করোনাকালে তরুণদের পেশা : অঞ্চলভিত্তিক পেশা ও চাহিদার দিকগুলো গুরুত্ব দিতে হবে

রাজশাহী থেকে শহিদুল ইসলাম
করোনা ভাইরাসের কারণে গোটা বিশ্বে মানুষ আগের তুলনায় বেশী বেকার হয়ে যাচ্ছে। এক প্রতিবেদনে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) বলেছে, “করোনার কারনে আড়াই কোটি মানুষ চাকরি হারাতে পারে।” আইএলও এর প্রতিবেদন অনেকটা প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রিক দিকগুলোকে বেশী গুরুত্ব দিয়ে তৈরী হয়েছে। পাশাপাশি অপ্রাতিষ্ঠানিকভাবে মানুষের যে বেকারত্ব এবং পেশাহীনতার দিকটিও গুরুত্বপূর্ণ। পেশা বা কর্মহীনতার দিকটি চলে আসলে তরুণ-যুবকদের দিকটিও অনেক বেশী গুরুত্ব পায়। বিশেষ করে বাংলাদেশে মোট জনগোষ্টীর তিনভাগের একভাগই এই তরুণ জনগোষ্টী। বাংলাদেশ সরকার উন্নয়ন পরিকল্পনায় তাই সবসময় যুবকদের প্রাধান্য দিয়েছে।

সরকার তরুণদের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে উন্নত দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশে দৃঢ় পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। কিন্তু মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে সারাবিশ্বের প্রতিটি দেশ যেমন অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে; তেমনি বাংলাদেশও এর কোন অংশে কম না। সমস্যা কাটিয়ে উঠতে সরকার বিভিন্ন খাতে প্রণোদনা দিচ্ছে। সরকার করোনাত্তোর পরিস্থিতিতে তরুণ যুবকদের জন্য গ্রামে আত্ম-কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে কর্মসূচী ঘোষণা করেছে। যেখানে শহর তরুণদের বেকারত্ব ঘোচানোর জন্য আরো উপযোগী কিছু কর্মসূচী থাকা উচিত। শহরে হাজার হাজার তরুণ বেকার হয়েছে। তাদের দিকটিও গুরুত্ব দিতে হবে। তরুণদের অঞ্চল ভিত্তিক চাহিদার দিকগুলোও গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ একেক অঞ্চলের বৈচিত্র্য এবং বৈশিষ্ট্য কিছুটা হলেও ভিন্নতা এবং আলাদা বৈশিষ্ট্য বহন করে। সমসাময়িক সময়ে তরুণদের পেশা ভাবনা এবং চাহিদার দিকগুলোকেও গুরুত্ব দিতে হবে।

সম্প্রতি উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক এবং বরেন্দ্র অঞ্চল যুব সংগঠন ফোরামের যৌথ উদ্যোগে “করোনাকালে স্বেচ্ছাসেবী তরুণদের করণীয়” শীর্ষক অনলাইন ভিত্তিক মুক্ত আলোচনায় বরেন্দ্র অঞ্চলের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার তরুণ যুবকরা করোনাকালে অনলাইন ভিত্তিক দক্ষতা উন্নয়নসহ বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষি ভিত্তিক তরুণদের পেশা এবং শহরের তরুণদের পেশার সংকটের দিকটি তুলে ধরেন।এতে অংশগ্রহণ করেন আদিবাসী যুব পরিষদের যুব নেতা উপেন রবিদাস, শহর তরুণের প্রতিনিধি সূর্যকিরণ বাংলাদেশ যুব সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শাইখ তাছনিম জামাল, গ্রামের তরুণ যুবকদের প্রতিনিধি রাজশাহীর তানোর উপজেলার গোকুল মথুরা গ্রামের স্বপ্নচারী যুব উন্নয়ন সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি রুবেল হোসেন মিন্টু, আদিবাসী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি সাবিত্রী হে¤্রম, বারসিকের তরুণ কৃষি গবেষক অমৃত কুমার সরকার। উক্ত অনলাইন মুক্ত আলোচনায় বরেন্দ্র অঞ্চলের শতাধিক তরুণ যুবকরা কমেন্টের মাধ্যমে তাদের বিভিন্ন মতামতগুলো জানানোর চেষ্টা করেন।

মুক্ত আলোচনায় তরুণ যুবকরা এলাকা ভিত্তিক যুবকদের সমস্যা, সম্ভাবনার দিকগুলোকে প্রাধান্য দিয়ে সকল ধরনের সরকারি বেসরকারি সহযোগীতার কথা বলেন। তাঁরা বলেন কৃষির পাশাপাশি তরুণদেরকে কারিগরি দক্ষতা উন্নয়নের দিকটিতেও গুরুত্ব দিতে হবে। করোনাকালে সংকট মোকাবেলায় যেমন কৃষি উৎপাদন জরুরী হয়ে পড়েছে তেমনি এই পণ্য মার্কেটিং বা মানুষের কাছে পৌছে দিতে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তা নেয়া হচ্ছে। তথ্য প্রযুক্তির দক্ষতাগুলো থাকলে তারা নিজেরাও অনলাইনভিত্তিক ব্যবসা এবং বিভিন্ন সেবাগুলো সৃষ্টি এবং তা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারবেন। করোনাভাইরাস প্রার্দুভাবের আগে যখন সবকিছু স্বাভাবিক ছিলো তখন তরুণদের পেশা পরিকল্পনা ছিলো সেই সময়ের মতো। কিন্তু করোনাকালে বা করোনাত্তোরকালে সেই পেশার সাথে বর্তমান বাস্তবতা মিলিয়ে নিতে পাচ্ছেনা বর্তমান তরুণ সমাজ। তাই হঠাৎ করে পেশা পরিকল্পনা পরিবর্তন, দক্ষতার অভাব, সামজিক পরিস্থিতি সবকিছু মিলে তরুণ যুবকদের মধ্যে নানা প্রশ্ন জাগানিয়া দিচ্ছে। তাই বর্তমান পরিস্থিতি এবং আগামীতে পরিবর্তিত বিশ্বে তরুণদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে আমাদের আরো সুস্পষ্টভাবে ভাবতে হবে। একই সাথে তরুণ যুবকদের নিজস্ব মতামত, সম্ভাবনাগুলোকেও গুরুত্ব দিতে হবে।

happy wheels 2

Comments