দিঘিপাড়ার সমন্বিত উন্নয়ন নারীদের মর্যাদাসহ নেতৃত্ব এনে দিয়েছে
রাজশাহী থেকে শহিদুল ইসলাম
গ্রামের নাম দিঘীপাড়া। রাজশাহীর পবা উপজেলার দর্শনপাড়া ইউনিয়নের একটি দিঘিকে (পুকুর) কেন্দ্র করেই গ্রামের সৃষ্টি। দিঘির চারপাশে একসময় মানুষের বসতি শুরু হয়। পানি সংকটাপন্ন বরেন্দ্র অঞ্চলে একসময় পানিকে কেন্দ্র করেই দিঘি বা পানির প্রাকৃতিক উৎগুলোর পাশে বসতি গড়ে উঠেছে সেই প্রাচীনকাল থেকেই। তেমনিভাবে দিঘিপাড়াও দিনে দিনে একটি গ্রাম বা পাড়ায় পরিণত হয়েছে। এখানে এখন ১২০টি পরিবারের বসবাস। গ্রামের একধারে জোয়াখালি খাল বয়ে গেছে। বাকি তিনধারে আবাদি জমি। আবাদি জমিতে বারো মাসে বিভিন্ন ফসলের আবাদ করা হয়। একটু নীচু এলাকা হওয়ায় এখানে কোন কোন বছর পানি উঠে। বিলের নীচে পানি জমে থাকে। পানি জমে থাকা স্থানগুলোতে এখনো পানি সহনশীল চৌদ্দপুরুষের সেই দেশিজাতের ধান মাইটাকড়ল ধানের চাষ করেন। এছাড়াও গ্রামটিতে কৃষকরা রবিশস্য যেমন বিভিন্ন জাতের ডালসহ গম, আলু পেয়াজ রসুনের আবাদ করেন।
বারসিক উক্ত গ্রামে জনগোষ্ঠীর সহায়ক হিসেবে কার্যক্রম শুরু করে ২০১৯ সালের প্রথম দিকে। শুরু থেকে বারসিক স্থানীয় জনগোষ্ঠীর বিভিন্ন সমস্যা সম্ভাবনাগুলো সমাধানে সহযোগীর ভূমিকা পালন করে। স্থানীয় সরকারি ও বেসরকারি সেবাদানকারি প্রতিষ্ঠানের সাথে পরিচিতি এবং সেবাগুলো গ্রহণে সহায়তা করা হয়। একই সাথে গ্রামের নারীদের সংগঠিত করে তাঁদের নিজস্ব অভিজ্ঞতা ও দক্ষতাগুলো সমন্বিত উপায়ে উন্নয়নমূলক কার্যক্রম গ্রহণে সহায়তা করে। গ্রামের নারীদের মধ্যে সুপ্ত প্রতিভাগুলো বিকশিত করতে বারসিক সহায়ক ভূমিকা পালন করে। একসময় স্থানীয়ভাবে বাড়ির পাশে জমিগুলো এমনিতেই পড়ে থাকতো বর্তমানে সেখানে চাষাবাদ করে বিভিন্ন সবজি ও ফসল ফলানো হচ্ছে। যার সম্পূর্ণ পরিচর্যা নারীরাই করে থাকেন। নারীরা বাড়িতে গরু ছাগল হাঁস ও মুরগি পালন করছেন সমন্বিত উপায়ে। কাজের ফাঁকে তাঁরা নিজেরা হাতের কাজ, সুঁই-সূচির কাজ করে বিভিন্ন আয় রোজগার করছেন। পরিবারে তাঁদের মর্যাদা বেড়েছে। শুধু আয় রোজগারই নয়, এই গ্রামের নারীরা সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেন তাঁদের সংগঠন থেকে একজন নারীকে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্বিতা করবেন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাঁরা এই গ্রামের শুকিলা বেগমে নির্ধারণ করেন। সবাই মিলে প্রচারণা করেন। দিঘিপাড়ার শুকিলা বেগম বিপুল ভোটে ইউপি নির্বাচনে নির্বাচিত হন। এর ফলে এই গ্রামের নারীদের মর্যাদা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে।
গ্রামটির কার্যক্রমে সহায়তাকারী বারসিক’র কমিউনিটি ফেসিলিটেটর মোসা. সুলতানা খাতুন বলেন, ‘গ্রামটিতে প্রথমে তাঁদেরকে সংগঠিত করা হয়েছে। এরপর অন্য গ্রামের ভালো কাজগুলো তাঁদেরকে দেখানো হয়েছে। এর কারণে নিজেরাও এখন ভালো উদ্যোগ গ্রহণ করছে।”
দর্শনপাড়া ইউনিয়নের নব নির্বাচিত শুকিলা বগেম বলেন, ‘সবাই এক থাকলে আর পরিশ্রম করলে অসাধ্যকেও সাধন করা যায়। আমি আমার গ্রামের নারীদের কাছে ঋণী, কারণ তারাই আমাকের ইউপি নির্বাচনে জেতাতে অনেক পরিশ্রম করেছেন। একই সাথে আমাকে যারা ভোট দিয়েছেন এবং আমার জন্য কাজ করেছেন আমি তাঁদেরকে ধন্যবাদ জানাই।’