীভূত ট্যানিক এসিডের ভালো উৎস। বেল একটি পুষ্টিকর আর উপকারী ফল। কাঁচা পাকা দুটোই সমান উপকারী। কাঁচা বেল ডায়রিয়া ও আমাশায় রোগে ধন্বন্তরী।
এছাড়া পাকা বেল পাকস্থলীর আলসার, পাইলস রোগে উপকারী। এটি শক্তিবর্ধক হিসেবে কাজ করে। বেল অন্ত্রের কৃমিসহ অন্যান্য জীবাণু ধ্বংস করে ডায়রিয়া এবং আমাশয় প্রতিরোধ করে। বেল থেকে পাওয়া বেটাক্যারোটিন রঞ্জক মানবদেহের টিউমার কোষের বৃদ্ধি রোধ করে।
সাতক্ষীরা মসলা ভাণ্ডারের হেকিম মো. আবুল কাশেম বলেন, “বেলের ল্যাক্সিটেভ গুণ কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং আমাশয় রোগে খুব কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে মহিলারা নিয়মিত বেল বা বেলের শরবত খেলে ব্রেস্ট ক্যান্সার ও জরায়ু ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে”। তিনি আরও বলেন, “বেল উপকারী তবে নিয়মিত পাকা বেল খাওয়া উচিত নয়। প্রতিদিন পাকা বেল খেলে স্বাভাবিক স্থিতিস্থাপকতা কমে যায় এবং পেট ফাঁপার সমস্যা হতে পারে। পাকা বেল একবারে বেশি পরিমাণে খাওয়া উচিত নয়। থাইরয়েড রোগী এবং গর্ভবতী মহিলাদের বেল খাওয়া যতটা সম্ভব পরিহার করা ভালো।”
মুক্ত কোষ উইকিপিডিয়ার তথ্য মতে, বেলের বৈজ্ঞানিক নাম-Aegle marmelos Correa (syn. Feronia pellucida Roth, Crataeva marmelos। এটি Rutaceae গোত্রের অন্তর্ভূক্ত।
ইংরেজিতে বেলকে ডাকা হয় Wood Apple কারণ এ ফলের খোসা কাঠের মত শক্ত। বাংলায় ফলটির ব্যাপক কদর দেখে ব্রিটিশরা নাম দিয়েছিলেন Bengal quince।
বেল রুটাসি (Rutaceae) অর্থাৎ লেবু পরিবারের সদস্য। এর সংস্কৃত নাম বিল্ব। বেলের জন্ম ভারতবর্ষে। বেলের বহিরাবরন খুব শক্ত, মসৃণ ও গোলাকার। ফল বিভিন্ন আকৃতির হয়। স্বাভাবিক, মাঝারী ও বড়। ফলের ভিতরে শাঁস ৮-১৫টি কোয়া বা খন্ডে বিভক্ত থাকে। প্রতিটি ভাগে বা খন্ডে চটচটে আঠার সাথে অনেক বীজ লেগে থাকে। কাচা ফলের রঙ সবুজ, পাকলে হলদে হয়ে যায়। পাকা বেলের ভিতরের শাঁসের রঙ হয়ে যায় কমলা। বা হলুদ। পাকা বেল থেকে চমৎকার একটি সুগন্ধ বের হয়। পাকা বেল গাছ থেকে ঝরে পড়ে। গাছ যখন ছোট থাকে তখন তাতে অনেক শক্ত কাঁটা থাকে। গাছ বড় হলে কাঁটা কমে যায়।
বেলের শরবত বেশ সুস্বাদু, পুষ্টিকর ও ক্লান্তিরোধক। বেলের মূল তিতা, জ্বরের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এটি অবশ্য ডায়রিয়া, ডিসপেপসিয়া, বমি ও ফোলা রোধে ব্যবহৃত হয় । এর পাতা জ্বর সহ কাশি, ডায়াবেটিস, অ্যাজমার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
নানামুখি গুণের জন্য বেল যেমন মানবস্বাস্থের উপকারী বন্ধু তেমনি গরমে বেলের শরবত মানুষের ক্লান্তি দূর করে জীবনে আসছে প্রশান্তি।