হারিয়ে যাচ্ছে বৈচিত্র্যময় নিরাপদ খাদ্যের উৎস
সিংগাইর, মানিকগঞ্জ থেকে শারমিন আক্তার ও শাহীনুর রহমান
“এই শাকগুলান অহন আর আগের মতন পাওয়া যায় না। আমি অনেক দুর থ্যাইকা এই শাক কুড়াই আনছি।” কথাটি বলেছেন ষাটর্ধো নারী আমেনা বেগম। গত মঙ্গলবার সিংগাইর উপজেলার বলধারা ইউনিয়নের নবগ্রাম নবু সরদারের বাড়িতে কুড়িয়ে পাওয়া উদ্ভিদের রান্না প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে এ কথা বলেন তিনি।
নবগ্রাম বন্ধন ঐক্য পরিষদ ও বারসিক’র যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত কুড়িয়ে পাওয়া উদ্ভিদের রান্না প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন গ্রামের ২০ জন নারী। প্রত্যেকে বাড়ির আশেপাশে জন্মানো হেলেঞ্চা শাক, কলমি শাক, হাচি শাক, কচ শাক, টাকা থানকুনি, খারকুন শাক, সচনে পাতা, তেলাকুচ শাক, ঢেকিশাকসহ ২০ প্রকারে খাদ্য রান্না করেন। রান্না প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারীদের পুরস্কার হিসাবে দেশী ফলের গাছ প্রদান করা হয়।
একসময় বাড়ির আশেপাশে জন্মানো এ সব লতাপাতা এক সময় গ্রামীণ মানুষের দৈনন্দিন আহারের তালিকায় থাকলেও মানুষের খাদ্য অভ্যাস পরিবর্তনের কারণে এসব শাক খাওয়ার প্রবণতা কমে এসেছে। তাছাড়া যথাযথ সংরক্ষনের জায়গা কমে যাওয়ায় দিন দিন কমে আসছে বৈচিত্র্যময় এসব নিরাপদ খাদ্য ভান্ডার। তাই নিরাপদ খাবার চিহ্নিতকরণ, সংরক্ষণ, ব্যবহার ও বিকাশ এর ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে উৎসব মুখর রান্না প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন বলে অংশগ্রহণকারীরা মন্তব্য করেন।
গ্রামের ৫০ জন নারী পুরুষের স্বতঃস্ফুর্ত অংশগ্রহণের পাশাপাশি এ রান্না প্রতিযোগিতায় উপস্থিত ছিলেন মানিকগঞ্জ জেলা কৃষি উন্নয়ন সংগঠনের সভাপতি করম আলী মাস্টার, প্রকৃতি প্রেমিক কৃষক ইব্রাহিম মিয়া এবং বারসিক এর কর্মকর্তা বৃন্দ। রান্না শেষে সকল প্রতিযোগি তাদের রান্নাকৃত খাদ্যের গুনাগুণ বর্ণনা করেন।
নিরাপদ খাদ্যের উৎস্য বিষয়ক আলোচনায় কৃষক ইব্রাহিম মিয়া বলেন, “আমাদের বাড়ির আশে পাশে জন্মানো উদ্ভিদের রযেছে নানা ধরনের ঔষধি গুণ। যা খেলে আমরা গ্যাস্টিক আলছার, চোখের সমস্যা, পেটের ব্যাথ্যা, ডায়রিয়াসহ নানাবিধ রোগের হাত থেকে রেহাই পেতে পারি।” করম আলী মাষ্টার বলেন, “এসব উদ্ভিদ কোন রাসায়নিক সার ও বিষ নেই। মানব দেহের জন্য এ খাাবারগুলো খুব নিরাপাদ এবং পুষ্টি সমৃদ্ধ। নিরপাদ খাদ্য হিসেবে এ ধরনের উদ্ভিদ আমাদের সংরক্ষণ করা নৈতিক দায়িত্ব।”
এক সময় বাংলাদেশের খাদ্য সংকট ছিল। তবে নিরাপদ ও বৈচিত্র্যময় প্রাকৃতিক খাদ্য ভান্ডার ছিল ভরপুর। বিশেষ করে প্রাকৃতিক জলাশয়ে মাছ, বাগানে ছিল বৈচিত্র্যময় ফল এবং বাড়ির আনাচে কানাচে আপন মনে জন্মানো নানা জাতের শাকসবজি। যা গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর খাদ্য সংকট নিরসনে বড় ধরনের ভূমিকা রাখতো।
বাংলাদেশে এখন খাদ্য সংকট নিরসন হয়েছে। তবে বেড়েছে নিরাপদ খাদ্য সংকট। তাই নিরাপদ খাদ্য সংকট দুর করতে হলে সমাজের সকল স্তরের মানুষকে ঔক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। বৃদ্ধি করতে হবে খাদ্য বৈচিত্র্যতা। সংরক্ষণ করতে হবে প্রাকৃতিক সম্পদের উৎস স্থল।