সীমান্তের পানি সংকটের সমাধান কোথায়

কলমাকান্দা নেত্রকোনা থেকে গুঞ্জন রেমা
নেত্রকোণা জেলার কলমাকান্দা উপজেলার সীমান্তবর্তী মানুষের নিত্যদিন যেসব প্রতিকূলতার সাথে যুদ্ধ করতে হয় তার অন্যতম একটি হলো সুপেয় পানির সংস্থান। পাহাড়ি ঝর্ণা, ছড়া ও নদী থাকলেও শুকনো মৌসুমে পানি পাওয়া যায় না এসব উৎস থেকে। ছড়া কিংবা ঝিড়ি, নদী কিংবা ঝর্ণা, পুকুর কিংবা কূপ কিংবা টিউবওয়েল পানির এসব প্রধান উৎসগুলোও শুকিয়ে যায় শুকনো মৌসুমে। ফলে দেখা দেয় পানির জন্য চরম সংকট। যার জন্য নদী বা ছড়ার মধ্যে গর্ত করে পানি সংগ্রহ করতে হয়। যদিওবা এ পানি চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত না। কিংবা এতটা সহজলভ্যও না। গর্ত করে যে পানি সংগ্রহ করা হয় সেটি কতটা স্বাস্থ্যসম্মত বা বিশুদ্ধ সেটারও কোন নিশ্চিয়তা নেই। তবুও পানির অভাবে এসব পানিই ব্যবহার করতে হচ্ছে সেখানকার মানুষকে। খাওয়া, গোসল, বাসন-কোসন পরিষ্কারক করা, কিংবা নিত্যদিনের পানির চাহিদা এ পানি দিয়েই মেটাতে হচ্ছে। সীমান্তবর্তী মানুষদের প্রতি দিন সুপেয় পানির জন্য গড়ে ৩/৪ কিলোমিটার হাটতে হয়। ফলে কায়িকশ্রম ও সময় দুটোই অপচয় হচ্ছে।


সীমান্তবর্তী মানুষের পানির জন্য কষ্ট দুই ধরণের। এক বর্ষা মৌসুমে দুই শুকনো মৌসুমে। অধিক বৃষ্টিপাতের কারণে বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ি ঢলে ঘরবাড়ি ভেসে যায়। এ সময় হাজার লিটার পানির মাঝেও সুপেয় এক লিটার পানি সংগ্রহ করা অনেক কষ্টের এখানকার মানুষের জন্য। অথচ পানির কারণে নিজ ঘরে থাকার মত পরিবেশ থাকে না। আবার শুকনো মৌসুমে দেখা দেয় সুপেয় পানির জন্য চরম সংকট। নিজেদের জ্ঞান দক্ষতা ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে পানির সংকট দূর করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন সেখানকার বাসিন্দারা।


২২ শে মার্চ বিশ্ব পানি দিবস এ বছরের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল “শান্তির জন্য পানি”। কিন্তু সীমান্তবর্তী এলাকায় পানির জন্য যত অশাান্তি বিরাজমান। কত দিবস আসে কত দিবস যায় কিন্তু পানির সংকট দূর হয় না। বরং পানির সংকট দিনকে দিন আরো চরম আকার ধারণ করে। পানির জন্য এমন হাহাকার ও কষ্টের কথাগুলো উত্তর লেঙ্গুরা, কাঠালবাড়ি, তারানগর ও শিবপুর গ্রামের কিছু আদিবাসী শিক্ষার্থী তাদের চিত্রাংকনের মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা করছে এই বিশ্ব পানি দিবসে।


সবাই পানি সংগ্রহের ভিন্ন ভিন্ন উৎস ও পদ্ধতিকে কেন্দ্র অংকন করলেও একজন ব্যতিক্রমি একটি ছবি অংকন করেছে নবম শ্রেণী ছাত্রী সুমি হাজং। চারিদিকে পানি আর পানি মাঝখানে কয়েকজন মানুষ গলা অবধি পানিতে দাঁড়িয়ে আছে। এমন ছবি অংকনের কারণ জিজ্ঞেস করায় সে জানায়, সবাই পানি সংগ্রহ করা নিয়ে অংকন করেছে। কিন্তু বর্ষাকালে যখন পাহাড়ি ঢলের কারণে সব কিছু ভেসে যায়। সেটাতো কেউ অংকন করেনি। এই ছবির মাধ্যমে সে বোঝানোর চেষ্টা করছে যে পানির সংকট যেমন সমস্যা তেমনি পানির আধিক্য বা প্রাচুর্য্যতাও একটি সমস্যা। শুধু পানির সংকট থাকলেই যে সমস্যা সৃষ্টি হয় এমন নয় বরং বর্ষাকালে যখন পাহাড়ি ঢলে ঘরবাড়ি ভেসে যায় তখনও পানি সমস্যা সৃষ্টি করে। এ সমস্যার শেষ কোথায় জানা নেই এখানকার মানুষের।

happy wheels 2

Comments