সবার জন্য পানি
মানিকগঞ্জ থেকে রাশেদা আক্তার
“কাউকে পেছনে ফেলে নয়, সবার জন্য পানি” প্রতিপাদ্য বিষয়কে সামনে রেখে সম্প্রতি ধলেশ্বরী নদী বাঁচাও আন্দোলন, মানিকগঞ্জ এর আয়োজনে এবং বারসিক এর সহযোগিতায় বিশ্ব পানি দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা ও সরকারের গৃহীত উদ্যোগের প্রতি সংহতি মানববন্ধন করা হয়েছে।
২২ মার্চ বিশ্ব পানি দিবস। ১৯৯৩ সালে জাতিসংঘের সাধারণ সভায় ২২ মার্চ বিশ্ব পানি দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ১৯৯২ সালে ব্রাজিলের রিও ডি জেনেরোতে জাতিসংঘ পরিবেশ ও উন্নয়ন সম্মেলনের এজেন্ডা ২১-এ প্রথম পানি দিবস পালনের আনুষ্ঠানিক প্রস্তাবটি উত্থাপিত হয়। ১৯৯৩ সালে প্রথম বিশ্বে পানি দিবস পালিত হয়।
দিবসকে কেন্দ্র করে ধলেশ্বরী নদী বাঁচাও আন্দোলন, মানিকগঞ্জ এর আহবায়ক আজহারুল ইসলাম আরজু এর সভাপতিত্বে বারসিক শহর কার্যালয়ে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। আলোচনা সভায় বক্তারা ধলেশ্বরী নদীসহ সকল নদী দখল ও দূষণমুক্ত করার দাবি জানান। সভায় ধলেশ্বরী নদীর তীরবর্তী জাগীর, কৃষ্ণপুর, বায়রা, বেতিলা-মিতরা ইউনিয়নের ৪০ জন স্থানীয় এলাকাবাসী অংশগ্রহণ করেন।
আজহারুল ইসলাম আরজু বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে ধলেশ্বরী নদী বাঁচাও আন্দোলন করে যাচ্ছি। সরকার ধলেশ্বরী নদী খননের জন্য ১০০ কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দ দিয়েছে। আমরা সরকারের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছি। এখন কথা হচ্ছে এই নদী খননের কাজ যেন স্বচ্ছ হয় এবং খুব দ্রুত খননের কাজ শুরু হয়। আমরা ধলেশ্বরী নদী বাঁচাও আন্দোলনের পক্ষ থেকে নদীর তীরবর্তী এলাকায় লিফলেট বিতরণ করবো নদী খনন বিষয়ে। তাহলে সাধারণ মানুষ জানতে পারবে যে নদী খনন হচ্ছে। এছাড়াও প্রতিটি ইউনিয়নে কমিটি করার মাধ্যমে নদী খননের কাজ মনিটরিং করা যেতে পারে। কারণ আমাদের একার পক্ষে এটা সম্ভব নয়। সাধারণ মানুষকে সচেতন থাকতে হবে যে সঠিক ভাবে নদী খনন হচ্ছে কিনা।’
ধলেশ্বরী নদীর পাড়ের স্থানীয় কৃষক ইজ্জত আলী বলেন, ‘আমরা চাই ধলেশ্বরী নদী খনন হোক। আমরা যেন নদীতে ডুব পেড়ে (দিয়ে) গোসল করতে পারি। গরু ঝাপাতে পারি। আমরা এই নদী খননের আন্দোলনে আপনাদের সাথে আছি।’
এডভোকেট দীপক কুমার ঘোষ বলেন, ‘নদীর সাথে আমাদের নাড়ীর সম্পর্ক। নদী ছাড়া এই বাংলাদেশ কল্পনাই করা যায় না। বাংলাদেশকে বাঁচাতে হলে আমাদের নদী বাঁচাতে হবে। সকল নদী দখল ও দূষণমুক্ত করতে হবে। সরকার উদ্যোগ নিয়েছে নদী খননের। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এর বাস্তবায়ন হোক এটাই আমাদের প্রত্যাশা।’
সরকারি মহিলা কলেজের অব: অধ্যক্ষ আবুল হোসেন শিকদার বলেন, ‘পৃথিবীর মোট পানির মধ্যে শতকরা ২ ভাগ পানি আছে মিঠা পানি যা আমাদের পান করার যোগ্য। বাকি ৯৮ ভাগ পানিই আমরা পান করতে পারি না। ভূগর্ভের পানি দিন দিন ভোবে উত্তোলন করা হচ্ছে তাতে একটা সময় বিরাট বিপর্যয় ঘটবে। প্রাকৃতিক বিপর্যয় বৃদ্ধি পাবে। আমাদের পানর অপচয় রোধ করতে হবে। জলাধার তৈরি করতে হবে।’
আলোচনার শুরুতেই বারসিক’র আঞ্চলিক সমন্বয়কারী বিমল রায় বলেন, ‘বারসিক দীর্ঘ ১০ বছর ধরে এই ধলেশ্বরী নদী আন্দোলনের সাথে জড়িত। এখানে অনেকেই আছেন যারা এই আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত। আমরা নদী দখল ও দূষণ রোধ, ধলেশ্বরী নদী খননের জন্য বিভিন্ন ধরণের কর্মসূচি করে আসছি। আমরা নদী কমিশনের চেয়ারম্যানের সাথে মতবিনিময় করেছি। তিল্লীর উৎসমুখ পরিদর্শন করেছি। সমাবেশ করেছি। আমাদের এত দিনের পরিশ্রমের ফসল সরকার ধলেশ্বরী নদী খননের উদ্যোগ নিয়েছে। আমরা সরকারের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছি। আমরা চাই খুব দ্রুত এই নদী খননের কাজ শুরু হোক। আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে যে যতটুকু গভীর, যতটুকু পাশে নদী কাটার পরিকল্পনা হয়েছে তা হচ্ছে কিনা।’
আলোচনা সভা শেষে ধলেশ্বরী নদী খননের দাবিতে র্যালি শহর প্রদক্ষিণ করে প্রেসক্লাবের সামনে সংহতি মানববন্ধনে অংশ নেন। মানববন্ধনে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন সমাজকর্মী ইকবাল খান, বায়রা গ্রামের কৃষক ইব্রাহিম মিয়া, অব: এটিও মো: হানিফ, ইজ্জত আলীসহ আরো অনেকে। মানববন্ধনে বক্তারা খুব দ্রুত ধলেশ্বরী নদী খননের উদ্যোগের দাবি জানান। সেই সাথে ধলেশ্বরী নদীসহ সকল নদী দখল ও দূষণমুক্ত করার দাবি জানান তাঁরা।
নদীমাতৃক দেশ বাংলাদেশ হলেও আজ বাংলদেশের মানচিত্র হতে ধলেশ্বরী, কালীগঙ্গাসহ বিভিন্ন নদী হারিয়ে যেতে বসেছে। বিভিন্ন জলাধার বিলুপ্ত হওয়ায় এর ব্যাপক প্রভাব পড়ছে প্রাণিজগতের উপর। পানীয় জলের অভাবে অনেক প্রাণি আজ বিলুপ্তির পথে। আসুন সকল প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষায় আমরা সকলে ঐক্যবদ্ধ হই। গড়ে তুলি এক বহুত্ববাদি সমাজ যেখানে সকল প্রাণ তার নিজস্ব অধিকার নিয়ে মর্যাদার সাথে বেঁচে থাকবে।