দূর্যোগ ব্যবস্থাপনায় নারী শিশু প্রবীণ প্রতিবন্ধীসহ প্রান্তিক মানুষদের কথা বিবেচনা করতে হবে
শ্যামনগর, সাতক্ষীরা থেকে মুক্তি রানী মন্ডল, মনিকা রানী মন্ডল, মারুফ হোসেন মিলন ও বিশ্বজিৎ মন্ডল
বারসিক’র আয়োজনে ও উপকূলীয় এলাকার স্বেচ্ছাসেবক টিম সুন্দরবন স্টুডেন্ট সলিডারিটি টিম ও সিডিও এর সহযোগিতায় গত ১৪ নভেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখ পর্যন্ত শ্যামনগর উপজেলায় দূর্যোগ ব্যবস্থাপনায় জেন্ডার সংবেদনশীল সক্ষম যুব সমাজ বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কর্মশালাগুলো শ্যামনগর উপজেলার শ্যামনগর জেসি কমপ্লেক্স, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ও বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের বরসা রিসোর্ট কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়।
২০ দিনব্যাপি এই কর্মশালার শুভ সুচনা বক্তব্য রাখেন বারসিকের আঞ্চলিক সমন্বয় কারী পার্থ সারথী পাল। পারস্পারিক পরিচিতি, প্রশিক্ষণের প্রত্যাশা, লক্ষ্য উদ্দেশ্য, নিয়মাবলী এবং পদ্ধতি উপস্থাপন করেন বারসিক সমন্বয়কারী ও প্রাণ প্রকৃতির গবেষক প্যাভেল পার্থ ও সহযোগী সমন্বয়কারী গবেষক জাহাঙ্গীর আলম।অংশগ্রহণকারী হিসাবে উপস্থিত ছিলেন উপকূলীয় এলাকায় বারসিকের মাঠ পর্যায়ের সকল স্টাফ, শ্যামনগর উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের যুব প্রতিনিধিরা এবং উপজেলা ও ইউনিয়ন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যবৃন্দ। দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যদের ভেতর উপজেলা ও ইউনিয়ন স্ট্যান্ডিং কমিটির প্রতিনিধি, ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি) এর প্রতিনিধি, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বারবৃন্দ, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা, উপজেলা যুব উন্নয়ন কমৃকর্তা, মুক্তিযোদ্ধা প্রতিনিধিরা প্রশিক্ষণসমূহে উপস্থিত থেকে দূর্যোগ ব্যবস্থাপনায় তাদের নানামূখী দায়িত্বের কথা আলোচনা করেন।
প্রশিক্ষণে প্রধান সহায়ক প্যাভেল পার্থ তার নিজস্ব ভাব ভঙ্গি ও কায়দার মাধ্যমে গ্রুপ ওয়ার্ক, মোকাভিনয়ের মাধ্যমে কর্মশালার বিষয়বস্তুসমুহ একে একে তুলে ধরেন। প্রতিটি প্রশিক্ষণ কর্মশালার ৫দিন করে হয়। কর্মশালায় মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে ধারণা প্রদান করা হয় যুবদেরকে যেমন: দূর্যোগ সম্পর্কিত ধারণায়ন, আপদ, বিপদ, বিপদাপন্নতা, ঝুঁকি, ঝুঁকি হ্রাস, দূর্যোগের ধরন, দূর্যোগে বাংলাদেশের ঝুঁকি ও ঝুঁকির কারণসমুহ, দূর্যোগের সংকেত, দূর্যোগ ব্যবস্থাপনার কৌশল, দূর্যোগ ব্যবস্থাপনার পর্যায়, দূর্যোগ ব্যবস্থাপনার কাঠামো, দূর্যোগে যুব সম্প্রদায় কেন গুরুত্বপূর্ণ, যুব নেতৃত্ব তৈরি, ভালো নেতার গুণাবলী, দূর্যোগ ও জেন্ডার, সেন্দাই ফ্রেমওয়ার্ক, সেন্দাই ফ্রেমওয়াকের লক্ষ্য এবং বিশেষ অগ্রাধিকার, দূর্যোগ ও জেন্ডার সংকটকালীন মডেল, স্থায়িত্বশীল উন্নয়ন লক্ষ্য, জাতীয় দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা, দূর্যোগ ব্যবস্থাপনায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সম্পৃক্তকরণসহ আরও নানান বিষয়।
