‘অচাষকৃত উদ্ভিদের পাড়া মেলায় নবীনদের উৎসাহ দিলেন প্রবীণ ব্যক্তিগণ’

নেত্রকোনা থেকে হেপী রায়

‘আমরা ছোড বেলায় যে শাক তুইল্যা খাইছি, অহনের পোলাপান এইতা চোখ্যেও দ্যাহেনা। খাওন তো দূরের কথা। আমরার কোনো অসুখ নাই। এইডি খাইয়া অহনো সুস্থ্য আছি। ঝি-বৌয়েরা আইলসা (অলস), শাক টুহাইলে পরিশ্রম অয়। সবাই তৈয়ার খাইতো চায়। এইতা বালা কইরা তেল, মসলা দিয়া রানলে গোশ্ত পাছে পইরা থাকবো। মেলা কইরা পোলাপানরে চিনান লাগে। আমরা এমনেই চিনছি, মা-দাদী টুহায়া আনছে। হেরার লগে গিয়া গিয়া নিজেও টুহাইছি। আর অহনের পোলাপানে চিনা তো দূরের কথা, খাইতোও চায়না”। নকশী কাঁথা যুব সংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত অচাষকৃত উদ্ভিদের পাড়ামেলা’র উদ্বোধন করতে গিয়ে সুলতানগাতী গ্রামের প্রবীণ কৃষাণী পরিষ্কারের মা এই কথাগুলো বলেন।

IMG_20181122_115119
তিনি আরো বলেন যে, তাঁদের ছেলেবেলায় দেখেছেন মাঠের পর মাঠ অনাবাদী জমি ছিল, বসতভিটার আশেপাশে প্রচুর অব্যবহৃত জায়গা ছিল। সে সমস্ত জায়গায় বউত্তা, ঘৃত্তি কাঞ্চন, দলকলস ইত্যাদি শাক জন্মাতো। কিন্তু এখন আর এসব চোখে পড়ে না। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন প্রথমত জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য খোলা জায়গাগুলোতে বাড়িঘর তৈরি, জমিতে অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ব্যবহারে মাটি নষ্ট হয়ে গেছে। যে জন্য আগের মতো শাক জন্মায়না।
সম্প্রতি সুলতানগাতী গ্রামের কিশোরী ও কৃষাণীগণ বিভিন্ন অচাষকৃত উদ্ভিদ যা খাবার ও ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয় সেগুলো সংগ্রহ করেন। এরপর ডালা ও কুলায় সাজিয়ে তারা সেগুলো প্রদর্শন করেন। মেলার উদ্দেশ্য সম্পর্কে আলোচনা করেন বারসিক কর্মকর্তা। এরপর মেলা দেখতে আসা প্রবীণ কৃষাণীদের মধ্য থেকে জহুরা আক্তার ও হালিমা আক্তার বিভিন্ন অচাষকৃত উদ্ভিদের পুষ্টি ও ঔষধি গুণাগুণ সম্পর্কে আলোচনা করেন।

কৃষাণী হালিমা আক্তার বলেন, ‘অযত্নে এই শাক জন্মায়। চাষ করণ লাগেনা, সার-বিষ কিচ্ছুই লাগেনা। তাই খাইতেও আমরার কষ্ট নাই। এই শাক খাইলে অনেক উপকার অয়। কোনডা মুখের রুচি বাড়ায়, কোনডা খাইলে পেটের অসুখ হয়না। চিনলে আর ঠিকমতো রাইন্ধা খাইতে পারলে দুব্বা ঘাসও স্বাদ লাগে আর উপকার পাওয়া যায়।’

IMG_20181122_115059
আলোচনা শেষে প্রত্যেক অংশগ্রহণকারীদের নিয়ে আসা অচাষকৃত উদ্ভিদ গণনা করে তালিকা করা হয়। সেই ভিত্তিতে প্রতিযোগীদের স্থান নির্ধারণ করা হয়। মেলায় প্রথম স্থান অর্জন করেন সুলতানগাতী গ্রামের কৃষাণী শামসুন্নাহার আক্তার। দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন শিক্ষার্থী ও যুব সংগঠনের সদস্য সোনিয়া আক্তার এবং তৃতীয় স্থান অর্জন করেন কৃষাণী শাহানা আক্তার।

পাড়ামেলায় উপস্থিত প্রত্যেক অংশগ্রহণকারীগণ অচাষকৃত উদ্ভিদ সংরক্ষণের অঙ্গীকার করেন। এবং গ্রামের প্রবীণ সদস্যদের কাছ থেকে এর ব্যবহার শিখে নেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। প্রবীণ নারীগণ ধান কাটার মৌসুম শেষ হলে অচাষকৃত উদ্ভিদের রান্না প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানের আয়োজন করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। পরে প্রতিযোগিদের মাঝে পুরষ্কার বিতরণ করেন প্রবীণ কৃষাণী ফিরোজা আক্তার। পুরষ্কার বিতরণের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয়।

happy wheels 2

Comments