নানা আয়োজনে পালিত হলো আন্তর্জাতিক খাদ্য দিবস

ভূমিকা

প্রতিবছর জাতিসংঘ ঘোষিত ১৬ অক্টোবর বিশ্ব খাদ্য দিবস হিসেবে পালিত হয়। এ বছরের বিশ্ব খাদ্য দিবসের প্রতিপাদ্যে ‘খাদ্য নিরাপত্তা ও গ্রামীণ উন্নয়নে বরাদ্দ বাড়িয়ে স্থানান্তরের ভবিষ্যত বদলানোর’ আহবান জানানো হয়েছে। এখনো পর্যন্ত বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়া কী পৃথিবীজুড়েই খাদ্য উৎপাদিত হচ্ছে কৃষির সনাতনী ধারায়। খাদ্য উৎপাদনের মূল কারিগর এখনও কৃষক ও কৃষিজমি। যদিও পৃথিবীতে কেবলমাত্র উৎপাদন নয়, অনেক জনগোষ্ঠী বিষেশত গ্রামীণ নারীরা কিছু খাদ্য সংগ্রহ করে থাকেন নানা প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় রাষ্ট্রেই দিন দিন কৃষিতে রাষ্ট্রীয় প্রণোদনা ও জাতীয় বাজেট কমে যাচ্ছে। কৃষিতে কৃষকের মঙ্গলের স্বার্থে ভর্তুকীর পরিমাণ একেবারেই তলানিতে ঠেকেছে। নিরাপদ খাদ্যের উৎপাদন ও যোগানও দিনকে দিন কমে যাচ্ছে।খাদ্য উৎপাদনের মূল স্থলগুলো এখনো বিশ্বের প্রাচীন বসতি গ্রামগুলো। যেহেতু নগরীয় কৃষি এবং বাণিজ্যিক খাদ্য উৎপাদনের ক্ষেত্র খাদ্য নিরাপত্তায় খুব একটা ভূমিকা রাখে না তাই গ্রামীণ খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থাকেই বরাদ্দ বাড়িয়ে খাদ্য নিরাপত্তার ভিতকে মজবুত রাখা জরুরি। নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনসহ খাদ্য উৎপাদনে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবিতে বারসিকসহ নানান সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এবারের আন্তর্জাতিক খাদ্য দিবস পালন করেছে।সাতক্ষীরা সদর থেকে আসাদুল ইসলাম, সাতক্ষীরার শ্যামনগর থেকে মননজয় মন্ডল এবং মানিকগঞ্জ থেকে মো. নজরুল ইসলাম ও শাহিনুর রহমান শাহিন এর পাঠানো প্রতিবেদন ও আলোকচিত্র নিয়ে এই প্রতিবেদনটি তৈরি করা হলো:

সাতক্ষীরা সদর: প্রকৃতিতে প্রাপ্ত খাদ্যের পুষ্টিগুণ বর্ণনা
সাতক্ষীরায় আন্তর্জাতিক খাদ্য দিবস পালিত হয়েছে। গতকাল সাতক্ষীরা সিলভার জুবলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আন্তর্জাতিক খাদ্য দিবস উপলক্ষে বারসিক ইনস্টিটিউট অব এ্যাপ্লাইড স্ট্যাডিজ এবং শিক্ষা, সংস্কৃতি ও বৈচিত্র্য রক্ষা টিম আয়োজনে ‘এসো প্রকৃতিকে জানি, পুষ্টির গল্প শুনি’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

Satkhiraউক্ত অনুষ্ঠানে সাতক্ষীরার পুষ্টির ফেরিওয়ালা খ্যাত যুব উদ্যোক্তা রুহুল কুদ্দুস ও বাবর আলী প্রকৃতিতে প্রাপ্ত শাক লতা-পাতার পুষ্টিগুণ তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সিলভার জুবিলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক চায়না ব্যানার্জী, সহকারি শিক্ষিকা তফুরা খাতুন, ফাতেমা খাতুন, আফরোজা ফাতেমা, সুমিত্রা রানী, সুপর্ণা রানী।

Satkhira2

এছাড়া আরো উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা, সংস্কৃতি ও বৈচিত্র্য রক্ষা টিমের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক নাহিদ হাসান, প্রচার সম্পাদক নূরুল হুদা, গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিকের যুব সংগঠক ফজলুল হক, কমিউনিটি ফ্যাসিলেটর মাহিদা মিজান প্রমূখ।

শ্যামনগর: রান্না প্রতিযোগিতা আয়োজন

প্রকৃতির গাছ-গাছড়া, শাক, লতা, গুল্ম, ফল, মূল ও উদ্ভিদ প্রভৃতি পারিবারিক খাদ্য চাহিদা পূরণে বিশেষ ভূমিকা বহন করে। প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেওয়া এসকল অচাষকৃত উদ্ভিদবৈচিত্র্যের সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ব্যক্তি, সংগঠন ও রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে চলে নানা কর্মসূচী। তেমনি এক ভিন্ন আয়োজনে রান্না প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।

রান্না প্রতিযোগিতায় বৈচিত্র্যময় খাবার (4)

