বৃক্ষ দানে পূণ্য হয়!
তানোর, রাজশাহী থেকে অমৃত সরকার
“বৃক্ষদানে পূন্য হয়” এই ভাবনাকে সামনে নিয়ে মো. আ. রহিম (৫৯) আজ থেকে ২৫ বছর আগে লজ্জ্বাবতী, গুরূচন্ডাল, মহুয়া গাছ দিয়ে শুরু করেছিলেন বিভিন্ন প্রজাতির গাছ সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করার। বর্তমানে তাঁর সংগ্রহে গুরুচন্ডাল, চন্দ্রমূল, তালমূল, মানিকমূল, সাদা লজ্জাবতীর মতো ৭০টি ঔষধি গাছ রয়েছে। এছাড়া লং, ছোট এলাচ, বড় এলাচ, দারুচিনির মতো ৯টি মসলা জাতীয় গাছও রয়েছে তাঁর। বকুল, মহুয়া, গন্ধরাজ ইন্দ্রকমলের মতো ২৮টি ফুলের গাছও শোভা পাচ্ছে তার সংগ্রহশালায়। মিষ্টি তেতুল, জামরুল, করচা, আমলকি, কাজুবাদাম, আঙ্গুর পেঁয়ারার মতো ২৬টি ফলের গাছও রয়েছে তাঁর।
মো. আ. রহিম তানোর উপজেলার শিবনদীর তিরবর্তী কামারগাঁ ইউনিয়নের শ্রীখন্ডা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি বর্তমানে তানোর উপজেরার ভাইস চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালন করছেন। পাশাপাশি নিজ উদ্যোগে বাড়িকে গড়ে তুলেছেন একটি আদর্শ গ্রামের বাড়ি হিসেবে। বাড়ি প্রধান ফটকেই চোখে পড়বে মহুয়া ও শিউলির গাছ। বাড়ির উঠানের মধ্য খুবই পরিকল্পিতভাবে লাগানো আছে পুদিনা, শতমূল, উদয়গিরী, সেত চন্দন, তেলাকুচা, দুধসাগর, হাড়জোর, কমলা, কলাবতী, গন্ধভাদাল,ভূই কুড়রা, ফণিমনসা, কবরী, করবী গাছের মতো অনেক দুষ্পাপ্য গাছ। সকল ধরনের গাছ মিলিয়ে বাড়িতে মোট ১৩৩ প্রজাতির গাছ আছে তাঁর বাড়িতে। এ প্রসঙ্গে মো. আ. রহিম বলেন, “গাছ হচ্ছে প্রকৃতির সব থেকে বড় উপাদান, গাছ না থাকলে আমাদের প্রকৃতি এতো সুন্দর হতো না”।
প্রতিবছর জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় মাস থেকে বিনামূল্য বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারা বিতরণ করেন তিনি। পাশাপাশি তাঁর উদ্যোগে চলে বিভিন্ন গাছের উপকারি দিকগুলো সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করার কাজ। নিজ গ্রামের পাশাপাশি তানোর, হরিদেবপুর, তালন্দ, চৌবাড়িয়া, মান্দা, কেশরহাট এলাকা থেকেও বিভিন্ন মানুষ এসে তাঁর কাছ থেকে গাছের চারা নিয়ে যান। যারা এই গাছের চারা নিয়ে যান তাঁদেরকে মো. আ. রহিম পরামর্শ দেন যে এই কাজগুলো নিজে লাগিয়ে রক্ষা করার কথা।
গত বছর (২০১৬) তিনি ৩৬৫ জন মানুষকে বিভিন্ন প্রকার ঔষধি গাছ বিতরণ করেছেন। এ প্রসঙ্গে গ্রামের ওপর একজন কৃষাণী শ্রীমতি আল্পনা রানী (৪০) বলেন, “এই বাড়ি থেকে আমারা গরু, ছাগল, ভেড়ার বিভিন্ন রোগে প্রয়োজন এমন গাছ সহযোগিতা পেয়ে থাকি খুবই সহজে। পাশাপাশি মানুষের বিভিন্ন রোগেও গাছ সহযোগিতা নেওয়া হয়।” নিজের বাড়িকে বিভিন্ন প্রজাতির গাছে সমৃদ্ধ করার জন্য মো. আ. রহিম পাশর নাটোর, বগুড়া, নওগাঁ, চাপাই-নবাগঞ্জ, পাবনা জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ঘুরে বেরিয়েছেন গাছের খোঁজে।
তাঁর গাছের সংগ্রহ ও সংরক্ষণ দেখার জন্য বিভিন্ন সেচ্ছাসেবক সংগঠন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান থেকেও মানুষ আসেন তাঁর বাড়িতে। বিভিন্ন প্রকার গাছের রক্ষা ও বৃক্ষ দিয়ে এলাকা পরিপূর্ণ করার উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে তিনি গ্রামের কিছিু মানুষকে নিয়ে ২০০৬ সনে গড়ে তুলেছেন “কামারগাঁ সামাজিক বনায়ন সমিতি”। এই সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন তিনি। সতিতি গঠনের পর সামাজিক বন বিভাগ, পানি উন্নয়ন বোর্ডে যোগাযোগ করে কামারগাঁ, আমিদপুর, বড়াইল, গাঙ্গঘাটি, রতনডাঙ্গা, শ্রীখন্ডা মৌজা মিলে বিলকুমারী ও শিবনদীর ৪কিলোমিটার বাঁধে লাগিয়েছেন আম, জাম ও নিমের ১৫০০টি চারা। বর্তমানে চারাগুলো বড় হয়ে উঠেছে। গাছগুলো থেকে প্রাপ্ত ফলগুলোর একটি বড় অংশ গ্রামের বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানে দান করা হয়, যা দিয়ে প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নেও ভূমিকা রাখা হচ্ছে।
সমাজের কিছু মানুষ থাকে যারা সবসময়ই চিন্তা করেন সমাজসেবা করার। বিনিময়ে সমাজ থেকে কিছু পান না পান তা নিয়ে তাঁরা কখনও ভাবেন না! বৃক্ষপ্রেমী আ. রহিম হচ্ছেন সেই ধরনের মানুষ যিনি সমাজের মানুষকে গাছ দিয়ে সেবা করে যাচ্ছেন। গাছের চারা বিনামূল্যে বিতরণের মাধ্যমে তিনি পরিবেশ সংরক্ষণেও ভূমিকা রেখেছেন। তিনি মনে করেন, বৃক্ষ দান করা একটি পূণ্যের কাজ। মো. আ. রহিমের এই উদ্যোগ ছড়িয়ে পড়ুক সবার মাঝে।