এসো আমরা একুশের চেতনায় জেগে উঠি
নেত্রকোনা থেকে রুখসানা রুমী
আমরা বাঙালি, বাংলা আমাদের মায়ের ভাষা। ভাষা ও সংস্কৃতিই হলো একটি জাতির পরিচয়। ভাষা হারালে সংস্কৃতিও হারিয়ে যাবে। ভাষা ও সংস্কৃতি হারালে জাতির অস্তিত্বই হারিয়ে যায়। মানুষ জন্মের পর তার নিজস্ব পরিবেশে ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠে, আর এই বেড়ে ওঠার সাথে সাথে আয়ত্ব করে মায়ের শিখানো বুলি। আর এই বুলিই হলো তার ভাষা, যাকে আমরা মাতৃভাষা বলে থাকি। যে ভাষার মাধ্যমে মানুষ সহজেই নিজের কথা বা মনের ভাব অন্যের নিকট প্রকাশ করতে পারে। মানুষ নিজের মাতৃভাষায় যেকোন বিষয়কে খুব সহজেই আয়ত্ব করতে পারে, যা’ অন্য করো ভাষায় সম্ভব হয়না। এই মাতৃভাষার অবমূল্যায়ন করার অর্থ নিজের অস্থিত্বকে অস্বীকার করা। বাঙালি জাতি ও বাংলা ভাষাভাষিদের জন্য একুশে ফেব্রুয়ারি অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ ও অর্থবহ দিন। বাঙালি জাতি তথা বিশ্ববাসী তাই ২১ শে ফেব্রুয়ারিকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা ও মর্যাদার সাথে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্মরণ ও পালন করে থাকে।
তাই ‘২১কে চিনি, ভাষার ইতিহাস জানি’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে নেত্রকোনা সদর উপজেলার কাইলাটি ইউনিয়নের বালি গ্রামের যুব সংগঠন, কৃষক সংগঠন, কিশোরী সংগঠনের উদ্যোগে গ্রামীণ সংস্কৃতিসহ বাঙালি ভাষা ও সংস্কৃতি বিলুপ্তি থেকে রক্ষা এবং বাঙালি সংস্কৃতি ধারণ ও চর্চায় বর্তমান প্রজম্মের শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করতে গত ২১শে ফেব্রুয়ারি আয়োজন করা হয় বিভিন্ন ধরণের অনুষ্ঠানের। একুশের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে যুবসমাজ ও কাইলাটি ইউনিয়ন পরিষদের যৌথ উদ্যোগে যুব প্রজম্ম ও শিক্ষার্থীদের নিজস্ব সংস্কৃতি চর্চা এবং ভাষা শুদ্ধভাবে বলা ও লেখায় উদ্বুদ্ধ করতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে বিভিন্ন শ্রেণী, পেশা, বয়স ও প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদ্যাপন করা হয়। ভোরে প্রভাত ফেরীর মাধ্যমে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ, আলোচনা অনুষ্ঠান, কবিতা আবৃত্তি, চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পুরস্কার বিতরণের মধ্য দিয়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় উদ্যাপন করা হয়। আন্তজার্তিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ছোট ছোট শিশুরা চিত্রাংকন প্রতিযেগিতা, আবৃত্তি প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কাইলাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কালিয়াটি ইউনিয়ন পরিষদের সচিব খাইরুল ইসলাম। অনুষ্ঠান শেষে চিত্রাংকন এবং কবিতা আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কৃত করা হয়।
বারসিক এর প্রতিনিধি রুখসানা রুমী ভাষার বিকৃতি বন্ধ করে, শুদ্ধ উচ্চারণে বাংলায় কথা বলতে এবং শুদ্ধভাবে লিখতে শিক্ষার্থীসহ সকল অংশগ্রহণকারীদের আহবান জানান। তিনি বলেন, ‘শুধুমাত্র আজকের এই দিনে শহীদ মিনারে ফুল দিলেই, আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করলেই ভাষার প্রতি, ভাষা শহীদদের প্রতি ও ভাষা সৈনিকদের প্রতি সম্মান, শ্রদ্ধা ও মর্যাদা জানানো হবে না। ভাষা শহীদদের প্রতি সত্যিকারের শ্রদ্ধা ও মর্যাদা প্রদান করা হবে তখনই, যখন আমরা শুদ্ধভাবে ও সঠিক উচ্চারণে বাংলা ভাষা বলা চর্চা করি। আমি আশা করি আজকের এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বর্তমান প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা একুশের মাহাত্ম ও তাৎপর্যকে অন্তরে ধারণ করে বাংলা ভাষার প্রতি আরও আন্তরিক হবে।
অনুষ্ঠান সম্পর্কে কাইলাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘আমার বিদ্যালয়ে এ ধরণের অনুষ্ঠান এর পূর্বে কখনো হয়নি, এই অনুষ্ঠানটি ব্যতিক্রমী, শিক্ষণীয় ও অনুকরণীয়। আজকের এই অনুষ্ঠানের ফলে আমার বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা খুবই উপকৃত হয়েছে। তারা ভাষা আন্দোলন ও আন্তর্জ াতিক মাতৃভাষা দিবসের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পেরেছে। এবিষয়ে লেখাপড়ায় তারা আরও আগ্রহী হবে।’ তিনি তার বিদ্যালয়ে এ ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য বারসিক ও যুব সংগঠনকে ধন্যবাদ জানান এবং অদূর ভবিষ্যতেও এ ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজনের অনুরোধ করেন। সবশেষে সমবেত কন্ঠে “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি” গানটি গেয়ে এবং সঠিক ভাষা শেখার অঙ্গীকারের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের পরিসমাপ্তি ঘটে।