জহুরা বেগমের স্বপ্ন পূরণের হাতছানি
সাতক্ষীরা থেকে আব্দুল আলীম
জলবায়ু পরিবর্তন বর্তমান বিশ্বে এক আতংক। প্রতিনিয়ত বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ঘিরে ধরেছে। তেমনি বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের ক্ষতি দিনদিন বেড়েই চলেছে। এ অঞ্চলে বেড়েছে লবণাক্ততা, বেড়েছে নদির পানির উচ্চতা, বেড়েছে তাপমাত্রা, বেড়েছে কর্মহীন মানুষের সংখ্যা। বেড়েছে উপকূলের মানুষের রোগ ব্যাধি। বিশেষ করে নারীদের উপর ক্ষতির প্রভাব বেশি। প্রতিনিয়ত নারীরাই বিভিন্নভাবে এই জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিভিন্ন প্রভাব মোকাবেলা করে যাচ্ছেন। সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের মীরগাং এলাকায় বাপের বাড়িতে বসবাস করেন জহুরা বেগম (৩৬) যিনি প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করেই জীবন পরিচালনা করছেন।
জহুরা বেগম মিরগাং এলাকায় এক দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। শিক্ষাব্যবস্থা ও আর্থিক অবস্থার উন্নতি না থাকায় প্রাথমিক বিদ্যালয় (৫ম শ্রেণী) থেকে ঝরে পড়েন। পরবর্তীতে মাত্র ১৪ বছর বয়সে বিয়ে হয় ঈশ্বরীপুর ইউনিয়নের বংশীপুর গ্রামে ইস্রাফিল এর সাথে যদিও এই বিয়ে টিকেনি। পরবর্তীতে দুই পুত্র সন্তানের জননী জহুরা বেগম প্রতিনিয়ত দিনমজুর খেটে নিজের খরচ চালাতেন।
কিছুদিন যেতেই জহুরা বেগম পুনরায় একই ইউনিয়নের যতিন্দ্রনগর গ্রামে মিজান মোড়লের সাথে পূনরায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন এবং একটি পুত্র সন্তানের মা হন। মেহাদি হাসান (১০) এখন ৪র্থ শ্রেণির ছাত্র। কিন্তু সেখানেও জহুরা বেগমের বনিবনা হয়না। দিনমজুরি দিয়েই খুব অভাবে চলছিল তার জীবন। ছেলের লেখাপড়া চালাতেও খুব কষ্ট পোহাতে হচ্ছিল।
২০২১ সালের অক্টোবর মাসে নেটজ বাংলাদেশের অর্থায়নে বারসিক’র বাস্তবায়নের “বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত অতি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সক্ষমতা শক্তিশালীকরণ (পরিবেশ) প্রকল্পের ডি ক্যাটাগরিতে সদস্য হন তিনি। আয়বর্ধন কর্মকান্ডের অংশ হিসেবে তিনি চায়ের দোকানের সিদ্ধান্ত নেন। তিনি ৯ হাজার ৫শ’ টাকার চা ও মুদি মালামাল নেন। দুইটি গাছ ১১৫ টাকা, ৬ টাকার বীজ, ও একটি ছোট ছাগল ৪ হাজার টাকা টাকা দিয়ে নেন। তিনি চায়ের দোকানে প্রতিনিয়ত চা পান ও হাল্কা খাবার বিক্রি শুরু করেন এবং প্রতিদিন ১৫০/২০০ টাকা আয় করেন। একবছর পর নিজের সকল খরচ বাদ দিয়ে পাশাপাশি আয় বৃদ্ধি করার জন্য ৭ হাজার টাকা দিয়ে একটি পূরাতন নৌকা ক্রয় করেন। তিনি এখন প্রতিনিয়ত দিনের বেলা দোকানে চা পান বিক্রি করবেন ও রাতে নৌকা নিয়ে নদীতে মাছ ও কাঁকড়া ধরবেন। তিনি আশা করেন ২০২৪ সালের মধ্যে তিনি এক লাখ টাকার সম্পদের মালিক হবেন।
তিনি আশা করেন তার আর অভাব থাকবেনা এবং ছেলেটিকে ভালোভাবে পড়ালেখা করাতে পারবেন। তিনি নিজের মত করে একটি সুন্দর বাড়ি তৈরি করার স্বপ্ন দেখেন ও পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যবসা শুরু করবেন।