নিজেদের প্রয়োজনেই আমাদের পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য রক্ষা করতে হবে
মানিকগঞ্জ থেকে রাশেদা আক্তার
‘আমরা প্রকৃতির সমাধানের অংশ’ প্রতিপাদ্য বিষয়কে সামনে রেখে গতকাল বিশ^ জীববৈচিত্র্য দিবস উপলক্ষে বারসিক’র আয়োজনে অনলাইন সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় মানিকগঞ্জ সদর, সিংগাইর, হরিরামপুর ও ঘিওর উপজেলার যুব, সমাজকর্মী, কৃষক ও বারসিক কর্মীরা অংশগ্রহণ করেন। সমাজকর্মী ইকবাল হোসেন কচি এর সভাপতিত্বে দিবসের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বারসিক’র আঞ্চলিক সমন্বয়কারী বিমল চন্দ্র রায়। সভায় অংশগ্রহণকারীরা দিবসটি পালনের মধ্য দিয়ে নদী, পাখি, জীববৈচিত্র্য ও প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষার দাবি জানান।
ছাত্র ও যুব কল্যাণ উন্নয়ন সংঘ (বড় কালিয়াকৈর) সভাপতি শাশীম বলেন, ‘আমাদের গ্রামের পাশ দিয়ে নূরানী গঙ্গা নদী বয়ে গেছে। ছোট সময় আমরা চৈত্র মাসেও অথৈ পানি থাকছে। আমরা গোছল করছি। গরু ঝাপাইছে। সারাবছর নদীতে পানি থাকছে। এখন নদীতে পানি নাই। এই নদী খনন করা প্রয়োজন। আমরা এই নদী খননের দাবি জানাচ্ছি।’সোলাই রাজবংশী পাড়ার হারান রাজবংশী বলেন, ‘এখন নদীতে পানি নাই। পানি না থাকার কারণে নদীতে মাছ ধরা যায় না। নদী শুকিয়ে যাওয়ায় নদীর পানির নীচের অনেক প্রাণি, পোকা, মাকড় মরে গেছে। এগুলো রক্ষা করা প্রয়োজন।’
জেলা কৃষি উন্নয়ন কমিটির সেক্রেটারী ঈমান আলী (বায়রা) বলেন, ‘আমি একজন কৃষক। কৃষি কাজে জৈব সার ব্যবহার করি। রাসায়নিক সার ব্যবহার করলে জমিতে থাকা অনেক কীটপতঙ্গ মারা যায়। জৈবসার ব্যবহার করলে জমির উর্বরতা যেমন বাড়ে তেমনি পরিবেশের কোন ক্ষতি হয় না। আমরা পরিবেশ রক্ষায় প্রতিবছর বারসিক’র সহযোগিতায় বৃক্ষ রোপণ করে থাকি। এখন বড় বড় গাছ কমে গেছে। যার ফলে বজ্রপাতে অনেক লোক মারা যায়। আমরা তাল ও খেজুরের বীজ লাগাইছি। এখনই সময় গাছ লাগানোর। সবাই আমরা বড় বড় গাছ লাগাবো।’
হরিরামপুর যুব সংগঠনের সভাপতি মীর নাদিম বলেন, ‘আজ জীববৈচিত্র্য দিবস। আমরা নদী পাড়ের মানুষ। নদীতে অনেক রকম প্রাণি থাকে। সেগুলো রক্ষায় আমাদের কাজ করা উচিত। আমরা নদীর পাড়ের দূষণ রোধে পলিথিন ও অন্যান্য ময়লা পরিষ্কার করেছি। বারসিক’র সহযোগিতায় প্রতিবছর আমরা গাছ লাগাই। এবারও আমরা গাছ লাগাবো। জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সকলে একসাথে কাজ করা প্রয়োজন।’ তারুণ্য শিক্ষার্থী সংগঠনের সভাপতি (চরমত্ত) মো: শরিফ হোসেন বলেন, ‘আমি একজন শিক্ষার্থী। বারসিক’র জৈব কৃষি কাজ দেখে আমি উদ্বুদ্ধ হই। কৃষি কাজ শুরু করি। জৈবসার বাড়িতে তৈরি করে জমিতে দেই। পরিবেশ রক্ষায় কাজ করি। গাছ লাগাই। আমাদের কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের মকিমপুর গ্রামে নতুন রাস্তা হয়েছে। আমরা সেখানে গাছ রোপণ করতে চাই। এজন্য বারসিক’র সহযোগিতা কামনা করছি যাতে কিছু গাছ দিয়ে আমাদের সহযোগিদা করেন।’
রুমি আক্তার বলেন, ‘আমরা কারণে অকারণে অনেক গাছ কেটে ফেলছি। আমার বাড়িতে ঘর দেওয়ার সময় দুইটি গাছ কেটে ফেলতে চায়। আমি নিষেধ করি। পরে গাছ দুইটি না কেটেই ঘর দেওয়া হয়েছে। গাছ দুইটি এখনো আছে। তাই আমরা যদি একটু সচেতন হই তাহলেই আমরা পরবেশকে রক্ষা করতে পারি।’এ্যাডভোকেট দীপক কুমার ঘোষ বলেন, ‘পরিবেশ রক্ষায় সরকার আইন করেছে। পরিবেশ রক্ষায় কাজ করছে। আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে। সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। জীববৈচিত্র্য আজ হুমকির মুখে। আজকের এই দিনে এমন একটি দিবস পালন করার জন্য বারসিককে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এখানে বক্তারা যার যার এলাকার সমস্যা তুলে ধরেছেন। এই সমস্যা সমাধানে সকলে একসাথে কাজ করতে হবে। তবেই আমাদের জীববৈচিত্র্য রক্ষা পাবে।’
সমাজকর্মী ইকবাল হোসেন কচি (সভাপতি) বলেন, ‘আজ বিশ^ জীববৈচিত্র্য দিবস। আমরা সবাই এখানে অনেক ভালো ভালো কথা বললাম। অথচ এই আমরাই বিভিন্নভাবে পরিবেশ দূষণ করছি। বাজার থেকে পলিথিনের ব্যাগে বাজার করছি। সেই পলিথিন যেখানে সেখানে ফেলছি। তাই আগে আমাদের নিজেদের সচেতন হতে হবে। শহরের খাল পরিষ্কার করা হয়। কিন্তু হোটেলের বর্জ্য এনে খালে ফেলছে তার কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়না। এগুলো দেখা দরকার। সকলে মিলে একসাথে কাজ করতে হবে। আমাদের নিজেদের প্রয়োজনেই আমাদের পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য রক্ষা করতে হবে।’প্রকৃতি আমাদের, আমরা প্রকৃতির। আমাদের বেচে থাকার জন্য আমরা প্রকৃতির উপর উতোপ্রতোভাবে নির্ভরশীল। আমরা বিভিন্ন ভাবে প্রকৃতির উপর নির্দয় আচরণ করছি। প্রকৃতিকে বিরূপ আচরণ করতে বাধ্য করছি। তাই আর নয় প্রকৃতির উপর নির্যাতন। আসুন জীববৈচিত্র্য রক্ষায় আমরা হই সহযাত্রী।