প্রবীণদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিৎ করা জরুরি
সাতক্ষীরা শ্যামনগর থেকে বিশ্বজিৎ মন্ডল
বারসিক’র সহায়তায় এবং কাশিমাড়ি ইউনিয়নের জয়নগর কৃষি নারী সংগঠনের উদ্যোগে গতকাল কৃষাণী রোজিনা বেগমের বাড়িতে করোনাকালনি সময়ে প্রবীণ জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিষয়ে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মতবিনিময় সভায় জয়নগর গ্রামের প্রবীণ কৃষক-কৃষাণী, জেলে, নতুন প্রজন্ম ও বারসিক বিশ^জিৎ মন্ডল ও বিধান মধু অংশগ্রহণ করেন।
সভায় প্রবীণ ব্যক্তি নুর আহম্মদ, আবুল বাসার, ফয়সাল ইসলাম জানান, করোনার প্রথম যে সময় গেছে সেখানে তাঁরা হতাশাগ্রস্ত ছিলেন। তাঁরা মনে করেছিলেন যে, হয়তোবা বাঁচবেন না। কারণ তাঁদের বয়স হয়েছে এবং বিভিন্ন ধরনের অসুখ বিসুখে আক্রান্ত। তারা বলেন, ‘কোন কিছু হলে আগেই আমাদের উপর প্রভাব পড়বে। এছাড়াও সরকারি-বেসরকারিভাবে নানান প্রচার যে বয়স্কদের সাবধানে থাকতে হবে। আগে বয়স্কদের টিকা দিতে হবে। এসব ভেবেই আমরা আরো বেশি অসুস্থ বোধ করেছিলাম। আমাদের অনেকের শরীর খারাপ ও অসুস্থ হয়ে পড়লেও আমরা ভয়ে কাউকে বলতে পারিনি। কারণ কিছু হলে হয়তোবা আমাদেরকে পরিবার থেকে বিছিন্ন করে দেবে। অন্য জায়গায় নিয়ে যাবে এসব ভেবেই আমাদের দিন চলেছে।’
![](https://barciknews.com/wp-content/uploads/2021/08/pic-1-2-1.jpg)
অন্য অংশগ্রহণকারীরা জানান, ‘করোনাকালে প্রবীণদের নানান সমস্যার মধ্যে দিন অতিবাহিত করেন। এই সময় সব কিছু বন্ধ থাকায় মানুষের আয় রোজগার বন্ধ হযে যায় অনেক মানুষের। তারা বলেন, ‘এ সময় আত্মীয়স্বজনের বাড়ি যেতে পারিনি, কারো জানাযায় অংশগ্রহণ করতে পারিনি, ধার দেনা বেড়ে যায়, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষের মূল্য বেশি, ঘরের বাইরে বের হওযা যাবে না, কারো বাড়ির কেউ অসুস্থ হলে সে বাড়িতে যাওয়া যাবেনা, পরিবারের লোক বাইরে থেকে আসলে তার ধারে কাছে যাওয়া যাবেনা। এছাড়াও বয়স্ক হওয়ায় পরিবারের শিশুদেরকে আমাদের ধারে কাছে আসেতে দিতো না। এরকম নানান সমস্যার মধ্যে ছিলাম আমরা। এখন হয়তোবা একটু স্বাভাবিক বলে মনে করি। আমাদের গ্রাম এলাকাতেই করোনার আক্রমণ কম।’
প্রবীণ ব্যক্তিরা বলেন, ‘দিনে দিনে আমরা নানান ধরনের সমস্যায় পড়ছি। পরিবারে ও সমাজে আমরা অবহেলিত। নিজের আপনজনের কথা তো আর কোথাও বলা যায় না। সবকিছু মুখ বন্ধ করে সহ্য করতে হয়। সন্তান ভালো মন্দ যায় হোক সে তো আমাদের সন্তান। আমরা সবসময় তাদের ভালো চাই। করোনাকালীন সময়ে আমরা নানান সমস্যায় ভুগছি যেমন শারীরিক অসুস্থতা, খাদ্য ঘাটতি, বিনোদনের সমস্যা, সুরক্ষা সামগ্রী অভাব ইত্যাদি। এ জন্য সরকারি-বেসরকারিভাবে আমাদের সহায়তা করা খুবই জরুরি।’
সভায় প্রবীণরা এলাকার উন্নয়নের জন্য কিছু দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলোর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলো: পরিবারভিত্তিক খাদ্য সহায়তা প্রদান, ওযার্ড ভিত্তিক টিকা প্রদান, সবার টিকা নিশ্চিৎ করা, ভাতার পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়া, ৬০ বছর বয়সের প্রত্যেকের ভাতা ব্যবস্থা করা, কৃষিতে ভর্তূকির জন্য সার বীজের ব্যবস্থা করা ইত্যাদি।