সরিষা ক্ষেতের মাঠ দিবসে কৃষকের হাসি

মানিকগঞ্জ থেকে মো. ইউসুফ আলী ও গাজী শাহাদত হোসেন
সুজলা সুফলা আমাদের এই সোনার বাংলাদেশ। ষড়ঋতুর এই দেশের চরিত্র আগের মতো নেই। বৈশি^ক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ঋতুচক্রের ছন্দপতন হলেও বর্ষা পরবর্তী কার্তিক মাস থেকেই শুরু হয় স্বল্পমেয়াদী রবিশস্য সরিষার আবাদ। এখনো দেশের অন্যান্য স্থানের মতো মানিকগঞ্জের প্রান্তিক পর্যায়ের স্থানীয় কৃষকেরা লোকায়ত পদ্ধতিতে দেশী সরিষার আবাদ করে থাকেন।


গতকাল মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার বাঙ্গরার চকে বাঙ্গরা কৃষক কৃষাণী সংগঠনের আয়োজনে ও বারসিক’র সহযোগিতায় কৃষক নেতৃত্বে প্রায়োগিক কৃষি গবেষণা প্লটে সরিষা ক্ষেতের মাঠ দিবস পালন করা হয়েছে। মাঠ দিবসে কৃষক সংগঠনের সভাপতি কৃষক মো. আক্কাস মিয়ার নেতৃত্বে সরিষা উত্তোলনে অংশগ্রহণ করেন কৃষক মো. হযরত আলী, তারুণ্যের আলো যুব সংগঠন থেকে মো. রমজান আলী, সেপাল রাজবংশী, বার্থা নারী উন্নয়ন সমিতি থেকে রাহিমা বেগম, জোহরা আক্তার প্রমুখ।


মাঠ দিবসে অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে আসেন বারসিক আঞ্চলিক সমন্বয়কারি বিমল চন্দ্র রায় ,কৃষিবিদ মাসুদুর রহমান, প্রোগ্রাম অফিসার শিমুল কুমার বিশ^াস, হিসাব রক্ষক নিতাই চন্দ্র দাস। এছাড়া মাঠ দিবসে সহায়ক হিসেবে আরো অংশগ্রহণ করেন বারসিক কর্মকর্তা সত্তরঞ্জন সাহা,মো. নজরুল ইসলাম, মুক্তার হোসেন, বিউটি রানী সরকার, শাহিনুর রহমান, সুবির কুমার সরকার, গাজী শাহাদত হোসেন হোসেন, মো.ইউসুফ আলী, আছিয়া আক্তার, রিনা আক্তার, ঋতু রবি দাস, সামায়েল হাসদা, শারমিন আক্তার প্রমুখ।
কৃষক আক্কাস আলী বলেন, ‘আমরা স্থানীয় জাতের সরিষা লোকায়তভাবেই চাষ করেছি। এখানে জৈব সার ব্যাবহার করা হয়েছে। রাসায়নিক সার ব্যবহৃত না হলেও ফলন খুব খারাপ হয়নি। সরিষার দানা বেশ বড় এবং অন্য জমির চেয়ে গুণেমানে এই সরিষা বেশ ভালো।’