কর্মশালায় উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের যুবরা তাদের নিজ নিজ ইউনিয়নের প্রধান প্রধান ১০টি করে সমস্যা চিহ্নিত করেন। সেগুলোর মধ্যে থেকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ৫টি করে সমস্যা তুলে ধরেন এবং সেগুলো সমাধানের জন্য পরিকল্পনায় যুক্ত করেন। পরিকল্পনা তৈরির ক্ষেত্রে তারা দূর্যোগ ব্যবস্থাপনায় দুর্যোগ ও জেন্ডার সংকটকালীন মডেল (Gendered Crunch Model) অনুসরণ এবং প্রত্যেকটি সমস্যা বিশ্লেষণ করেন।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সেলিম খান বলেন, ‘দূর্যোগ সম্পর্কিত যে কর্মশালা এটি উপকূলীয় এলাকার জন্য খুবই গুরুত্বপর্ণ। আজ ১২টি ইউনিয়নের যুবরা এখানে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। উপজেলায় দূর্যোগ ব্যবস্থাপনায় যে স্ট্যান্ডিং কমিটি আছে সেখানে এই যুবদেরকে অর্ন্তভূক্তকরণ বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। শ্যামনগরের ১২টি ইউনিয়নের যুব ছেলে-মেয়েদের তৈরি এই দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনাগুলো আমাদের সরকারের জাতীয় দূর্যোগ ব্যবস্থাপনাকে আরো শক্তিশালী করবে, এই পরিকল্পনাগুলোকে বাস্তবায়িত করতে আমরা সচেষ্ট থাকবো”। প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারীরা বলেন, ‘এ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উপকূলীয় শ্যামনগর উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের যুবদের মধ্যে একটি সম্পর্ক তৈরি হলো। এখন নিজেরা নিজেদের নানাবিধ সমস্যায় এগিয়ে আসতে পারবে, নানা সামাজিক ও প্রাকৃতিক সমস্যা মোকাবেলায় একসাথে কাজ করতে পারবে। বিশেষত প্রাকৃতিক কোনো আপদ, বিপদ ও দূর্যোগ ব্যবস্থাপনায় নিজেরা সমাজের নারী, শিশু, প্রবীণ, প্রতিবন্ধী ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে দূর্যোগ ব্যবস্থাপনায় যুক্ত করতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।”
প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারী অধিকাংশের কাছেই জেন্ডার সংবেদনশীল দূর্যোগ ব্যবস্থাপনার এই প্রশিক্ষণটি একটি নতুন বিষয় ছিল। অংশগ্রহণ শেষে প্রশিক্ষণার্থীরা বলেন, ‘এ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আপদ, বিপদ, ঝুঁকি ও দূর্যোগ সম্পর্কে জানতে পারলাম। দূর্যোগ ব্যবস্থাপনায় নারী, পুরুষ, শিশু, প্রবীণ, প্রতিবন্ধী ও সামাজিকভাবে প্রান্তিক মানুষদের কথা বিশেষভাবে বিবেচনা করার জন্য আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন দরকার। এ বিষয়ে আমরা যুবরা সামাজিক সচেতনতা বাড়াতে কাজ করবো। আমরা যে কর্মপরিকল্পনা তৈরি করেছি তা বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা নিজ নিজ এলাকার দূর্যোগ কমিটিকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করবো। আমরা যে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছি তা আমাদের ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’
উল্লেখ্য যে, প্রত্যেকটি কর্মশালায় প্রশিক্ষণার্থীদের সনদপত্র প্রদানের মাধ্যমে শেষ হয়।