নিয়তি রানীর ঘুরে দাঁড়ানোর প্রচেষ্টা

সাতক্ষীরা থেকে লিপিকা গাইন

সংগ্রাম, শক্তি আর আত্মবিশ^াসে সমাজ ব্যবস্থাপনায় দূর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে নারীরা। পুরুষের পাশাপাশি নারীরা সমাজ সংসারে নানা ধরনের উন্নয়ন কর্মকান্ডে নিজেদের সম্পৃক্ত করছেন। নারীরা পারিবারিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখে উন্নয়নের সহযাত্রী হয়ে অসামান্য ভূমিকা পালন করেছেন।

বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণের সাতক্ষীরা জেলার উপকুলীয় শ্যামনগর উপজেলার সুন্দরবন সংলগ্ন বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের পূর্ব পোড়াকাটলা গ্রামের নিয়তি রানী (৩৫) তেমনই একজন উদ্যোগী নারী। স্বামী, শ্বশুর -শাশুড়ী ও এক সন্তানসহ ৪ সদস্যের ছোট সংসার তাঁর। স্বামী অনুপম মন্ডল (৩৮) পেশায় দিনমজুর। তাদের একমাত্র মেয়ে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। নিজের সাহস ও কর্মকৌশলের মাধ্যমে কৃষি কাজ এক অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। তিনি নিজেদের মাত্র ২৫ শতক বসত ভিটায় মৌসুম ভিত্তিক কৃষি ফসল উৎপাদন করে পারিবারিক পুষ্টি চাহিদা পূরণ করার পাশাপাশি অবশিষ্ট সবজি স্থানীয়ভাবে বিক্রি করে বাড়তি আয় করেন।

তাদের সংসারে অভাব অনাটন লেগেই থাকে। তার মধ্য দিয়েও নিরন্তর প্রচেষ্টা করেন ঘুরে দাঁড়ানোর। স্বামীর একার আয়ে সংসারের খরচ ঠিকমত সংকুলান হয় না। তাই তিনি পরিবারে কৃষি কাজের পাশাপাশি বাড়তি কিছু আয়ের চিন্তা করেন। বাড়িতে তিনি ৪টি দেশি জাতের ছাগল পালন করছেন। নিয়তি রানী প্রশিক্ষণ না নিয়েও নিজ প্রচেষ্টায় সেলাই মেশিনের (দর্জির কাজ) কাজ শিখেছেন। সেলাই এর কাজ করে পরিবারে অবদান রাখছেন। এলাকার নানা বয়স ও শ্রেণী পেশার মানুষেরা তার সেলাই এর কাজ পছন্দ করেন। এজন্য তার কাজের চাহিদা অনেক বেশি। প্রতিদিনি এই কাজ করে প্রায় ১০০-২০০ টাকা আয় করতে পারেন বলে তিনি উল্লেখ করেন। এই কাজের মাধ্যমে টাকা আয় করে সংসার পরিচালনার পাশাপাশি মেয়ের লেখাপড়ার কাজে ব্যয় করছেন।

নিয়তি রানী বলেন, “স্বামীর একার আয়ে টিকে থাকা সম্ভব নয়। তাই স্বামীর হাতকে শক্তিশালী করার জন্য পাশে দাঁড়াচ্ছি। সেলাই কাজের পাশাপাশি যদি ছিটকাপড় তুলতে পারতাম তাহলে আমার অনেক লাভ হত। কিন্ত টাকাার জন্য সেটা করা সম্ভব হচ্ছে না।”

নিয়তি রানীর মতো হাজারো নারী লবণাক্ত এলাকার উপকূলীয় অঞ্চলে নিজেদের আগ্রহ, প্রচেষ্ট ও বুদ্ধিমত্তায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় পুরুষের পাশাপাশি ভিন্ন ভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ ও টিকে থাকার সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে স্বপ্ন জয়ের আশায় ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

happy wheels 2

Comments