সব কিছুই করছি মনের তাগিদে
কলমাকান্দা, নেত্রকোনা থেকে গুঞ্জন রেমা
গ্রামের নাম উলুকান্ডা। কলমাকান্দা উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের পূর্বের এই গ্রামেই বসবাস আলী হোসেনের। তিনি পেশায় একজন স্কুল শিক্ষক। শিক্ষকতার জীবনের খুবই গৎবাঁধা জীবনের সাথেই তাল মিলিয়ে তিনি গড়ে তুলেছেন একটি যৌথ খামার বা বাগানবাড়ি যেখানে তিনি গড়ে তুলেছেল ফল আর সবজির বাগানসহ নানান বৃক্ষের সমাহার। যেই বাগান বাড়িতে রয়েছে প্রাণ আর প্রকৃতির মিলনমেলা। এই কাজের মাধ্যমে একদিক থেকে তার আয়ের নতুন পথ যেমন সুগম হয়েছে অন্যদিকে তার দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্নও বাস্তবায়ন হয়েছে। তিনি এখন এই এলাকার একজন দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী ব্যক্তিত্ব। তিনি বলেন, “শিক্ষকতার পাশাপাশি মনের মত একটি বাগানবাড়ি করার একটি স্বপ্ন ছিল আমার। আর এ জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি। প্রতিদিন ভোর থেকে সকাল ৯ পর্যন্ত বাগানে কাজ করি পরে স্কুলে চলে যাই আবার স্কুল থেকে এসেই কাজে লেগে যাই। এভাবেই তিলতিল করে গড়ে তুলেছি আজকের এই ফলদ বাড়ি”।
২০১২ সালে পুকুরসহ ৫৬ শতাংশ জায়গায় গড়ে তোলেন ফলের বাগানসহ ভিটাবাড়ি। ২০১৩ সালে ভিটার চারপাশে রোপণ করেন ৩০০টি এলাচী লেবুর চারা। সাথী ফসল হিসেবে রোপণ করেন পেঁপে। ২০১৪ সালে প্রথম ফল আসে। তারপর ২০১৫ সালে ৭০টি গাছে ফল আসে সেখান থেকে প্রথমবারের মত ১০ হাজার টাকায় লেবু বিক্রি করেন। তারপর ২০১৬ সালে সর্বমোট ৮০ হাজার টাকার লেবু বিক্রি করেন বলে জানান।
লেবু বাগানের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, “প্রথমে কমলার বাগান করার চিন্তা করি কিন্তু অনেকে আমাকে লেবু বাগান করার জন্য পরামর্শ দেন। বাজারে গিয়ে লেবু ও কমলার বাজার দর যাচাই করে দেখি লেবুর দামই বেশি। তাছাড়া কমলা বাতাসে ঝরে পড়ে কিন্তু লেবু বাতাসে ঝরে পড়ে না এমনকি কোন প্রকার বিষ প্রয়োগ করতে হয় লেবু চাষ করতে।”এককথায় সবার যুক্তি ও পরামর্শে গড়ে উঠেছে এই লেবুর বাগান। এখন আলী হোসেন লেবু চাষে সফল হয়েছেন।
ভিটায় লেবুর পাশে রোপণ করেছেন পেঁপে। ২০১৩ সালে ৩০ হাজার টাকার পেঁপে বিক্রি করতে পেরেছেন। অনেক পেঁপে গাছ বন্যার পানিতে মরে গেছে। তারপরও শুকনো মৌসুমে আবার ফলের আশা করছেন। ভিটার মাঝখানে ঘর বাদে সবখানেই সবজি আবাদ করেন। গত বছর বেগুন বিক্রি করেছেন প্রায় ৫০ হাজার টাকার। লাউ বিক্রি করেছেন ৩০ হাজার টাকার। এভাবে কৃষির উপর নির্ভর করেই তিনি বাঁচতে চান। দেখতে চান নিজের বাড়িটিকে শাকসবজি ও ফলের বাগানরূপে। তিনি জানান, তার বাগানে মোট ১৭টি জাতের ফলের গাছ আছে। তার ইচ্ছা আছে তার বাড়িতে মোট ২২ জাতের ফলের গাছ রোপণ করতে। যা তার সংসারের চাহিদা মিটিয়ে আশপাশের লোকদের চাহিদাও মিটাতে পারবে।
ফলের গাছে ভরা এই বাড়িটিতে কলা গাছের সারিও লক্ষ্য করা যায়। সেই কলার সারি থেকে এবার বিক্রি করতে পেরেছেন প্রায় ১৫ হাজার টাকার কলা। গত বছর ২০১৫ সালে ৫৩টি মালতা ও ৫টি কমলার চারা রোপণ করেছেন। এভাবে ভিটার চারপাশে সারি সারি করে কলা, লেব,ু আম, পেঁপে, কালো মরিচ ও মালতা চারা আর এর মাঝ খানে বিভিন্ন সবজি শোভা পাচ্ছে আলী হোসেনের বাড়িতে।
বর্তমানে আলী হোসেন লেবুর বাগানটি আরো সম্প্রসারিত করার জন্য চারা করে বিক্রি করার জন্যও উদ্যোগ নিয়েছেন। এতোমধ্যে ২৫০০টি চারা তুলেছেন নার্সারিতে। পাশাপাশি আম কাঁঠালের চারাও করছেন। তার নার্সারি করারও একটি পরিকল্পনা আছে। যার জন্য একটি জমি তৈরি করছেন। সেখানে বাণিজ্যিক আকারে বিভিন্ন জাতের ফলের নার্সারি করবেন। ২ হাজারটি নারিকেল কিনেছেন নার্সারিতে চারা করার জন্য। এবার সুপারিও কিনবেন নার্সারি জন্য। তিনি বিভিন্ন জাতের ৪৩টি আমের চারা লাগিয়েছেন।
তার আবাদী জমি আছে দেড় একরের মত। সেই জমিতে থেকে যে ধান উৎপাদন করেন তা দিয়ে সারাবছরের খোরাক চলে। দুই ছেলে দুই মেয়ে নিয়ে তার সংসার সবাই লেখাপড়া করছে। তাদের খরচ চালাতে গিয়ে অনেক সময় সমস্যা হচ্ছে। তারপরও সব কিছু খুবই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন অবিরত।
একটি পরিকল্পিত, সুসজ্জিত, গোছালো, ফলদ গাছগাছালীর সমারোহে ভরপুর আলী হোসেনের বাড়ি। সব কিছুই করছেন মনের তাগিদ থেকে, গাছগাছালিকে ভালোবেসে। গাছের অন্তরালে নিজেকে সার্বক্ষণিক আবিষ্কার করতে চান এই কর্মঠ উদ্যমী ব্যক্তিটি। অলসতার সব গ্লানি কাটিয়ে সফল হতে চান, হতে চান একজন বৃক্ষপ্রেমী মানুষ। এটাই তার আশা-প্রত্যাশা ।