বিশ্ব খাদ্য দিবস উপলক্ষে গতকাল ১৬ অক্টোবর কাশিমাড়ি ইউনিয়নের জয়নগর গ্রামের কৃষক প্রভাস চন্দ্র মন্ডলের বাড়িতে স্থানীয় জনগনের উদ্যোগে ও বারসিক সহযোগিতায় কুড়িয়ে পাওয়া অচাষকৃত শাকের স্বাদ গ্রহন ও রান্না প্রতিযোগিতা অনুষ্টিত হয়। রান্না প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী ১১ জন নারী প্রত্যেক নারী একটি করে সবজি/খাবার রান্না করে। ১৮ রকমের (বুনো আমড়া, গাদামনি, কলার মোচা, কাটাকচু, কালকচু, হেলাঞ্চ, বাসতক্তা, বুনো আলু, কেওড়ার আচার, কলমি, ডমুর, বুনো কচু, থানকুনি, তেলাকচু, গিমে শাক, ঘেটকুল, কাথাশাকু, কালোবনকচু) কুড়িয়ে পাওয়া শাক রান্না করেন। যে সমস্ত শাক প্রতিযোগিতায় রান্না করা হয় তা এ সকল নারীরা বাড়ির আঙিনা, খাল-বিল, জলাশয় থেকে নিজেরা কুড়িয়ে আনেন।

রান্না প্রতিযোগিতায় বৈচিত্র্যময় খাবার (5)

গ্রামীণ এক উৎসবমুখর পরিবেশে কুড়িয়ে পাওয়া শাক রান্না প্রতিযোগিতায় গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল খাদ্য রান্না ও স্বাদ গ্রহণ কর্মসূচি। ব্যতিক্রমধর্মী এ অনুষ্ঠানে বিচারক হিসেবে উপস্থিত ছিল স্থানীয় ইউপি সদস্য, নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থী, সাংবাদিক, কৃষি অফিসার, কৃষক-কৃষাণী এবং স্থানীয় জনগণ। রান্নার প্রধান উপকরণ কুড়িয়ে পাওয়া শাক রান্না সম্পর্কে উপস্থিত সকলকে অবহিত করেন এবং বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। সকল বিচারককের বিবেচনায় বুনো আমরা রান্না করে ১ম স্থান অধিকার করেছেন নাছিমা বেগম গাদোমনি শাক রান্না করে ২য় হয়েছেন মিনতী বালা এবং মাহমুদা খাতুন থানকুনির বড়া করে ৩য় হয়েছেন। নতুন প্রজন্মের মাঝে আগ্রহ মনোযোগ সৃষ্টিতে ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে গ্রামীণ নারীর অবদানকে স্বীকৃতি প্রদানের লক্ষ্যে বিজয়ী এবং অংশগ্রহণকারী সকল গ্রামীন নারীদের পুরস্কার প্রদান করা হয়।

মানিকগঞ্জ: ভেজালমুক্ত খাদ্য উৎপাদন ও ভোগ না করার প্রত্যয়
এই বছরে বিশ্ব খাদ্য দিবসের ডাক- খাদ্য নিরাপত্তা ও গ্রামীন উন্নয়নে বরাদ্দ বাড়াও ।স্থানান্তরের ভবিষ্যত বদলাও। এই প্রতিপাদ্যকে সামনে নিয়ে সারা দেশে সরকারি ও বেসরকারিভাবে দিবস পালিত হচ্ছে। গতকাল মানিকগঞ্জের স্যাক কার্যালয়ে উৎপাদক, ক্রেতা-ভোক্ত ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সাথে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

22553668_1868240176820499_273111191_o

সভায় ভোক্তা অধিকার বিষয়ক সংগঠন ক্যাব এর সভাপতি বিশিষ্ট সাংবাদিক গোলাম ছারোয়ার ছানুর সভাপতিত্ত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন স্যাক এর নির্বাহী প্রধান এ্যাড দীপক কুমার ঘোষ, সমাজসেবক শফিকুল ইসলাম চপল, জাসদ নেতা ইকবাল খান, কষক আবুল হোসাইন, বারসিক আঞ্চলিক সমন্বয়কারি বিমল রায়, সহযোগী গবেষক মো: নজরুল ইসলাম, হাঙ্গার প্রজেক্ট ই.সি. আব্দুস সালাম,তারুণ্যের আলো যুব জলবায়ু সংগঠন এর উপজেলা সভাপতি নুর মোহাম্মদ রনি, বারসিক কর্মকর্তা, রাশেদা আক্তার, গাজী শাহদত হোসেন বাদল, মো. জামাল হোসেন প্রমূখ।

22532385_1868240296820487_1229850916_o
এছাড়াও একই দিনে মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলার বলধারা ইউনিয়নের নবগ্রামে নবু সরদারের বাড়িতে বন্ধন ঐক্য পরিষদ কৃষক কৃষাণী সংগঠনের আয়োজনে বারসিক এর সহযোগিতায় বিশ্ব খাদ্য দিবস উপলক্ষে অচাষকৃত উদ্ভিদের পাড়া মেলা ও অচাষকৃত উদ্বিদের রান্না প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ৫৪ প্রকারের অচাষকৃত উদ্বিদ এবং ৩৬ প্রকারের রান্ন প্রতিযোগিতা হয়। অনুষ্ঠানে নবু সরদারে সভাপতিত্ত্বে বক্তব্য রাখেন কৃষক নেত্রী মর্জিনা বেগম, বারসিক আঞ্চলিক সমন্বয়কারি বিমল রায়, বারসিক কর্মকর্তা শাহিনুর রহমান, গাজী শাহাদত হোসেন বাদল প্রমূখ। বক্তারা বিশ্ব খাদ্য দিবসে খাদ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য সরকারকে কৃষি বিষয়ের উপর আরো নজরদারির অনুরোধ জানান এবং যারা নিরলসভাবে খাদ্য উৎপাদন করছে সেই সকল খাদ্য যোদ্ধাদের উপর বিন¤্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।

happy wheels 2

Comments