খরাপ্রবণ বরেন্দ্র জনপদের জল ও জীবনের নিরাপত্তার দাবি
প্রেস বিজ্ঞপ্তি (রাজশাহী)
খরাপ্রবণ বরেন্দ্র জনপদের জল ও জীবনের নিরাপত্তায় পানি ব্যবস্থাপনায় সুশাসনসহ গ্রাম ও শহরের ভূ-উপরস্থ জলাধারগুলো সুরক্ষা এবং তাতে প্রান্তিক মানুষের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার দাবিতে রাজশাহীতে ‘পানিবন্ধন’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) রাজশাহী সাহেব বাজার জিরোপয়েন্টে বিশ^ পানি দিবস উপলক্ষে বরেন্দ্র ইয়ুথ ফোরাম, বরেন্দ্র রিসার্স এন্ড অ্যাডভোকেসী সোসাইটি ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক’র যৌথ আয়োজনে খরাপ্রবণ বরেন্দ্র অঞ্চলের পানি ব্যবস্থাপনার সুশাসন ও ভূ-উপরোস্থ জললাধারগুলো সুরক্ষাসহ তাতে প্রান্তিক মানুষের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার দাবি করেছেন।
পানিবন্ধনে বরেন্দ্র ইয়ুথ ফোরাম এর সভাপতি শাইখ তাসনীম জামালের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান আতিক-এর সঞ্চালনায় কথা বলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহজান আলী বরজাহান, বারসিক’র গবেষক মোঃ শহিদুল ইসলাম, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম মুক্তিযোদ্ধা ৭১ এর সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান উজ¦ল,ইয়ুথ এ্যাকশন ফর সোস্যাল চেঞ্জ এর সভাপতি শামীউল আলমি শাওন, ভয়েস অব ইয়ুথ এর সভাপতি মাহফুজুর রহমান প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে বক্তরা বলেন, সোনা দিঘির উন্নয়য়নের নামে সোনাদিঘিকে সংকোচিত করা হয়েছে, শুকান দিঘি দখল ও ভরাট করা হচ্ছে এরকম শত শত দিঘি ভরাট করে দালানকোঠা, মার্কেট করা হচ্ছে। বারসিক’র গবেষক শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘রাজশাহীসহ গোটা বরেন্দ্র অঞ্চলটি খরাপ্রবণ, একসময় এখানে প্রচুর ভূ-উপরোস্থ জলাধার ছিলো। সেগুলো দখল দূষণ করে বিনষ্ট করা হয়েছে। অন্যদিকে জলমহাল লিজ, পুকুর লিজ প্রথা এবং আইনের কারনে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালীরা এসব প্রাকৃতিক জলাধার লিজের নামে দখল করে, তাতে গ্রামের মানুষ প্রান্তিক মানুষের প্রবেশাধিকার থাকেনা।’ তিনি আরো বলেন, ‘আইন বা নীতি যদি জনগোষ্ঠীর উপকারে না আসে, তাহলে সেই আইন পরিবর্তন করা দরকার।’ তিনি গ্রামের পুকুর জলাধারগুলো গ্রামের মানুষের মধ্যে ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার দাবি জানান।
বরেন্দ্র ইয়ুথ ফোরাম এর সভাপতি শাইখ তাসনীম জানান, বরেন্দ্র অঞ্চলের পানি ব্যবস্থাপনার নামে দুঃশাসন চলছে, এখানে পানি ব্যবস্থাপনার সুশাসন দরকার। ডিপগুলো প্রভাবশালীরা পরিচালনা করেন। আদিবাসী যুব পরিষদের সভাপতি উপেন রবিদাস বলেন, ‘পানি ব্যবস্থাপনার সুশাসনের অভাবে এখানে আদিবাসীদের জীবন দিতে হয়।’ তিনি আরো বলেন, ‘রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার নিমঘটু গ্রামের অভিনাথ মার্ডি এবং রবি মার্ডি সেচের পানি না পেয়ে বিষ পান করে আত্মহত্যা করেছিলেন। এটা ঘটেছে পানি ব্যবস্থাপনায় সুশাসনের অভাবে।’
পানিবন্ধনে বরেন্দ্র ইয়ুথ ফোরাম এর সভাপতি শাইখ তাসনীম জামাল খরাপ্রবণ বরেন্দ্র জনপদের জল ও জীবনের নিরাপত্তায় পানি ব্যবস্থাপনায় সুশাসনসহ গ্রাম ও শহরের ভূ-উপরস্থ জলাধারগুলো সুরক্ষা এবং তাতে প্রান্তিক মানুষের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার দাবিতে রাজশাহীতে আট দফা দাবি তুলে ধরেন এবং একই সাথে তিনি রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার এবং জেলাপ্রশাসন বরাবর দাবি সম্মলিত স্মারকলিপি পেশ করেন। দাবিগুলো হলো
১. ২০১৪ সালে জনস্বার্থে হাইকোর্টে একটি রিট মামলা দায়ের করলে জেলা প্রশাসন ৯৫২টি পুকুরের তালিকা করে এবং সেই অনুপাতে হাইকোর্ট পুকুরগুলো সংরক্ষণসহ পুকুরগুলো যাতে ঙৎরমরহধষ থাকে তাও নিশ্চিত করতে বলেছেন, একইসাথে রাজশাহীতে অনেক পুরাতন সুকান দিঘি দখলকৃত অংশ পূর্নরুদ্ধার ও পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে এনে সংরক্ষণের নির্দেশ দেন। উক্ত হাইকোর্টের নির্দেশ যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হবে।
২. বরেন্দ অঞ্চলের গ্রাম ভিত্তিক খাস/সরকারি প্রতিটি পুকুর/দিঘি সেই গ্রামের মানুষের ব্যবহারের জন্য শর্তবিহীন এবং জামানতবিহীন আজীবনের জন্য লিজ দিতে হবে। পুকুর/দিঘিগুলো পূণঃসংষ্কার করে দিতে হবে।
৩. বরেন্দ্র ডিপ ব্যবস্থাপনায় পানি বণ্টন বৈষম্য নীতি পরিহার করে সরাসরি কৃষকদের পরিচালনা করতে দিতে হবে। প্রভাবশালীদের নিয়ন্ত্রণ বন্ধ করতে হবে।
৪. বরেন্দ্র অঞ্চলের প্রতিটি গ্রামে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করতে হবে।
৫. বরেন্দ্র অঞ্চলের প্রাকৃতিক জলাশয়/জলাধারগুলো পূনঃসংস্কার এবং তা লিজ বাতিল করে জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে হবে।
৬. ভুগর্ভস্থ পানির উত্তোলন কমিয়ে ভু-উপরোন্থ পানি ব্যবহার এবং সেই সুবিধাগুলো সৃষ্টি করে দিতে হবে।
৭. বরেন্দ্র অঞ্চলের বৈচিত্র্য ও পরিবেশ সুরক্ষায় উচুঁ-নীচু বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন ভূমি কর্তন/সমান করা বন্ধ করাসহ বড় বড় বৃক্ষগুলো সুরক্ষায় কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। বৃক্ষনিধন বন্ধ করতে হবে।
৮. খরা এবং দুর্যোগের কারনে শস্য ফসলসহ গবাদি পশুপাখির ক্ষতি পূরণ দিতে হবে। খরাকালিন কাজের অভাবে প্রান্তিক আদিবাসী ও অন্যান্য শ্রমজীবী মানুষের জন্য মৌসুমী খরা ভাতা চালু করতে হবে।