সিংগাইরে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষাদিবস পালিত
সিংগাইর মানিকগঞ্জ থেকে শিমুল বিশ্বাস
‘আমায় গেঁথে দাও না মাগো, একটা পশাল ফুলের মালা, আমি জনম-জনম ধরে রাখবো ধরে ভাই হারানার জ্বালা।’ ষঢ়ঋতুর বাংলায় ঋতুরাজ বসন্তের শুরুটা বাঙালিদের মনে এখনো নাড়া দেয় স্বজন হারানোর বেদনা। মনে পরে সেই সব স্বজনদের কথা যাদের জন্য আজ আমরা মায়ের ভাষায় কথা বলতে পারি।
গতকাল শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। বাংলাদেশের সাথে তাল মিলিয়ে বিশ্বের অনেক দেশই এ দিনটাকে গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেছে। ১৯৫২ সালের এদিনেই বাঙালি চেতনায় উন্মেষ ঘটেছিল, যার পরিসমাপ্তি ঘটেছে ১৯৭১ এ স্বাধীনতা প্রাপ্তির মধ্য দিয়ে। ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর থেকে একুশে ফেব্রুয়ারি জাতীয় ভাষা দিবস পালিত হয়ে আসছিল। তবে ২০০০ সালে এ দিনটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি পায়।
একই পথ পরিক্রমায় মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর উপজেলার শহীদ রফিক স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন এবং বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক’র যৌথ উদ্যোগে পালিত হয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০২১। বারসিক সিংগাইর রিসোর্স সেন্টার সংলগ্ন উন্মুক্ত স্থানে নিজেদের তৈরি শহীদবেদীতে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন সংগঠনের সদস্যবৃন্দ। শ্রদ্ধাজ্ঞাপন ছাড়াও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে কেন্দ্র করে আয়োজন করে শিশু কিশোরদের চিত্রাংকন, ২১ এর কবিতা আবৃতি, দেশাত্ববোধক গান ও ভাষাআন্দোলন সংশ্লিষ্ট কুইজ প্রতিযোগিতার। তাছাড়া আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে সংগঠনের সদস্যদের প্রচেষ্টায় একটি দেয়ালিকা তৈরি করা হয় ।
অন্যদিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবা আক্তার, সাহিত্য সম্পাদ প্রদীপ হালদার, কোষাদক্ষ প্রশেঞ্জিৎ শীল, নয়াবাড়ি কৃষক সংগঠনের সভাপতি ইমান আলী, এলাকার সংস্কৃতি ব্যক্তিত্ব রবীন্দ্র নাথ সরকার, বারসিক কর্মকর্তা শাহীনুর রহমান, অনন্যা আক্তার, সঞ্জিতা কীর্তুনীয়া প্রমুখ।
আলোচনায় বক্তরা বলেন, ‘এদিনটি আমাদের জন্য আনন্দাশ্রুতে ভরা। কারণ একদিকে এ দিনেই আমরা হারিয়েছিলাম আমাদের আপনজনদেরকে, অন্যদিকে এদিন থেকেই আমাদের স্বাধীনতার স্বপ্নের বীজ রোপিত হয়েছিল। যার চুড়ান্ত ফল পেয়েছি ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের মধ্য দিয়ে। তাই আমরা যেন ভুলে না যাই সেই সব শহীদদের কথা, যারা প্রাণ দিয়ে আমাদের মুক্ত আকাশে, মুক্ত বাতাস গ্রহণ করা এবং প্রাণখুলে কথা বলার সুযোগ করে দিয়েছেন। আমাদের আচার আচরণ যেন কোনভাবেই সেই সব শহীদদের ত্যাগের মহিমাকে কলুষিত না করে, সেদিকে লক্ষ্য রাখাই হবে শহীদদের প্রতি জানানো বড় শ্রদ্ধার্ঘ্য।’