অর্ধ সহস্র আধেয় এবং বারসিকনিউজ
সিলভানুস লামিন
৭ জুলাই ২০১৫। ‘বাংলার ফল কাউফল’ শিরোনামের লেখাটি দিয়েই আনুষ্ঠানিকভাবে বারসিকনিউজ এর যাত্রা শুরু হয়। এই অনলাইনটিতে প্রথম যে লেখাটি আপলোড করা হয়েছে সেটি বারসিক’র কোন নিয়মিত কর্মকর্তা বা প্রতিনিধির লেখা নয়; পিরোজপুরের বাসিন্দা দেবদাস মজুমদারের লেখা এটি। এর মাধ্যমে বারসিক একটি বার্তা দিতে চেয়েছে যে, এই অনলাইনটি বারসিক’র একার সম্পত্তি নয়; এটি সবার সম্পত্তি। সবার সম্পত্তি বলেই এ অনলাইনটিতে সবাই লিখেছেন। সুনামগঞ্জ থেকে লিখেন শামস শামীম, কিশোরগঞ্জ থেকে টিটো দাস, রাজশাহী থেকে অসীম কুমার, মিজানুর রহমান, পাবনা থেকে ইকবাল কবির রঞ্জু, বকুল রহমান, মানিকগঞ্জ থেকে লিটন, মো. জাকির হোসেন, সাতক্ষীরা থেকে বরুণ ব্যানার্জিসহ আরও অনেক এলাকার লেখক ও সাংবাদিক লিখেন এই অনলাইনটিতে। এছাড়া বারসিক’র বিভিন্ন এলাকার প্রতিনিধিরাও নিয়মিত এই অনলাইনে লিখেন। তাদের সবার সম্মিলিত লেখার সমন্বয়ে মাত্র একবছর সময়ের মধ্যেই এই অনলাইনটিতে ৫০০শ’টি সংবাদ ও ফিচারধর্মী লেখা ছাড়িয়ে গেছে। হাটি পা পা করে শুরু হওয়া এই অনলাইন পোর্টাল আজ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের কাছে উন্নয়নের বার্তা ছড়িয়ে দিতে পেরেছে। এটি সম্ভব হয়েছে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা, আন্তরিকতা ও নিবেদিতপ্রাণ মানসিকতা ও মনোভাবের কারণেই। বারসিকনিউজ এর পক্ষ থেকে আমি সবাইকে অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানাই। আমি আশবাদী যে, আগামী দিনগুলোতেও সবাই এই অনলাইনে লিখবেন, নিজেদের চিন্তা, ভাবনা, ভালো উদ্যোগগুলো সবার সাথে সহভাগিতা করবেন।
আমরা যদি একটু বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করি তাহলে দেখতে পাবো যে, বারসিকনিউজ-এ নেতিবাচক কোন সংবাদ ও ফিচারধর্মী লেখা নেই। ইতিবাচকতাকে পুঁজি করেই এই অনলাইনের সবগুলো লেখা তৈরি হয়েছে। দেশে ‘হার্ডনিউজ’ ছাড়াও অনেকগুলো ‘সফটনিউজ’ রয়েছে। কিন্তু আমাদের নিয়মিত দৈনিক পত্রিকা ও ইলেক্ট্রনিকস মাধ্যমগুলোতে আমরা নেতিবাচক সংবাদে ঠাসা হতে দেখেছি। পত্রিকা খুললে বা অনলাইনগুলোতে ঢুঁ মারলেই প্রথমেই নেতিবাচক সংবাদ দিয়ে আমাদেরকে স্বাগত জানানো হয়। খুন-খারাবি, জমি দখল, ধর্ষণ, প্রতারণা, লুট, ডাকাতি, দুর্ঘটনার সংবাদগুলো দেখে দেখে আমাদের মানসপট নেতিবাচকতায় ভোঁতা হয়েগেছে। প্রচলিত দৈনিক বা অনলাইনগুলোতে ইতিবাচক সংবাদ অবশ্যই আছে তবে সংখ্যায় অনেক কম। এসব সংবাদ কদাচিৎ ভালো ‘ট্রিটমেন্ট’ পায়। তবে বারসিকনিউজ-এ আমরা সবসময়ই ইতিবাচক সংবাদগুলোকে প্রাধান্য দিই। বস্তুত, ইতিবাচক সংবাদ ও ফিচারগুলোই এই অনলাইনের ভিত্তি। তাই সাংবাদিকতার ভাষায় যদি বলি, বারসিকনিউজ হচ্ছে ‘উন্নয়ন সাংবাদিকতা’র ‘ক্ষেত্র’ বা ‘প্লাটফরম’ যেখানে ‘উন্নয়ন’ বিষয়টি গুরুত্ব পায় বেশি। বিগত এক বছরের অভিজ্ঞতায় আমরা দেখেছি, আমাদের দেশে নেতিবাচক সংবাদের চেয়ে ইতিবাচক অনেকগুলো সংবাদ রয়েছে। এই এক বছরের মধ্যেই বারসিকনিউজ-এ ৫শ’র অধিক ইতিবাচক সংবাদ ও ফিচার প্রকাশ হওয়ার বিষয়টি প্রমাণ করেছে ইতিবাচক সংবাদের কোন ঘাটতি নেই এদেশে।তবে এসব সংবাদগুলোকে দেখার চোখ ও গন্ধ শোঁকার নাক (Nose for news) থাকতে হবে!
