প্রসূতি মায়েদের মধ্যে কিশোরীদের গাছের চারা বিতরণ
নেত্রকোনা থেকে রুখসানা রুমী
বিভিন্ন সময়ে নিউজ ও ফিচারের মাধ্যমে আমরা নেত্রকোনা জেলার সদর উপজেলার কাইলাটি ইউনিয়নের ফচিকা গ্রামের ‘অগ্রযাত্রা কিশারী সংগঠন’র কিশোরী শিক্ষার্থী সদস্যদের নিজ গ্রামের কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবেশ, অধিকার ও সচেতনতার উন্নয়নে বিভিন্ন ধরণের কার্যক্রম বাস্তবায়নের বিষয়ে জানতে পেরেছিলাম। সংগঠনের একিশোরী সদস্যরা এলাকার দরিদ্র ও অসহায় পরিবারের সদস্যদের জন্য সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান প্রদত্ত সেবা/সুযোগ পাইয়ে দিতে স্থানীয় সরকার তথা ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা প্রশাসন ও বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত যোগাযোগ করে সাধ্য অনুযায়ী সেবাসমূহ পাইয়ে দিয়েছে এবং এখনও দিচ্ছে। শুধু সরকারি/বেসরকারি সেবাসমূহই নয়, এ সংগঠনের সদস্যরা নিজেদের উদ্যোগে সামর্থ্য অনুযায়ী নিজস্ব তহবিল দিয়েও অনেক ধরণের উন্নয়নমূলক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে থাকে।
গ্রামের কোন পরিবারে নারী গর্ভবতী হলে কিশোরী সংগঠনের উদ্যোগে ওই নারীকে পুষ্টিকর খাবার যেমন-ডিম ৪ হালি, কলা ৪ হালি, পেয়ারা, লেবু, কচুশাক ইত্যাদি দিয়ে এবং অভিজ্ঞ স্বাস্থ্য কর্মীর মাধ্যমে স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি, নিয়মিত গর্ভবতী মায়ের ওজন মাপা, রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস পরিমাপ, নিয়মিত স্বাস্থ্য কেন্দ্রে বা কমিউনিটি ক্লিনিকে স্বাস্থ্য চেকআপের পরামর্শ দিয়ে থাকে। এছাড়াও তারা গর্ভবতী মা ও প্রসূতি মায়েদেরকে বাড়ির অনাচেকানাচে প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত কুড়িয়ে পাওয়া শাক-সবজি খাওয়ার পরামর্শ দেয়। কোন পরিবারে নতুন সন্তানের আগমন ঘটলেই কিশোরী সদস্যরা দলবদ্ধভাবে গিয়ে সে সন্তানকে পৃথিবীতে স্বাগত জানায় একটি ফলদ ও ঔষধি গাছের চারা দিয়ে। কিশোরীদের ধারণা একটি সবুজ সুন্দর সমাজ ও দেশ গড়তে শিশু বয়স থেকেই উদ্যোগ নিতে হবে।
‘অগ্রযাত্রা কিশোরী সংগঠন’র কাজের ধারাবাহিকতায় করোনাকালীন সময়ে স্বাস্থ্য সেবাসহ বিভিন্ন ধরণের কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেছে। গত ৭ নভেম্বর কিশোরীরা গ্রামের ৫ জন প্রসূতি মায়েদেরকে নবজাতক সন্তানদের ভবিষ্যতের জন্য উন্নত পরিবেশ গড়ে তুলতে এবং নবজাতকদের ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভবিষ্যতের ডিপোজিট গড়তে ৩টি করে ফলদ ও কাঠের (জাম, পেয়ারা ও মেহগনি) গাছের চারা বিতরণ করেছে। এ বিষয়ে কিশোরী সংগঠনের উদ্যোগী সদস্য প্রীতি আক্তারের বক্তব্য, ‘এসব নবজাতক সন্তানদের বড় হবার জন্য প্রয়োজন পুষ্টিকর খাবারের। যে পুষ্টি বৈচিত্র্যময় সবজিসহ বিভিন্ন ফলমূল থেকে আসে। এছাড়াও এসব নবজাতক সন্তানরা বড় হলে তাদের ভরণপোষণ, শিক্ষা ও চিকিৎসার জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন হবে। আমাদের সংগঠনের উদ্যোগে প্রসূতি মায়েদের জন্য দেয়া এসব গাছ একদিন তাদের সম্পদ হয়ে উঠবে।’ প্রীতি আক্তার বলেন, ‘এসব গাছ থেকে তারা যেমন ফল খেতে পারবে, তেমনি প্রয়োজনে এসব ফল বিক্রি করে সন্তানদের বিভিন্ন চাহিদা পূরণ করতে পারবে। কাঠ জাতীয় গাছের চারা ২০/২৫ বছর পর একটি পূর্ণাঙ্গ গাছে পরিণত হবে। সন্তান বড় হলে এ গাছ বিক্রি করে তাদের শিক্ষা, চিকিৎসা ও উন্নয়নে খরচ করতে পারবে। এসব পরিবার ও শিশুদের মধ্যেও বৃক্ষ রোপণের আগ্রহ বৃদ্ধি পাবে এবং তারা ভবিষ্যতের সঞ্চয় হিসেবে পতিত জমিতে বৈচিত্র্যময় গাছের চারা রোপণে আগ্রহ হবে।
গর্ভবতী মা, প্রসূতি মা, নবজাতক শিশু, প্রবীণ ও নারীদের জন্য একটি সুষম সমাজ তৈরিতে ‘অগ্রযাত্রা কিশোরী সংগঠন’র এ ধারাবাহিক প্রয়াস এলাকায় বেশ সারা ফেলেছে। এলাকার নারীরা এই কিশোরী সংগঠনকে ভরসা করতে আরম্ভ করেছে। সংগঠনটি মাঝে মাঝেই অভিজ্ঞ স্বাস্থ্য কর্মী নিয়ে এবং গর্ভবতী ও অসুস্থ নারীদেরকে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে গিয়ে স্বাস্থ্য সেবা সুনিশ্চিত করছে। কিশোরীদের সাংগঠনিক উদ্যোগের ফলে এলাকার দরিদ্র অসহায় গর্ভবতী নারী, প্রসতি মা ও শিশুরা পুষ্টিকর খাবার ও নিয়মিত স্বাস্থ্য সেবা পেতে সক্ষম হচ্ছেন। গ্রামের সকলে কিশোরীদের এহেন উদ্যোগ বাস্তবায়নে সাধ্যানুযায়ী সহযোগিতা করছে। আমরা এইসব কিশোরীদের সার্বিক উন্নতি কামনা করছি।