মাছের জেলা ‘সাতক্ষীরা’
:: সাতক্ষীরা থেকে শেখ তানজির আহমেদ
মাছের জেলা। গলদা ও বাগদা চিংড়ি থেকে শুরু করে ভেটকি, পারশে, টেংরা, রুই ও কার্প জাতীয় মাছসহ এমন কোন মাছ নেই-যা পাওয়া যায় না। খাল-বিল, নদী-নালা, হাওড়-বাওড়সহ প্লাবণ ভূমিতে হয় মাছ চাষ। জেলার চাহিদা মিটিয়েও প্রতিবছর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে রাখে সহায়ক ভূমিকা।
বলছি, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরার কথা। এ জেলার বিখ্যাত অনেক কিছুর মধ্যে ‘চিংড়ি’ অন্যতম। তবে, শুধু যে চিংড়ি মাছ তা নয়, প্রতিনিয়ত রপ্তানিসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে ভেটকি, পারশে, টেংরা, রুই ও কার্পসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ।
সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য অফিসারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার ২০ লাখ মানুষের জন্য প্রতিদিন ৫০ গ্রাম হিসেবে মাছের বার্ষিক চাহিদা ৩৫ হাজার ২শ’ ৪১ মেট্রিক টন মাছ। সেখানে জেলায় বার্ষিক উৎপাদন ১ লাখ ৩ হাজার একশত ৫৩ মেট্রিক টন মাছ। এ হিসেবে সাতক্ষীরা থেকে প্রতিবছর ৬৭ হাজার ৯শ’ ১২ মেট্রিক টন মাছ বিদেশে রপ্তানিসহ দেশের বিভিন্ন জেলার চাহিদা মেটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়েছে প্রায় এক হাজার ৫শ’ কোটি টাকা। মৎস্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, বিপণনের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করছে লক্ষাধিক মানুষ। যদিও চলতি বছর জেলার বার্ষিক উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ১৬ হাজার ৯শ ৪০ মেট্রিক টন নির্ধারণ করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, ২০১৪ সালে জেলার ৫০ হাজার ১৮টি পুকুরে ২০ হাজার ১০০ মেট্রিক টন কার্প জাতীয় মাছ, ১৫ হাজার ৭শ’ ৭ মেট্রিক টন মনোসেক্স তেলাপিয়া ও পাঙ্গাস মাছ, ১৬ হাজার ৭শ’ ৬৫ মেট্রিক টন রুই জাতীয় মাছ, ধান ক্ষেতে এক হাজার ২শ’ ৮০ মেট্রিক টন সাদা মাছ, লবণাক্ত পানিতে ১৬ হাজার ৫শ’ মেট্রিক টন সাদা মাছ, এক হাজার ৮শ’ মেট্রিক টন চাকা, চ্যামা ও হরিণাসহ অন্যান্য মাছ, ৪৩টি নদীতে ৮৪০ মেট্রিক টন, ৪শ’ ৬টি খালে এক হাজার ২শ’ ১৩ মেট্রিক টন, ৪টি বিলে ৪৮ মেট্রিক টন, ৪টি বাওড়ে ১৯২ মেট্রিক টন ও ৮টি প্লাবণ ভূমিতে ৪২ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদিত হয়।
জেলায় এসব মাছ উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিপণনে গড়ে উঠেছে ২৮টি হ্যাচারি, ২৬৭টি নার্সারি, ৬টি মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্র, ৩২টি আড়ৎ, ৩১৫টি ডিপো, ৪৪টি বরফ কল, ১৫টি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ও ৫৮টি পাইকারী মৎস্য বিপণন কেন্দ্র।
তবে, মৎস্য খাতে চাষীদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সেবা প্রদানে জনবল বাড়ানো, চাষীদের প্রশিক্ষণ ও এ খাতে খামারীদের ভর্তুকি প্রদান করে উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
জেলার শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা গ্রামের আসাদুল ইসলাম বলেন, “কৃষিখাতে পরামর্শ ও সেবা দেওয়ার জন্য প্রত্যেক ইউনিয়নে এক/দু’জন করে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রয়েছে। কিন্তু মৎস্যখাতে এ ধরনের কাউকে কাছে পাওয়া যায় না।” এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।
অন্যদিকে আশাশুনির শোভনালী গ্রামের মৎস্য চাষী উদয় মন্ডল বলেন, “আমরা যারা মাছ চাষ করি তাদের ভতুর্কি দেওয়া হয় না। যে বিদ্যুৎ ব্যবহার করি তার মূল্য দিতে হয় বাণিজ্যিক রেটে। সব সময় আমরা বৈষম্যের শিকার হই।”
এ ব্যাপারে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আব্দুল ওয়াদুদ জনবল সংকটের কথা স্বীকার করে বলেন, “মৎস্য উৎপাদনে সাতক্ষীরা একটি সম্ভাবনাময় জেলা। মৎস্য খাতে চাষীদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সেবা প্রদানে জনবল বাড়ানো, বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিতকরণসহ এ খাতে খামারীদের ভর্তুকি প্রদান করে উৎপাদন আরও বাড়ানো সম্ভব।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের জেলা ও উপজেলা অফিসে চার/পাঁচজন ছাড়া কোন জনবল নেই। অনেক সময় বিভিন্ন পরীক্ষা, মোবাইল কোর্টসহ অন্যান্য সরকারি কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়। তাই সেবা ও পরামর্শ পেতে মৎস্যচাষীদের বেগ পেতে হয়।”
এছাড়া কৃষিখাতের মতো মৎস্যখাতে ভর্তুকি প্রদানের বিষয়টি ইতোমধ্যে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন বলে তিনি জানান।