শ্যামনগরের আদি যমুনা: খনন হলে একটি সম্ভাবনাময় স্থান হতে পারে
সাতক্ষীরার শ্যামনগর থেকে গাজী আল ইমরান
ময়লা নোংরা আর আবর্জনায় ভরপূর শ্যামনগরের আদি যমুনা। আর এ থেকে দূষিত হচ্ছে গোটা এলাকা। জোয়ার ভাটা না থাকায় জলাবদ্ধতার অভিশাপে ভোগে সাধারণ মানুষেরা। এই আদি যমুনা নদী দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলের ঐতিহাসিক নদী আদি যমুনা। যমুনা নদী ইছামতির শাখা। ইছামতি ভারতে ২৪ পরগনা জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে দেবহাটা উপজেলার রাঁধানগরের কাছে এসে বাংলাদেশ ও ভারতের সীমানা নির্ধারণ করে পূর্বমুখো হয়ে নাজিমগঞ্জের পূর্ব পাশ দিয়ে কালিগঞ্জের মধ্যে প্রবেশ করে। কালিগঞ্জের মথুরেশপুরের পূর্ব ধার দিয়ে যমুনা মৌতলাকে পূর্ব পাশে রেখে ভূরুলিয়া ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে শ্যামনগর উপজেলায় প্রবেশ করে। এরপর শ্যামনগরের সদরের মধ্য দিয়ে ঈশ্বরীপুরের সোনার মোড়ের কাছে এসে যমুনা ও ইছামতি আবার দু’ভাগে ভাগ হয়। যমুনা পশ্চিম দিকে চিংড়াখালী সোনাখালীর মধ্য দিয়ে মাদার নদী নাম ধারণ করে সুন্দরবনে প্রবেশ করে। সুন্দরবনের মধ্যে মাদার নদী নামে কিছু দূর অগ্রসর হয়ে পুনরায় যমুনা নদী নাম ধারন করে বঙ্গপোসাগরে প্রবেশ করেছে। যার ফলে পূর্বে কোনদিন জলাবদ্ধতার অভিশাপে খুব একটা ভুগতে হয়নি এ অঞ্চলের মানুষের।
কিন্তু বর্তমানে প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে শ্যামনগর সদর ইউনিয়নসহ আশপাশের কয়েকটি ইউনিয়নে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। বর্ষা মৌসুমে হাজার হাজার বিঘা কৃষি জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্তসহ জনসাধারণের জানমালের অপূরণীয় ক্ষতি হয়। যমুনা তার বহমান হারানোর সাথে সাথে হারিয়ে ফেলেছে তার দখল দারিত্ব। যমুনার বুক চিরে গড়ে উঠেছে বিশাল বিশাল সুউচ্চ ভবন। যেভাবে পেরেছে দখল করেছে রেখেছে এই যমুনা নদী। একসময় লঞ্চ স্টিমার চললেও এখন একটি নৌকার দেখা মেলেনা এই নদীতে। এলাকার সকল ময়লার চাপে প্রায় শ্বাসরুদ্ধ হওয়া যমুনা নদীকে বাঁচাতে উদ্যোগ নিয়েছে শ্যামনগর উপজেলা প্রশাসন এবং শ্যামনগর সদর ইউপি চেয়ারম্যান এড. জহুরুল হায়দার বাবু। যমুনা খনন এবং পরিষ্কারের মাধ্যমে এই বদ্ধ যমুনার বুক দিয়ে বয়ে যাবে ইছামতির পানি এমনটাই আশা করছে স্থানীয় জনগণ।
গত বুধবার এই যমুনা নদীর পুনঃখননের উদ্বোধন করেন সাতক্ষীরা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পিপি এড. জহুরুল হায়দার বাবুসহ প্রশাসনের কর্তারা। স্থানীয় মানুষের দাবি, যমুনা খননের সাথে সাথে যমুনার দু’পাশের দখল দারিত্ব উচ্ছেদ করে ফুটপাথ তৈরি এবং বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তোলা। ফুটপাথ তৈরির মাধ্যমে একদিকে যেমন প্রধান সড়কের যানজট নিরসনে সহায়ক হবে ঠিক তেমনিভাবে যমুনার দখলদারিত্ব কমে আসবে বলে মনে করছেন অনেকে। এছাড়া যমুনা পুনঃউদ্ধারের মাধ্যমে দু’পাশে বসার ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন হতে পারে ছোট বড় সকলের জন্য বিনোদনের স্থান। যমুনার এক এক অংশে এক একভাবে বিনোদন কেন্দ্র করা যেতে পারে। জায়গাটি সাজসজ্জা, আলোক সজ্জার মাধ্যমে মানুষের জন্য সান্ধ্যকালীন আড্ডার স্থান হিসেবেও তৈরি করা যেতে পারে।
আজকের দূষিত মৃত প্রায় আদি যমুনা হয়ে যেতে পারে ফুলদানি। যমুনা বহমান হলে অবশ্যই এই এলাকায় ব্যাপকভাবে দূষণ কমে আসবে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। বর্তমান সময়ে ডাকবাংলো রোডে যেতে হলে নাক চেপে যাতায়াত করে এখানকার মানুষ। দূষণ আর দূর্গন্ধে ভরা মৃত আদি যমুনা মানুষের কাছে যেন বিরক্তির বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। যমুনাকে কেন্দ্র করে এখানকার মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হতে পারে। বিনোদন কেন্দ্র বা লেক তৈরি হলে অবশ্যই এখানকার মানুষ তাদের অবসর সময় কাটাতে যমুনার পাড়ে বসবেন বা এই স্থানে এসে সময় কাটাবেন। আর এখানে তৈরি হবে ভ্রাম্যমান দোকান পাঠ। সান্ধ্যকালীন আড্ডা বা অবসর কাটাতে বর্তমান সময়ে মানুষকে ছুটতে হয় শহর ছেড়ে বিভিন্ন স্থানে। সুতরাং স্থানটিতে বিভিন্নভাবে সুসজ্জিত করলে অবশ্যই একটি সফলতার মুখ দেখবে বলে মনে করেন অনেকেই। যমুনা নিয়ে কথা হলে বীরমুক্তিযোদ্ধা নজরুর ইসলাম বলেন, ‘আমরা চাই যমুনার বুকে আগের মতো জোয়ার ভাটা আসুক। এছাড়া স্থানটিতে একটি বিনোদন কেন্দ্র হওয়া খুবই জরুরি। তাহলে যমুনা দূষিত এবং দখলদারিত্ব কমবে।’
যমুনা উদ্ধার নিয়ে সদর ইউপি চেয়ারম্যান এ্যাড. জহুরুল হায়দার বাবুর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ‘সকলের সহযোগিতা পেলে অবশ্যই যমুনার বুকে জোয়ার ভাটা খেলবে। আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে বাঁচাতে হলে অবশ্যই যমুনার এই দূষণ কমাতে হবে এবং খননের মাধ্যমে জোয়ার ভাটা আসার ব্যবস্থা করতে হবে, যা খননের কাজ আমরা ইতিমধ্যে শুরু করেছি।’
বিষয়টি নিয়ে সহকারি কমিশনার ভূমি আব্দুল হাই সিদ্দিকী এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ‘যমুনা উদ্ধারে আমরা ইতিমধ্যে মাপ জরিপের কাজ হাতে নিয়েছি। মাপ জরিপের কাজ শেষ হলেই অবৈধ স্থাপনা ভেঙে ফেলা হবে।’