বীজ বিনিময় ও গ্রামীণ নারীদের করোনাকালীন মহামারী মোকাবেলা
বরেন্দ্র অঞ্চল রাজশাহী থেকে অমৃত সরকার:
প্রায় তিনমাস দেশে চলছে করোনা মাহামারী। বিশ্বের অন্য দেশের মত আমাদের দেশেও চলছে লকডাউন কার্যক্রম। যে কোন ধরনের মহামারী মোকাবেলায় ধাদ্য উপকরণ একটি অপরিহার্য। আর খাদ্য উপকরণের অধিকাংশই হচ্ছে কৃষি পণ্য। আরো ভালোভাবে বললে চাল,ডাল, তেল ও বিভিন্ন ধরনের সবজি। সেই জন্যই বাংলাদেশ সরকারসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গুরুত্ব দিচ্ছে কৃষি উৎপাদনে। এই কৃষি উৎপাদনের অনেক বড় অংশজুড়েই আছে গ্রামীণ নারীদের সবজি চাষ।
মূলত গ্রামীণ নারীরা গ্রামীণ অর্থনীতির একটি বড় অংশ পূরণে ভূমিকা রাখে তাঁদের এই সবজি চাষ, যা তাঁরা করে থাকেন বাড়ির আঙ্গিনায়, পতিত জমিতে কখনো কখনো রাস্তার পাশে। সামান্য জমিটুকুর হয় সঠিক ব্যবহার। গ্রামীণ নারীদের সবজি চাষের প্রধান হাতিয়ার হচ্ছে নিজেদের মধ্য বীজ বিনিময়। এক্ষেত্রে নারীরা নিজের কাছে যে বীজ নেই তা অন্য নারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে জমিতে বপন/রোপণ করে থাকেন। চলতি সময়ে বীজ বিনিময়ে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে বারসিক বরেন্দ্র অঞ্চলের কমিউনিটি ফ্যাসিলেটরবৃন্দ।
গত মাচ মাসে ৫জন কমিউনিটি ফ্যাসিলেটর মিলে জনগোষ্ঠি পর্যায়ে লাউ, মিষ্টিকুমড়া, চাল কুমড়া, মরিচ, বেগুন, পেঁপে, গড়আলু, সজিনার বীজ বিনিময় করেন ১৪২০ জন নারী পুরুষের মাঝে। একইভাবে এপ্রিল মাসে বীজ বিনিময় করেন ১২৫০ জন নারী পুরুষের মাঝে। এর পাশাপাশি মে মাসে সবজি বীজ বিনিময় হয় ৮৯০ জন নারী পুরুষের মাঝে। যা করেনাকালীন চলতি সময় পর্যন্ত দাঁড়িয়েছে ৩৫৬০ জনে। এর মধ্য নারী ৩২১০ আর পুরুষ ৩৫০জন। মোট জমির হিসেবে ৩৫টি গ্রামে ৬৫ বিঘা ২২ শতাংশ।
এ বিষয়ে বরেন্দ্র অঞ্চলের রাজশাহী জেলার পবা উপজেলার দর্শনপাড়া ইউনিয়নের বিলনেপালপাড়া গ্রামের কমিউনিটি ফ্যাসিলেটর মোসাঃ সুলতানা খাতুন (৩২) বলেন, ‘যখন থেকে বাংলাদেশে করোনা মহামারী শুরু হয়েছে সেই সময়ে আমি গ্রামীণ নারীদের মাঝে সবজি চাষে উৎসাহ প্রদান করেছি এবং তাঁদের মাঝে বীজ বিনিময় করেছি। কারণ বাড়িতে যদি সবজি থাকে তাহলে বাড়ির কাউকে বাজারে যেতে হবে না সেক্ষেত্রে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আশংকা কম থাকবে।’ এর পাশাপাশি তিনি নারীদের চাহিদামত সবজি বীজের তথ্য দিয়েও সহযোগিতা করেন।
গ্রামের নারীরা বিভিন্ন জাতের সবজি উৎপাদন করে নিজের পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে কিছু সবজি বাজারে বিক্রয় করে সংসারের জন্য বাড়তি আয় করেন। এর পাশাপাশি নারীরা করোনাকালীন সময়ে প্রতিবেশীদের মাঝেও কিছু পরিমাণ সবজি বিতরণ করে থাকেন। এ বিষয়ে রাজশাহী জেলার মোহর গ্রামের শ্রীমতি আল্পনা রানী (৪৫) বলেন, ‘দেশে এখন চলছে করেনা মহামারী সময়। এখন যদি আমরা আমাদের প্রতিবেশীদের পাশে না দাঁড়াই তাহলে অন্যায় হবে। এখন আমার জমিতে পুঁইশাক, লালশাক, কাঠুয়া ডাটা চাষ করেছি বেশি পরিমাণে। বাজারে বিক্রয় না করে আমি প্রায় প্রতিদিনই প্রতিবেশীদের মাঝে বিতরণ করছি। এতে সবারই উপকার হচ্ছে।’
গ্রামীণ নারীদের প্রচেষ্টার মাধ্যমে চলতি করোনা মহামারী মোকাবেলায় খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে যে অবদান রেখেছেন তা খুবই গুরুত্ব বহন করেন। এই প্রচেষ্টা সফল হচ্ছে এক অপরের মাঝে বীঝ বিনিময়ের মাধ্যমে।