আমরা স্থায়িত্বশীল উন্নয়নে পানি চাই
রাজশাহীর তানোর থেকে রিনা টুডু
মনিকা টুডু (৩৮)। স্বামী ও তিন ছেলে মেয়ে নিয়ে সংসার। এর মধ্যে ছোট ছেলে জন্ম থেকে অসুস্থ। তাকে দেখাশোনা করতে সারাদিন কেটে যায়। পুরো পরিবারের পানির প্রয়োজনীয়তা মেটানোর দায়িত্ব একা পালন করতে হয়। কারণ মনিকা টুডুর মতো তানোর উপজেলার মাহালী পাড়া গ্রামের ৩০০টি পরিবারে নেই সুপেয় পানির কোন ব্যবস্থা। সবাই কখনও কখনও এক থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে থেকে অন্য কারো সাব-মারসেবল মটর বা ডিপটিবওয়েল থেকে পানি সংগ্রহ করে নিয়ে আসে। এর মধ্যে যাদের সামর্থ্য আছে তারা মোটামুটি ভালো তারা একটি তেলের পাম্প থেকে মাসিক চাঁদার ভিত্তিতে প্রতিদিন ২বার পানি নিয়ে আসে তাও দূরত্ব ৫০০ মিটার। অসুস্থ বাচ্চা সামলিয়ে এভাবে দূর থেকে পানি নিয়ে আসাটা অনেক কষ্টের বলে জানান মনিকা টুডু।
গল্পটি রাজশাহীর তানোর উপজেলার মন্ডুমালা মাহালী পাড়া গ্রামের। পানির এই কষ্টের মধ্যই এবার আসে বিশ্ব পানি দিবস-২৩। তাই মাহালীপাড়া বাঁশ বেত উন্নয়ন সংগঠন ও বেসরকারী গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিকের যৌথ উদ্যোগে গ্রামের সবাই মিলে পালন করেন পানি দিবস। এ দিবসে মাহালীদের দাবি বা উদ্দেশ্য একটাই তাঁদের সুপেয় পানির ব্যবস্থার মাধ্যমে মাহালীদের স্থায়িত্বশীল উন্নয়ন যেন নিশ্চিত হয়। পানি দিবস পালন অনুষ্ঠানে সংগঠনের ৭০-৮০ জন সদস্য অংশগ্রহণ করেন।
পানি দিবসে সংগঠনের সভাপতি চিচিলিয়া মাডির্ (৫৫) বলেন, ‘আমার পরিবারে ৮জন সদস্য। সবার প্রয়োজনীয় পানি আমার একাই সংগ্রহ করতে হয়। এর মধ্যে একটি মেয়ে গর্ভবতী হয়ে আমার বাড়িতে এসেছে তাকে দেখাশোনা করে সময়মতো পানি সংগ্রহ করতে পারাটা কষ্টের হয়ে যায়।’ সংগঠনের অপর সদস্য যুথিকা মার্ডি (৩৯)বলেন, “গরম কালে আমাদের পানির সমস্যাটি অনেক বেশি হয়। টাকা দিয়ে যে পানি মটর থেকে কিনি তা খাওয়ার কাজেই চলে যায়। গোসল করতে অনেক দূর যেতে হয়। কারণ আশেপাশের পুকুরে বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষ হয় বলে সেখানে গোসল করলে শরীরে চুলকানিসহ নানা চর্মরোগ হয়।’ কথাটি শুনে মনিকা মার্ডি (৪২) বলেন, “গরমের সময় কাজ করে এসে আমরা পাড়ার অনেকের আসার জন্য অপেক্ষা করি গোসল করতে যাওয়ার জন্য কারন প্রায় এক কিলোমিটার দূরের পুকুরে গোসল করতে যেতে হয় ফসলের জমি দিয়ে। একা একা যেতে ভয় লাগে।’
এবার মেরিনা হাঁসদা (৫৯) বলেন, “আগে আমাদের এলাকায় অনেক পুকুর ছিলো সেখানে আমরা গোসল করতে পারতাম প্রয়োজনীয় পানি নিয়ে আসতে পারতাম। এখন মাছ চাষ ও অনেক পুকুর শুকিয়ে যাওয়া এবং ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে আর সে সুযোগ নেই।’
উল্লেখ্য, মাহালী পাড়া এলাকার ৩০০টি পরিবারের খাওয়ার পানির কষ্টের পাশাপাশি তাদের নিত্য প্রয়োজনীয় পানির বিষয়টিও দিন দিন প্রকট থেকে প্রকটতর হয়ে উঠছে। বিশ্ব পানি দিবসে তাদের একটাই দাবি পানি বৈষম্য যেন দূর হয়!