নদী আমাদের মা জননী
সিংগাইর, মানিকগঞ্জ থেকে শাহীনুর রহমান, ও শারমিন আক্তার
‘নদীর সুরক্ষা ও ব্যবস্থাপনায় নারীর ভূমিকা’ প্রতিপাদ্য বিষয়কে সামনে রেখে গতকাল আন্তর্জাতিক নদী রক্ষা দিবস উপলক্ষে কালিগঙ্গা নদী রক্ষার দাবিতে এক মানববন্ধন ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক’র সহায়তায় বলধারা, জামশা কৃষি উন্নয়ন কমিটি এই মানববন্ধন আয়োজন করে।
গোলাই কালিগঙ্গা কৃষক কৃষাণী সংগঠনের সভাপতি সেলিনা বেগমের সভাপতিত্বে মানববন্ধন ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মানিকগঞ্জ জেলা কৃষি উন্নয়ন সংগঠনের সভাপতি মো. করম আলী মাস্টার, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বলধারা ইউনিয়ন কৃষি উন্নয়ন সংগঠনের সভাপতি মো. আব্দুল লতিফ, বারসিক আঞ্চলিক সমন্বয়কারি বিমল রায়, প্রোগ্রাম অফিসার শিমুল কুমার বিশ্বাস, কাস্তা কৃষক কৃষাণি সংগঠনের নির্বাহী সদস্য আব্দুল হালিম মিয়া, গোলাই কালিগঙ্গা কৃষক কৃষাণী সংগঠনের সহ-সভাপতি মনোয়ার বেগম। এ ছাড়াও অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন কাস্তা, নবগ্রাম, গোলাই সংগঠনের কৃষক কৃষাণি সংগঠনের সদস্যবৃন্দ এবং বারসিক কর্মকর্তা শারমিন আক্তার।
মানববন্ধনে প্রধান অতিথি মো. করম আলী মাস্টার বলেন, ‘নদীকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে বাঙালির সংষ্কৃতি। গরু, ছাগল ও মানুষের গোসল, নারীদের গৃহস্থালী কাজে নদীর পানিই ব্যবহার হয়ে থাকে। কৃষি কাজে নদীর পানি সেচ হিসেবে ব্যবহার করে অনেক কৃষক। নদীতে মাছ ধরে জিবীকা নির্বাহ করে অনেক পেশাজীবী মানুষ। কাজেই কালিগঙ্গা নদী রক্ষার জন্য সকল শ্রেণী ও পেশার মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে।’ গোলাই কালিগঙ্গা কৃষক কৃষাণী সংগঠনের সভাপতি সেলিনা বেগম বলেন, ‘কাস্তা, গোলই, নবগ্রাম মাটিকাটা এই চারটি গ্রামের প্রায় ৩০০০ কৃষক কৃজি কাজে এই নদীর পানি ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু কলকারখানার বর্জ্য, অবৈধ দখল, অপরিকল্পিত বালু উত্তোলন করার কারণে নদীর পানি দূষিত হচ্ছে এবং মানুষের ব্যবহারের অনুপযোগি হয়ে যাচ্ছে। হারিয়ে যাচ্ছে দেশীয় জাতের মাছ।’
বারসিক কর্মকর্তা শিমুল কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘বাংলাদেশ নদীনালা, খাল, বিল ভরা একটি দেশ। এ জন্যই এ দেশ নদী মাতৃক। কিন্তু নদীমাতৃক কথাটির গভীরতা আমরা আজ বুঝিনি। নদী হচ্ছে মা, নদী হচ্ছে জননী। তাই নদীর প্রতি মানুষের করণীয় কি, নদী রক্ষায় মানুষের দায়িত্ব ও দায়বদ্ধতা কতটুকু এসব বিষয় স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্যই এই দিবসটি আয়োজন করা হয়েছে।’ বারসিক কর্মকর্তা বিমল রায় বলেন, ‘নদীমাতৃক দেশের ভুখন্ডের ্উপর দিযে প্রবাহিত হচ্ছে ২৩০টির অধিক নদী। এই সব নদী প্রাণবৈচিত্র্য ও পরিবেশ রক্ষায় অন্যতম ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশের নদী কেন্দ্রিক মানুষের জীবন জীবিকা নির্ভর করে এই নদীর উপর। তাই নদী কেন্দ্রিক মানুষের জীবন জীবিকার তাগিদেই আমাদের নদীগুলো রক্ষার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।’
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকরীরা ‘নদী বাঁচায় প্রাণ প্রকৃতি’ ‘নদীর প্রাণ রক্ষা চাই’, ‘আমার নদী আমার জল, বইতে দাও অবিরল’, ‘আমি কৃষক আমি সেচ কাজের জন্য নদীর পানি ব্যবহার করি’, ‘আমি নদী আমায় দূষিত করোনা’, ‘আমি জেলে আমি আমার পেশা টিকিয়ে রাখতে সচল নদী চাই’, ‘আমি নারী আমি গৃহস্থালী কাজের জন্য নদীর পানি নিরাপদ চাই’ এবং ‘আমি শিশু আমি সাতার শিখতে নদী চাই’ এ ধরনের স্লোগান বুকে ধারণ করে কালিগঙ্গা নদী রক্ষার দাবি জানান।