আরো উল্লেখ্য যে, সরিষা শুধু তেল নয়, সরিষা সরাসরি খাওয়াতে রয়েছে নানান উপকারিতা। সরিষার সস, ভর্তা কিংবা যেভাবেই খাওয়া হোক, এর থেকে মিলবে আঁশ, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়ামসহ আরও পুষ্টিগুণ। তবে সবচেয়ে বেশি যেটা পাওয়া যায় তা হল ক্যালসিয়াম। ‘ইউএস ডিপার্টমেন্ট অফ এগ্রিকালচার’য়ের তথ্যানুসারে এক চা-চামচ সরিষায় থাকে প্রায় ৪ মি.লি.গ্রাম ক্যালসিয়াম। তাই খাবারে দু’তিন চামচ সরিষা ভর্তা যোগ করতে পারলে মিটবে দেহের প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়ামের চাহিদা। যদিও ‘মার্কিন রেকোমেন্ডেড ডায়েটারি অ্যালাওয়েন্স’ অনুসারে প্রতিজনের প্রয়োজন ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২শ’ মি.লি. গ্রাম ক্যালসিয়াম। তবে দুগ্ধজাত খাবারের তুলনায় সস কিংবা আচার ও চাটনি হিসেবে সরিষা খাওয়া ক্যালসিয়াম প্রাপ্তির ক্ষেত্রে গুরুত্ব বেশি। পুষ্টিবিজ্ঞানের তথ্যানুসারে, ক্যালসিয়ামের অভাবে শুধু হাড় দুর্বল নয়, নানান রকম শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন-অবসাদ, ক্লান্তি, স্মৃতি হারানো। তাই সরিষা ভর্তা প্রতিদিন খেতে পারলে অতিরিক্ত উপকার অবশ্যই মিলবে। আর সবথেকে ভালো উপকার মিলবে শরীরের ‘পিএইচ’ ভারসাম্যে।‘পিএইচ’ অর্থাৎ দেহের স্বাভাবিক অ্যাসিডের ভারসাম্যে গোলমাল বাঁধলে নানান রকম অসুখ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।


‘বিএমজে ওপেন জার্নাল’য়ে প্রকাশিত কানাডার ‘ইউনিভার্সিটি অফ কালগারি’র করা গবেষণা অনুসারে, দেহের স্বাভাববিক অ্যাসিডের ভারসাম্যেহীনতার কারণে বৃক্কে (কিডনি) পাথর, অন্ত্রের সমস্যা হয়। আর খাদ্যাভ্যাসে ক্যালসিয়াম যোগ করতে পারলে এসব সমস্যা থেকে দূরে থাকা সম্ভব। সরিষায় আরও আছে ফসফরাস, যা ক্যালসিয়ামের মতোই শরীরের ‘পিএইচ’য়ের মাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করে। হাড়ের শক্তি বৃদ্ধি হয় হাড় সুস্থ সবল রাখতে যে ক্যালসিয়াম প্রয়োজন একথা সবারই জানা। ‘থেরাপেটিক অ্যান্ড ক্লিনিকাল রিস্ক ম্যানেজমেন্ট’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, দেহের ৯৯ ভাগ ক্যালসিয়ামের উপস্থিতি পাওয়া যায় হাড় ও দাঁতে। বাকিটুকু সংরক্ষিত অবস্থায় থাকে ‘প্লাজমাতে, অর্থাৎ রক্তের হলুদাভ বর্ণের জলীয় অংশে। এখন এই প্লাজমা’র ক্যালসিয়াম ও হাড়ের ক্যালসিয়ামের মধ্যে ভারসাম্য বজায় না থাকলে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় তাকে বলে ‘রিজোর্পশন’। এই প্রক্রিয়াতে হাড় থেকে ক্যালসিয়াম প্লাজমাতে স্থানান্তরিত করে দেহ। আর এভাবে অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম স্থানান্তর করতে থাকলে হাড় হয়ে যায় দুর্বল। আর এই জন্যই প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম গ্রহণের চেষ্টা করতে হবে। যার একটা সহজ উপায় হল সরিষা। হৃদযন্ত্রের পেশির সুস্থতায়-‘সার্কুলেশন রিসার্চ’-এ প্রকাশিত ‘ইউনিভার্সিটি অফ ম্যানচেস্টার’য়ের করা গবেষণায় দেখা গেছে, সুস্থ হৃদযন্ত্রের জন্য প্রয়োজন এই খনিজ উপাদান। কারণ ক্যালসিয়াম সার্বিকভাবে হৃদযন্ত্রের পেশি সুরক্ষার মাধ্যমে এর সুষ্ঠু কার্যাবলি নিশ্চিত করে।

happy wheels 2

Comments