অবহেলিত ডাক যোগাযোগ
মানিকগঞ্জ থেকে মো. জাকির হোসেন রাজু
একসময়ের প্রধান যোগাযোগ ব্যবস্থা ডাক যোগাযোগ বর্তমান সময়ে এসে সরকারের অবহেলার বস্তুতে রূপান্তরিত হয়েছে। যে ডাক ছিল এস সময় গ্রাম-গঞ্জ হতে শহর-বন্দর পর্যন্ত সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের বার্তা আদান-প্রদানের একমাত্র মাধ্যম। ব্যাপক প্রযুক্তিক উন্নতির কারণে প্রবল অবহেলা আর অব্যবস্থাপনায় তা এখন অস্তিত্বের শেষ প্রান্তে। ইন্টারনেট, মোবাইল, বিকাশসহ নানান প্রযুক্তির উৎকর্ষ ও ব্যবহার বৃদ্ধির সাথে সাথেই এগুলোর আবেদন মানুষের কাছে কমে গেছে। তাই আজ চিঠি লেখার মানুষ খুব কমই পাওয়া যায় কিংবা চিঠি পাওয়ার অধীর অপেক্ষারত কোন পিতা, মাতা, বন্ধু বা প্রেমিক ও প্রেমিকা দেখা মেলা ভার! কেননা মূহুর্তের মধ্যেই এখন সব বার্তা প্রেরণ করা যায় প্রাপকের কাছে।
মানিকগঞ্জ শহরের অতি নিকটবর্তী বেতিলা ডাকঘরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ডাকঘরটি ভেঙেচুরে ব্যবহারের অযোগ্য হয়েছে অনেক আগেই। এখন ডাকঘরটির অবস্থা ভেঙে চূড়ান্ত পর্যায়ে। ডাকঘরটির বেশিরভাগ অংশই ভেঙে পড়ে গেছে। অবশিষ্ট যে অংশটুকু আছে- আশেপাশের বাসিন্দারা তা গৃহস্থালীর কাজে ব্যবহার করছে। এমনকি পোস্ট বক্সটি পর্যন্তও উধাও হয়ে গেছে।
এ ব্যাপারে মঞ্জু গোস্বামীর সাথে কথা হলে জানান, “ডাকঘরটির বেহাল দশা আরো অনেক আগেই। ঝুঁকি থাকা স্বত্ত্বেও এতোদিন সেখানে বসে নিজের দায়িত্ব পালন করেছি। কিন্তু ঘরটির বর্তমান অবস্থা এখন এমন দাঁড়িয়েছে যে, যেকোন সময় ভেঙে পড়তে পারে। তাই আমি বাধ্য হয়ে বাড়িতে বসে দাপ্তরিক কাজ সম্পাদন করছি।’ উর্ধতন কর্মকর্তাকে এ ব্যাপারে অবহিত করা হয়েছেক কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে যিনি আছেন উনি অন্য জেলা থেকে বদলি হয়ে এসেছেন। তাকে এ ব্যাপারে অবহিত করা হয়নি। কিন্তু আগে যিনি দায়িত্বে ছিলেন তিনি একবার এসে পরিদর্শন করে গেলেও কোন প্রতিকার পাওয়া যায়নি।”
মানিকগঞ্জের বেতিলা ডাকঘরসহ বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রান্তের ডাকঘরগুলো আজ প্রায় অকেজো হয়ে পড়েছে সংস্কারের অভাবে। প্রযুক্তির উৎকর্ষের কারণে ঐতিহ্যবাহী ডাকঘরের গুরুত্ব দিনকে দিন মানুষ ভুলে গেছে। অথচ একসময় এই ডাকঘরের মাধ্যমে তাদের দূর-দূরান্তের আত্মীয়স্বজন, শুভাকাঙ্খী, বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করতো। বাসার সামনে কোন পিয়নের আনাগোনা দেখলেই মনের ভেতরে একটা প্রত্যাশা জাগ্রত হয় যে কেউ হয়তো চিঠি পাঠিয়েছেন। বাড়ির অনেকদূর থেকে পড়াশোনা করলে পিতা-মাতার খোঁজ কিংবা নিজের খরব দেওয়ার জন্য সহজলভ্য ডাকযোগাযোগকে ব্যবহার করা হতো। পিতামাতারা ডাকযোগাযোগের (মনি অর্ডার) মাধ্যমেই টাকা পাঠাতো বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজে পড়–য়া সন্তানের জন্য! আজ এগুলো প্রায় ইতিহাসে পরিণত হয়েছে।
আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রয়োজনে ডাকঘরগুলো সংস্কার করতে হবে। ডাকযোগাযোগের আবেদন তুলে ধরতে হবে সবার কাছে। এছাড়া এই ডাকযোগাযোগের কাজের সাথে যারা জড়িত তাদের জীবিকাকে বাঁচানোর উদ্যোগ নিতে হবে।
ছবিগুলো সংগৃহীত