নিজের কাজ নিজেরাই করবো
হরিরামপুর মানিকগঞ্জ থেকে মুকতার হোসেন
আছমা বেগম মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর প্রত্যন্ত চরাঞ্চলে পাটগ্রামচর আশ্রয়ন প্রকল্পে বসবাস করেন। তাঁর স্বামী কৃষি দিনমজুর। আছমা বেগম বাড়িতে গৃহস্থালী কাজে দিন পার করেন। মাঝে মাঝে তিনি দিন মজুরিভিত্তিক কাজ করেন। কিন্তু শুধু গৃহস্থালী কাজ আর স্বামীর দিনমজুরী কাজ দিয়ে তাদের সংসার চলে না। গ্রামের অন্যান্য নারীরা চরে গরু ছাগল পালন করে উন্নতি করছে। আছমার জীবনে সে স্বপ্ন বাসা বাঁধে। তিনি সঞ্চয় করা কিছু টাকা আর স্বামীর নিকট থেকে এক হাজার টাকা নিয়ে চার হাজার টাকা নিয়ে ২০২০ সালে করোনাকালীল সময়ে ফরিদপুর কানাইপুর হাট থেকে দু’টি কেনেন।
![](https://barciknews.com/wp-content/uploads/2024/01/387455304_316140584444824_2194861388689776237_n-1024x766.jpg)
আস্তে আস্তে দু’টি ছাগল বড় হতে থাকে। আছমা বেগম প্রতিদিন ছাগল নিয়ে গ্রামের মানুষের সাথে চকে ঘাস খাওয়াতে নিয়ে যান। মনে মনে আছমা চিন্তা করে ২টি ছাগল থেকেই তাকে অনেকগুলো ছাগল করতে হবে। তাই সে ছাগলগুলোর যতেœর ঘাটতি রাখেন না। আস্তে আস্তে তাঁর ছাগল বাড়তে থাকে। তিন বছরে তার ছোট বড় ২৫টি ছাগল হয়।
গত দুই বছরে ৫টি ছাগল ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি করেন তিনি। সে টাকা দিয়ে একটি টিনসেট ঘর দেন। এই প্রসঙ্গে আছমা বেগম বলেন, ‘সামনে কোরবানী ঈদে আরো ১০টি ছাগল বিক্রি কওে একটি গরু কিনবো।’ তিনি আরও বলেন, ‘চরে গরু ছাগল পালতে সুবিধা বেশি। কারণ অনেক ঘাস আছে। কেনা খাবার খাওয়াতে হয় না। আমাগো খরচ কম হয়। আমার ছাগল পালন দেখে পাটগ্রামচর হালুয়াঘাটা খরিয়াচর অনেক নারী ছাগল ভেড়া পালন করতে শুরু করেছেন।’
![](https://barciknews.com/wp-content/uploads/2024/01/377224094_870615441134684_7654483954607270636_n1-1024x766.jpg)
ছাগল পালনের সমস্যা বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘শীতের সময় ছাগলের অসুখ বেশি হয়। যেমন ঠান্ডা লাগা, মাথা জিমায় অনেকসময় পাতলা পায়খানা হয়। গ্রামের পশু চিকিৎসক এর নিকট থেকে আমরা ওষুধপত্র কিনে খাওয়াই। বেশি সমস্যা হলে হরিরামপুর উপজেলা প্রাণী সম্পদ হাসপাতালে যাই। আর বন্যার সময় বাড়িতে অনেকের বাড়িতে পানি উঠে। খাবার ও বাসস্থানের সমস্যা হয়। অনেক কৃষক ছাগল ভেড়া বিক্রি করে দেয় সে সময়।’
আছমা বেগম লেছড়াগঞ্জ চর উন্নয়ন কৃষক সংগঠনের একজন সদস্য। সংগঠনের সভাপতি হাজেরার নিকট থেকে ব্যক্তিগতভাবে অনেক পরামর্শ নিয়ে থাকেন। বারসিক’র আয়োজনে প্রাণী সম্পদ পালন, বসতবাড়িতে শাকসবজি চাষ, প্রশিক্ষণ এবং প্রাণবৈচিত্র্য মেলাসহ কয়েকটি কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে সেখান সেখান থেকে অভিজ্ঞতা অর্জন করেন বলে তিনি জানান।
আছমা ভবিষ্যত ভাবনা বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রত্যেকটি মানুষের জীবনে স্বপ্ন থাকে এবং সে অনুযায়ী চেষ্টা করলে জীবনে সফলতা অর্জন করা সম্ভব। আমি একটি ছাগলের খামার এবং প্রতিবছর ৪/৫ করে গরু পালন করবো। যাতে আমার স্বামীর অন্যের কাজ করতে না হয়। নিজের কাজ নিজেরাই করবো। জীবনে সফলতা আনবো। চরের নারী ও পুরুষ সবাই মিলে কাজ করে আমরা এগিয়ে যাবো।’