ধলেশ্বরীতে আবারও ধ্বনিত হবে প্রাণের স্পন্দন!
মানিকগঞ্জ থেকে বিমল চন্দ্র রায়
ধলেশ্বরী নদী খনন চাই, নদীতে পানি জল চাই, দেশী মাছ চাই, নৌকা বাইচ দিতে চাই, নদীর জলে সাঁতার কাটতে চাই, গরু, ছাগল ঝাপাতে চাই, নদীর পারে দোয়ারি পেতে ইচা ও বাইম, বাইল্যা ধরতে চাই, হ্যতাইয়া মাছ মারতে চাই, নদীতে সাঁতারের পাল্লা দিতে চাই, এক ডুবে কত দূর যেতে পারি তা দেখতে চাই, কেঁদ্যা ফ্যাক্যাফেকি করতে চাই, নদীর পাড়ে পিচ্ছল খেলতে চাই/দিতে চাই। চাই পালতোলা নৌকা, চাই খেয়া/গুদারা নৌকা। আরো অনেক কিছু করতে চাই ধলেশ্বরী নদীর জলে। এগুলো হচ্ছে ধলেশ্বরী নদীর পাড়ে বসবাস করা বিভিন্ন মানুষের বক্তব্য।
![](https://barciknews.com/wp-content/uploads/2021/08/204242132_510836716879613_3731145404546645314_n-1024x768.jpg)
বারসিক’র সহযোগিতায় ২০১৩ সাল থেকে ধলেশ্বরী নদী বাঁচাও আন্দোলন কমিটি এই ধারাটি পূর্নজীবনের জন্য ধলেশ্বরী খনন করে ¯্রােতধারা ফিরিয়ে আনার দাবি জানায়। স্বাস্থ্যমন্ত্রী, জাতীয় নদী কমিশন, জাতীয় সংসদের সদস্য, জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের কাছে দাবিনামা তুলে ধারা হয় এবং একাধিকবার মতবিনিময় করা হয়েছে। স্থানীয় সাংবাদিকবৃন্দ লেখনির মাধ্যমে, জাতীয়ভাবে পরিবেশ ও নদী রক্ষা আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিবর্গ বিভিন্ন সমাবেশে, মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণ করে এই দাবিকে যৌক্তিক পর্যায়ে উত্থাপন করেছেন। একাধিকবার জাতীয় নদী কমিশন চেয়ারম্যান, জেলা প্রশাসকসহ উর্দ্ধতন কর্মকর্তা নদীর বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করে নদী খননের বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন। এই সব চেষ্টায় গত বছর ধলেশ্বরীর নদীর তিল্লি মুখ থেকে সিংগাইরের তালেবপুর ইউনিয়ন পর্যন্ত ৪৪ কিলোমিটার ১০০ ফিট প্রশস্ত ও ১০ ফিট গভীর আকারে খননের কার্যক্রম শুরু হয়। খনন কার্যক্রম এখনও চলছে। নানান প্রতিকূলতা ও সীমাবদ্ধতার মধ্য দিয়ে খনন চলছে। এ খনন কার্যক্রমে ধলেশ^রী পাড়ের বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠীর মধ্যে আগ্রহ বিরাজ করছে। তারা আশাবাদী হচ্ছেন যে, নদীতে আবারও প্রাণ ফিরে আসবে, তারা নদীতে আগের মতো জল আসবে! ধলেশ^রী নদীর এই খনন আন্দোলনে বারসিক সংস্থা সমন্বয়কারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে। স্বাভাবিকভাবেই বারসিক’র মানিকগঞ্জ কর্মকর্তারা এই প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত থাকায় গর্ববোধ করছেন। ধলেম্বরী নদী বাচাঁও আন্দোলন কমিটিতে ধলেশ্বরী নদীর পাড়ের জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক, সাামাজিক, সাংবাদিক, উন্নয়নকর্মী ও সচেতন নাগরিকবৃন্দও এই আনন্দের ভাগীদার! তাঁদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও দাবি ছাড়া এই বিশাল কর্মযজ্ঞ সম্পন্ন হতো না!
