সাম্প্রতিক পোস্ট

প্রাকৃতিক সম্পদে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রবেশাধিকারে প্রয়োজন সুশাসন 

রাজশাহী থেকে মো. শহিদুল ইসলাম

প্রাকৃতিক সম্পদে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রবেশাধিকারে প্রয়োজন সুশাসন। সুমাসন না থাকলে পরিবেশ-প্রতিবেশ ও কৃষিপ্রাণবৈচিত্র্যও হুমকির মধ্যে পড়ে। বরেন্দ্র অঞ্চলের নদী নাখা খাল-খাড়ি বিল, পুকুর ও প্রাকৃতিক জলাধারসহ, উঁচু নীচু মাঠ, প্রাকৃতিক বনসহ যেসকল প্রাকৃতিক সম্পদ আছে তা দিনে দিনে স্থানীয় জনগোষ্টীর প্রবেশাধিকার কমে যাচ্ছে। দেশের প্রচলিত ও বিদ্যমান আইন নীতিমালার কারণেও এসকল সম্পদে প্রান্তিক জনগোষ্টী সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

গত ১২ ডিসেম্বর রাজশাহীর তানোর উপজেলা অডিটোরিয়ামে উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক ও সবুজ সংহতি’র উদ্যোগে অনুষ্ঠিত কৃষিপ্রতিবেশবিদ্যা, জলবায়ু ন্যায্যতা ও খাদ্য সার্বভৌমত্ব উন্নতিকরণে- “প্রাকৃতিক সম্পদে প্রান্তিক জনগোষ্টীর প্রবেশাধিকারে প্রয়োজন সুশাসন শীর্ষক জনসংলাপ”-এ বক্তারা এ কথা বলেন।

সংলাপে বরেন্দ্র অঞ্চলের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত আদিবাসী, কৃষক, কৃষাণী ও নানা পেশাজীবীর প্রায় ৪৫ জন মানুষ অংশগ্রহণ করেন। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন তানোর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: খায়রুল ইসলাম, বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন সহাকারী কমিশনার (ভূমি) মাশতুরা আমিনা, উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো: শাহাদাত হোসেন। অংশগ্রহণকারীগণ বরেন্দ্র অঞ্চলের প্রধান সমস্যা পানির অধিকার প্রতিষ্ঠায় প্রাকৃতিক জলাধারে তাদের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার দাবি জানান।

প্রধান অতিথি তানোর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: খায়রুল ইসলাম বলেন, প্রাকৃতিক সম্পদে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় স্থানীয় জনগোষ্ঠীর ঐক্য এবং সহযোগীতা দরকার আছে। তিনি আরো বলেন- সমস্যাগুলো আমরা আন্তরিক হলে সমাধান করা সম্ভব।  বিশেষ অতিথি সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাশতুরা আমিনা বলেন, গ্রামভিত্তিক সমবায় সমিতি করে নিজের এলাকার পুকুর দিঘিগুলো ব্যবহারের জন্য আবেদন করতে পারেন, যাতে ব্যবহার করতে পারেন। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো: শাহাদাত হোসেন বলেন, কৃষিতে রাসায়নিক কীটনাশকের বেশি ব্যবহারের ফলে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে, খাদ্যের মান কমে যাচ্ছে, তাই তিনি পরিবেশবান্ধব কৃষির প্রতি জোর দিতে বলেন। 

ভুক্তভোগী তানোর উপজেলার জগদিসপুর গ্রামের শান্তিনা হাসদা বলেন, যুগ যুগ ধরে আমরা গ্রামের ভিতরের পুকুরের পানি ব্যবহার করি, মাছ আহরণ করি, কোন সমস্যা হতো না, এখন পুকুর লিজের কথা বলে লিজকারীরা আর পুকুরে নামতে দেয়না, পানি ব্যবহার করতে বাধা দেয়।” তিনি আরো বলেন, আমাদের জলের অধিকার এভাবে লিজের কারণে নষ্ট হচ্ছে। তানোরর মাহালী পাড়ার চিচিলিয়া হেমব্রম বলেন, আমাদের এখানে পানির সমস্যা, একসময় পুকুরগুলো থেকে জল ব্যবহার করতাম, কিন্তু এখন পুকুরগুলোতে মাছ চাষ করার নামে পঁচা গোবর, ভূড়ি, মুরগীর বিষ্ঠা দেবার কারনে জল ব্যবহার করতে পারিনা। তানোর উপজেলার সবুজ সংহতির সদস্য কৃষক মো: আলমাস বলেন, বিলকুমারী বিল দখল হচ্ছে, শিবনদী দখল দূষণ এবং ভরাটের কারণে পানি থাকেনা। শুকনো মৌসুমে একসময় একান থেকে কৃষকগণ পানি তুলে চাষবাদ করতো, এখন আর করা যায় না। তিনি বিলকুমারী বিল এবং শিবনদী খননের দাবি জানান। 

স্বশিক্ষিত কৃষক বিজ্ঞানী নুর মোহাম্মদ বলেন, কৃষিতে যেভাবে রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার হচ্ছে, এতে করে আমদের প্রাকৃতিক জলজ সম্পদ এবং জীববৈচিত্র্য বিনষ্ট হচ্ছে। কৃষিতে রাসায়নিক কীটনশাকের ব্যবহার কমাতে হবে। সাহিত্যিক ও লেখক মঈন শেখ বলেন, পরিবেশের সাথে আমাদের সাংস্কৃতির সম্পর্ক, তানোরসহ বরেন্দ্র অঞ্চল একসময় বৈচিত্র্য আর ঐতিহ্যে ভরপুর ছিলো, কিন্তু দিনে দিনে সেগুলো ধ্বংস হচ্ছে। 

তানোর উপজেলার যুবক মো: রুবেল হোসেন বলেন, আমাদের দেশি জাতের শস্য ফনসলগুলোও আমাদের অন্যতম সম্পদ, কিন্তু দিনে দিনে সেগুলো কমে যাচ্ছে। অন্যদিকে পুকুর ও জলাধার লিজের কারণে প্রভাবশালীরা লিজ নেয়, আবার গায়ের জোরে পুকুরগুলো দখল নেবার কারণে প্রান্তিক মানুষ অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।  

সংলাপের সঞ্চালক হিসেবে শুরুতে বারসিকের গবেষক ও আঞ্চলিক সমন্বয়কারী মো: শহিদুল ইসলাম কৃষিপ্রতিবেশবিদ্যা, জলবায়ু ন্যায্যতা ও খাদ্য সার্বভৌমত্ব উন্নতিকরণে- প্রাকৃতিক সম্পদে প্রান্তিক জনগোষ্টীর প্রবেশাধিকার বিষয়ক মাঠ পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় পরিবেশ প্রতিবেশ সুরক্ষা করা সম্ভব। একইসাথে নিয়ম নীতিমালা ও আইন কাঠামোগুলোর সঠিক প্রয়োগ করা স্থানীয় প্রশাসনের দায়িত্ব।  

ছবি সংযুক্ত করা হলো।

happy wheels 2

Comments