বারসিকনিউজ-এর আরেকটি বৈশিষ্ট্য নিশ্চয় সবার কাছে প্রকাশিত হয়েছে বলে আমি মনে করি। আমরা দাবি করতেই পারি যে, বাংলাদেশে এটিই একমাত্র অনলাইন যেখানে শুধুমাত্র প্রাণ, প্রকৃতি, পরিবেশ, জলবায়ু অভিযোজন, প্রশমন, সংস্কৃতি, উন্নয়ন উদ্যোগ, ব্যক্তি সাফল্য বিষয়ক সংবাদ ও ফিচার রয়েছে। প্রাণ, প্রকৃতি, পরিবেশ, জনউদ্যোগ, ব্যক্তি উদ্যোগ ও স্থায়িত্বশীল উন্নয়নসহ বিভিন্ন ইতিবাচক বিষয়ের সংবাদ ও ফিচার সংগ্রহ ও প্রকাশের মাধ্যমে আমরা প্রমাণ করতে চাই যে, ‘ছোট নামগুলোও সংবাদের উপাদান’ হতে পারে। প্রচলিত সাংবাদিকতার উপাদানের মধ্যে একটি উপাদান হচ্ছে ’Big names make news’’। আমাদের এই অনলাইনের মাধ্যমে আমরা প্রমাণ করতে পেরেছি যে, ‘ছোট ছোট নামগুলোও সংবাদের উপাদান হতে পারে’। এই অনলাইনে এ পর্যন্ত প্রকাশিত যতগুলো সফলতা কাহিনী, ব্যক্তি ও জনউদ্যোগ, প্রাণ ও প্রকৃতিকে ভালোবাসার শপথ কিংবা এই পৃথিবীর প্রতিটি প্রাণ ও সৃষ্টিকে রক্ষা করার উদ্যোগ, সামাজিক সমস্যা সমাধানে যুবদের সক্রিয় ও দায়িত্বশীল উদ্যোগগুলো কোন ‘বড় নামধারী’ মানুষ করেননি; করেছেন ছোট ছোট নামগুলো; তাঁরা কেউ হয়তো প্রত্যন্ত অঞ্চলের কৃষক, জেলে, যুবক, শিক্ষক, আদিবাসী, নারী (আমাদের দৃষ্টিতে পৃথিবীতে সবাই সমান; কাউকে বড় বা ছোট অভিহিত করে শ্রেণীকরণ করার কোন অভিপ্রায় আমাদের নেই)। এভাবে সবাইকে সমানভাবে গুরুত্ব দিয়েই বারসিকনিউজ এগিয়ে যেতে চায়।
বারসিকনিউজ মাত্র যাত্রা শুরু করেছে। সফলতার শিখরে পৌছানোর জন্য এখনও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। এই বন্ধুর ও কন্টকাকীর্ণ পথ পাড়ি দেওয়ার জন্য বারসিকনিউজ-এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের একার পক্ষে কোনদিনও সম্ভব নয়; প্রয়োজন সবার সহযোগিতা ও সহচার্যতা। আপনাদের সবার সহযোগিতা ও আন্তরিক অবদানের মাধ্যমে আমরা এই অনলাইনকে আরও সামনে নিয়ে যেতে চাই, আরও বেশি উন্নয়নমূলক সংবাদ ও ফিচার দিয়ে তাকে সজ্জিত করতে চাই। যাতে করে এই এসব সংবাদ ও ফিচারের বার্তা পেয়ে অন্যরাও উৎসাহিত হয় নিজেদের উন্নয়নে আত্মনিয়োগ করার! আমরা এই অনলাইনকে আরও অনেকের কাছে পৌছাতে চাই, এই অনলাইনে প্রকাশিত প্রতিটি আধেয় সবার দ্বারে পৌছাতে চাই। যাতে সবাই এই অনলাইনের ইতিবাচক বার্তা পেয়ে উৎসাহিত হন, প্রেরণা পান। আশা করি বরাবরের মতো আপনারা সহযোগিতার হাত বাড়াবেন সতত।