![](https://barciknews.com/wp-content/uploads/2021/08/196816988_313598866925328_6306608546923763339_n-1-1024x768.jpg)
উল্লেখ্য, মানিকগঞ্জ জেলা ১২নং কৃষি প্রতিবেশ অঞ্চলের অন্তর্ভূক্ত। বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ এবং শতকরা ৮০ ভাগের বেশি সরাসরি বা পরোক্ষভাবে কৃষি কাজে জড়িত। বেশিরভাগ এলাকাই নদীবিধৌত এবং বেসিন টাইপ। কৃষি প্রতিবেশগত অঞ্চল হলো সেই এলাকা যেখানে একই পরিবেশ এবং মাটির বৈশিষ্ট্যেও ফসল উৎপাদন হয়। ফসল বিন্যাস মোটামুটি একই রকম। কৃষি প্রতিবেশগত অঞ্চলগুলো সুনির্দিষ্ট কিছু বৈশিষ্ট্য উপর ভিত্তি করে সংজ্ঞায়িত করা হয় এবং সেগুলো হবে ভূ-প্রকৃতি, পানির সহজলভ্যতা, ফসল বিন্যাস, মৌসুম, মাটির ধরণ এবং জোয়ার ভাটার প্রকৃতি। মানিকগঞ্জ জেলার ভূ-ভাগ নদীবাহিত পলি দ্বারা গঠিত। বিশেষত: পদ্মা, কালিগঙ্গা, ধলেশ্বরী, ইছামতি, করতোয়া, তিস্তা ও ব্র²পুত্র প্রভৃতি নদ নদী যুগ যুগ ধরে এ অঞ্চলের ভূমি গঠনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে। ধলেশ্বরী নদী টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জ জেলার একটি নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য ২৯২ কি:মি:। নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার। পাউবো কর্তৃক নদী পরিচিতি তালিকায় ধলেশ্বরী নদী ২৭নং। নদীটি মূলত বাংলাদেশের মধ্যভাগ দিয়ে প্রবাহিত একটি জলধারা। এটি যমুনা নদীর একটি শাখা। ধলেশ্বরী বর্তমানে যমুনা নদীর শাখা, কিন্তু প্রাচীনকালে এটি সম্ভবত পদ্মা নদীর মূল ধারায় ছিল। ১৬০০ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে পদ্মার গতিপথ ব্যাপকভাবে পাল্টে গেছে। ধারণা করা হয়, কোনো সময়ে পদ্মার মূল ধারাটি রামপুর-বোয়ালিয়া এলাকা ও চলনবিল এর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে, পরে ধলেশ্বরী ও বুড়িগঙ্গা নদীর মাধ্যমে মেঘনায় গিয়ে পড়তো। ১৮ শতকে পদ্মার নি¤œ প্রবাহটি ছিলো আরো দক্ষিণে। ১৯ শতকের মাঝামাঝি সময়ে মূল প্রবাহ ধলেশ্বরী থেকে দক্ষিণের প্রবাহে, তথা কীর্তিনাশা নদীতে সরে যায়, যা বর্তমান পদ্মার মূল গতিপথ। ধলেশ্বরী নদীর পারের মানুষের নদীর সাথে তাদের বংশধরেরা বছরের পর বছর পরস্পর সর্ম্পক, নির্ভরশীলতা ও বাস্তবতাকে নিয়ে বসবাস করে আসছে। ধলেশ্বরী নদী প্রতিবছর তার অবস্থান পরিবর্তন করে বর্তমান এলাকা দিয়ে প্রবাহিত হয়ে আসছে।
ধলেশ্বরী নদী এই চড়াই উৎরাইয়ের পর বর্তমানে সাটুরিয়া উপজেলার তিল্লী গ্রামের দুইটি ধারায় বিভক্ত হয়ে একটি ধারা কালিগঙ্গা নাম ধারণ করে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়ে পুনরায় সিংগাইর এলাকায় মিলিত হয়ে প্রবাহিত হতে থাকে। অন্য ধারাটি পূর্ব দিক দিয়ে ১২টি ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক গ্রামের পাশ দিয়ে ৫০ কি: মি: এর অধিক দৈর্ঘ্য প্রবাহিত হয়ে দুইটি ধারা মিলিত হয়ে ধলেশ্বরী নামে প্রবাহিত হয়ে মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ জেলা দিয়ে মেঘনায় মিলিত হয়। পূর্বের ধারাটি পলি পড়ে প্রমত্ত নদী খালে পরিণত হয়।
সহায়তা: উইকিপিডিয়া ।